প্রেম কণিকা (দ্বিতীয় পর্ব)
তোমার হাতে আমার হাত,
জ্যোৎস্না-ধোয়া চাঁদনি রাত;
উঠুক ফুটে যুগল ঠোঁটে,
‘সকল দ্বিধা যাক নিপাত’।
#
তোমায় আমি চিনি ওগো,তোমায় আমি চিনি,
রূপের হাটে তুমিই করো প্রেমের বিকি-কিনি।
দেখা হোক বা না-ই হোক,
তবু যদি পথ চেয়ে জাগে কারো চোখ;
ভাবতেই মনে জাগে সুখ।
#
ঘর ছেড়ে যে হয়েছে পর;
তাকে নিয়ে তবু বাঁধি ঘর।
কাছে পাওয়া না-পাওয়ায় কী-বা আসে যায়!
হৃদয়ের আশালতা কভু কি শুকায়?
অপেক্ষার আক্ষেপে না হয়ে কাতর,
সুখের স্বপ্নে থাকি নিত্য বিভোর।
#
তুমি হবে শিরি আর আমি ফরহাদ,
আমাদের প্রেম হবে জগতে প্রবাদ।
যুগে যুগে প্রেমিকেরা প্রেমের সুধায়
মুছে দেবে আমাদের মিছে অপবাদ।
আমি হবো রাধা আর তুমি হবে শ্যাম,
নির্মল লীলা হবে আমাদের প্রেম।
আমরা দুজনে হবো প্রেমের অবতার,
এই স্বর্গীয় প্রেমে রবে না তো খাঁদ;
আমাদের প্রেম হবে জগতে প্রবাদ।
#
তুমি যার নাম দিলে প্রেম; আমি তার সবই হারালেম,
তুমি যার নাম দিলে জ্বালা; আমি তাতে সবই পোড়ালেম।
তুমি যার নাম দিলে আশা; আমি তাতে দেখি আলেয়া,
তুমি যারে বলো ভালোবাসা; আমি তার চিতা জ্বালালেম;
তবু জানি কোন ঘোরে হায়,রিক্ত এ হাত বাড়ালেম,
তুমি যার নাম দিলে প্রেম; আমি তার সবই হারালেম।
#
তোমার চুলে খোঁপার কাঁটা; আমার হাতে ফুল, সে ফুল কেবল হাতড়ে বেড়ায় তোমার খোঁপার চুল।
খোঁপায় তো নেই খোঁপার কাঁটা, খোঁপা পড়ে লুটে,
খোঁপার কাঁটার তীক্ষ্ম ঘা-যে আমার বুকে ফোটে।
কাঁটায় যে আর রয় না আঁটা খোঁপার বাঁধনখানা,
গোলাপ কাঁটায় বিদ্ধ করি তোমায় ষোলআনা।
খোঁপার কাঁটা, গোলাপ কাটা; সব কাঁটাই হানে,
কোন্ কাঁটা যে তীক্ষ্ম বেশি; প্রেম সে খবর জানে।
খোঁপায় যতোই ফুটবে কাঁটা ততোই পরিপাটি,
বুকে যতোই বিঁধবে কাঁটা প্রেম ততোই খাঁটি।
কাঁটা কেবল ফুটতে জানে, লুটতে জানে মন, প্রেম যেন নয় মন বিনিময়— কাঁটার আলিঙ্গন।
#
তুমি চাঁদের সাথে তুল্য হলে মূল্য-যে হয় হ্রাস, নদীর সাথে তুল্য হলে সাগর হয় নিরাশ।
তোমার যদি দি’ উপমা লাল গোলাপের সাথে,
হাস্নাহেনা অশ্রু ঝরায় অবহেলার ঘাতে।
লজ্জাবতি লতার সাথে দিলে তুলনা, কনকলতা বলে, ‘আমায় মূল্য দিলেনা।’
আমার চেতন সেই বিবাদের দেয় না কোনই মূল্য,
তুমিই কেবল তোমার নিজের অরূপ রূপের তুল্য।
#
তুমি ভুললেও আমি ভুলবো না মাধুরি-মাখা সেই ক্ষণ, যে-ক্ষণে দুজনে প্রেমালিঙ্গনে সঁপেছি এ-দেহমন।
যে-ক্ষণে যমুনা ঢেউয়ের দোলনা মত্ত দোলায় দুলিয়ে,
পৃথিবীর সব কল-কোলাহল দিয়েছি নিমিষে ভুলিয়ে।
জোছনা-ঝরা সে-ক্ষণে করেছি হৃদয় সমর্পন-
তুমি ভুললেও আমি ভুলবো না মাধুরি-মাখা সেই ক্ষণ।
#
যেই পৃথিবীতে তুমি নেই,
এমন পৃথিবী কভু ভাবা যায় না,
যে-জীবনে তুমি নেই, তুমি নেই
এমন জীবন নিয়ে বাঁচা যায় না।
#
ফুল দিলে ফুল মিলে, প্রেম মিলে না,
মালা দিলে মালা মিলে, মন মিলে না।
মন দিয়েও তো দেখলাম; বিনিময়ে মন মিলে না।
#
রূপের হাটে প্রেম করো না বেচাকেনা,
সে-হাটে হয়তো পাবে রূপ
তবে, প্রেম পাবে না।
#
কি চেয়েছি, কি পেয়েছি
সে হিসেব করি না তো আর,
তোমার ভালোবাসা যে পেয়েছে
তার আর কি আছে চাওয়ার?
#
তুমি যে সুরে সুরে বললে কথা সংগোপনে,
বুঝেছি প্রেম তখনি উঁকি দিলো মনের কোনে।
প্রেম আসে না ঢোল পিটিয়ে বাজার হাটে,
প্রেমতো আসে অজানিতে ভাবের ঘাটে।
#
তোমাকে বোঝাতে বোঝাতে
আহ্নিক-বার্ষিক গতির পালা যদি হয়ে আসে শেষ,
তোমাকে বুঝতে বুঝতে দমের রাজ্য থেকে
যমের জঠরে আমি হলে নিরুদ্দেশ;
তখন তোমাকে খুঁজে পাই যদি লোকোত্তরের কোনো সীমানায়,
তখনো তোমাকে বোঝাবো; ক্যামন করে মর্ত্যাতীত প্রেম পূর্ণ হয় কানায় কানায়।
#
তুমি বললে,ভালোবাসা চেয়ো না
চাও যদি মুঠো ভরে একরাশ কবিতা দিতে পারি।
হায়রে পাষাণি! বুঝলে না কেনো
প্রেমহীন কবিতা; চৈত্র-চিতারই আহাজারি!
প্রেমে আছে কবিতার সব আয়োজন,
প্রেম ছাড়া কবির আর কী বা প্রয়োজন?
প্রেম হতে কবিতার স্বত:উৎসারণ,
প্রেম ছাড়া কবিতার অকাল মরণ।
#
পাত্তারি গুটিয়ে প্রেম চলে যায় তেপান্তরের মাঠে,
দুর্ভাগা তবু প্রেম হাতড়ায় কাঁথা বালিশে ও খাটে।
এই প্রীতমের মন্দ কপাল; প্রেমের গজায় পাখা,
হৃদয়ের ফ্রেমে প্রেমকে এ প্রেমীর হয় না-যে বেঁধে রাখা।
#
কখনো জীবনে প্রেম হয়ে আসে অতোটাই স্বাভাবিক;
আরবি ঘোড়ার মতো পাড়ি দেয় দুর্গম মরু সাহারা,
অতলান্তিকে হয় নির্ভীক দুর্দান্ত নাবিক
সচকিত হয়ে বসায় চকিতে অতন্ত্র পাহারা।
#
প্রেমের জন্যে এতো যে আকুতি,হৃদয়ের হাহাকার,
কেউ কি এখনো লিখতে পেরেছে প্রেমের ইশতিহার?
প্রেমের আসল কোন সংজ্ঞাটা হয়েছে সর্বজনীন!
হৃদয়ের সব সিংহাসনে কি সে প্রেম হয়েছে আসীন?
সকলের কাছে গ্রহণীয় প্রেমের আছে কি কোনই শাস্ত্র?
প্রেম জয় করার গোলা-বারুদের রয়েছি কি ক্ষেপনাস্ত্র?
#
চুম্বনের চুম্বকের আকর্ষনে যেই প্রেম
টেনে নেয় কাছে,
আত্মার অস্তিত্বে নয়; সেই প্রেম
কামরসে বাঁচে।
#
এতোটা অবুঝ ভেবো না আমাকে
বুঝবো না তোমার মনের যা কথা,
আমার প্রেমের তরুতে তোমার
দুলছে প্রেমের স্বর্ণলতা।
সে লতা আমার জীবনের রস
চুষে নিয়ে বেঁচে রয়,
আমার শাখাকে জড়িয়েই তোমার
প্রেম-সুধা মধুময়।
#
নিন্দার কাঁটা আর প্রেমের পুলক,
একে দেয় অপরের কপালে তিলক।
#
রাগ-অনুরাগে,আদর-সোহাগে প্রেমকে যতোই লালন করি,
প্রেম ততোই হয়ে বেপরোয়া মনের উপর ঘোরায় ছড়ি।
#
আগুনকে বলেছি, তুমি জ্বলো,
মোমকে বলেছি, তুমি গলো:
আগুন নিজে না জ্বলে মোমকে জ্বালালো,
মোমও নিজের অঙ্গ আগুনে পোড়ালো।
এমন মর্মদহন প্রেমের কুলুঙ্গিতে নিত্য একাকার,
জ্বলেপুড়ে মোমের মতো দীপ্তি ছড়ায় প্রেমের অঙ্গার।