এমপির নির্দেশে বন্ধ নিয়োগ পরীক্ষা, প্রধান শিক্ষক অবরুদ্ধ

বরিশাল ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ মে ২০২৩, ২৩:৪৭

বরিশাল-২ আসনের (উজিরপুর-বানারীপাড়া) সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম তালুকদারের নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার অভিযোগে জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখে প্রার্থীরা।

সোমবার দুপুরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, উজিরপুরের রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচটি এবং বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি পদে নিয়োগ ছাড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ মার্চ এই নিয়োগের পরীক্ষা বরিশাল জিলা স্কুলে কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দিন ধার্য রাখা হয়। কিন্তু পরীক্ষা গ্রহণের দিন এমপি শাহে আলম তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হন। তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন।

একপর্যায়ে নিয়োগ নিয়ে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুখেন্দু শেখরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে শাহেআলম। সে কারণে নিয়োগ পরীক্ষা আর হয়নি। পরবর্তীতে সোমবার (১ মে) পুনরায় ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। এদিন এমপি শাহেআলম জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। সংসদ সদস্যর নির্দেশ পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করলে প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অবরূদ্ধ করে রাখে প্রার্থীরা।

বিনয় হালদার প্রার্থী বলেন, অফিস সহকারি পদে পরীক্ষার দেয়ার জন্য ভাই সকাল নয়টার মধ্যে বরিশাল জিলা স্কুলে এসে বসে রয়েছি। দুপুরে শুনি এমপি শাহেআলম পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছেন। এর আগেও একইভাবে এমপি একই পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়।

একইভাবে খালেদ সরদার, সুকান্ত চন্দ্রদাস সহ আরো একাধীক প্রার্থী বলেন, এমপি শাহেআলম নিয়োগ পরীক্ষা স্থগতি করেছে প্রধান শিক্ষক বললে প্রার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অবরূদ্ধ করে রাখে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর প্রধান শিক্ষক পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষার জন্য সময় ধার্য রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে তার কক্ষ থেকে সরে আসা হয়।

রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুখেন্দু শেখর বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে পাঁচটি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল।

গত ১৮ মার্চ পরীক্ষা গ্রহণের দিন এমপি শাহে আলম তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হন। তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নিয়োগ নিয়ে আমার সঙ্গে প্রকাশ্যে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে নিয়োগ পরীক্ষা আর হয়নি। ওই পরীক্ষা সোমবার পুনরায় বরিশঅল জিলা স্কুলে অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থাকে। কিন্তু এসে শুনি স্কুল প্রধান শিক্ষককে সংসদ সদস্য ফোন করে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করে এমপি শাহে আলম আমাদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তার কারণে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।’

এছাড়া সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে তার সংসদীয় আসনের দুই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগে অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ স্থগিত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন উজিরপুরের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের (ম্যানেজিং কমিটি) সভাপতি।

তারা বলেছেন, এমপি শাহে আলমের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি না দেওয়া হলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে উজিরপুর উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটির শীর্ষ পদে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরও এমপি শাহে আলম কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এই নিয়োগসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দলের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিন্তু এমপি শাহে আলমের প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়ে কেউ তার এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

হারতা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনিল বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে চারটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় এমপি শাহে আলম নিজে উপস্থিত ছিলেন। একটি পদে তার (এমপি শাহে আলম) পছন্দের প্রার্থী ছিলেন, সেই প্রার্থী পরীক্ষায় প্রথম হয়ে চাকরি পেয়েছেন। নিয়ম ছাড়াই এভাবে দীর্ঘদিন ধরে এমপি শাহে আলম নিজে নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত থাকছেন।’

একই ধরনের অভিযোগ করেন উপজেলার সকরাল আ. মজিদ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাকোঠা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম মৃধা। তিনি বলেন, ‘নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমপি শাহে আলম সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। শাহে আলম অযাচিতভাবে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হয়ে প্রশ্ন করেন। তার কারণে উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলায় শত শত নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা।’

উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন, বরিশাল জিলা স্কুলে সোমবার সকাল ১০টায় রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো। পরীক্ষা দিতে প্রাথর্রিা সবাই আসে। কিন্তু স্কুল প্রধান শিক্ষককে এমপি শাহেআলম ফোন করে পরীক্ষা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন বলে প্রধান শিক্ষক আমাদের জানান। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য না হয়েও নিয়োগ বোর্ডে এমপি শাহে আলমের হস্তক্ষেপ করতে পারে কিনা প্রশ্নের কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি শিক্ষা কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নরুল ইসলাম বলেন রোববার এমপি শাহেআরম মহোদয় আমাকে ফোন করে নিয়োগ পরীক্ষার না নেয়ার অনুরোধ করেন। সোমবারও তিনি আমাকে ফোন দিয়ে নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখার জন্য বলে । তার সন্মানে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, পরীক্ষা বন্ধ করায় প্রার্থীরা একটু ক্ষিপ্ত হয়ে গেছিল। পরে সেটা সমাধান হয়েছে।

সংসদ সদস্য শাহে আলম বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন, আমি জানতে পেরেছি ওই নিয়োগে কিছু সমস্যা রয়েছে তাই আমি জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পরীক্ষা স্থগিত রাখতে বলেছি।

(ঢাকাটাইমস/১মে/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :