জিবিএস নিয়ে পেরুতে জরুরি অবস্থা! এই রোগই প্রাণ কাড়ে নায়ক ফারুকের
পৃথিবীর আকাশে নতুন বিপদ। নাম গুলিয়ান ব্যারি সিনড্রোম, সংক্ষেপে জিবিএস। বিরল এই নিউরোলজিক্যাল রোগে ভুগেই গত ১৫ মে মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক।
সেই ভয়ংকর নার্ভের অসুখের বাড়বাড়ন্তের কারণে জরুরি অবস্থা জারি করেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু। আগামী তিন মাস ধরে দেশটিতে চলবে এই জরুরি অবস্থা।
মার্কো প্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, জুন ২০২৩ থেকে আজ পর্যন্ত পেরুর ১৮২ জন অধিবাসীর শরীরে ধরা পড়েছে জিবিএস। তাদের মধ্যে অবশ্য ১৪৭ জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। ৩১ জন এখনো হাসপাতালে ভর্তি। প্রাণ হারিয়েছেন চার জন।
সে কারণে অবস্থার গম্ভীরতা বুঝে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পেরু সরকার। এমনকি রোগটিকে বাগে আনার চেষ্টায় গোটা দেশে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।
তাই আর দেরি না করে এই নার্ভের অসুখ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা জরুরি। কারণ কখন যে এই বিপদ পেরুর গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে, তা কারও জানা নেই। তাই আগেভাগে সচেতন হন।
গুলিয়ান ব্যারি সিনড্রোম বা জিবিএসের সাতকাহন
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটি একটি নার্ভের অসুখ। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুল করে স্নায়ুর উপর আক্রমণ চালায়। এই কারণে প্রথমত হাত পা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঝিনঝিন করে। তারপর ধীরে ধীরে গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে রোগের প্রভাব।
এমনকি এই রোগের কারসাজিতে গোটা দেহ প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা বারবার করে এই অসুখ নিয়ে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
রোগের কারণ স্পষ্ট নয়
এই অসুখের নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো ইনফেকশন থেকে সেরে ওঠার ৬ সপ্তাহ বাদেই এই অসুখের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে হাজির হন।
অর্থাৎ বেশিরভাগ সময়ই এই অসুখের সঙ্গে ইনফেকশনের যোগ থাকে। বিশেষ করে, কোভিড ১৯ থেকে শুরু করে, ফুসফুস বা পেটের কোনো ইনফেকশনের জন্যই এই অসুখ পিছু নেয়। কিছু ক্ষেত্রে এই অসুখের পেছনে জিকা ভাইরাসের কারসাজি থাকে বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এই লক্ষণগুলো দেখলেই সাবধান হন
মেয়ো ক্লিনিকের মতে, কোনো ইনফেকশন থেকে সেরে ওঠার পর শরীরে এই লক্ষণগুলো দেখলেই সাবধান-
১. হাতের আঙুল, কবজি বা পায়ের পাতায় পিন ফোঁটার অনুভূতি হচ্ছে।
২. পায়ে দেখা দিচ্ছে দুর্বলতা।
৩. দুর্বলতা ধীরে ধীরে গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে।
৪. হাঁটতে বা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে সমস্যা হচ্ছে।
৫. কথা বলতে, কিছু চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হচ্ছে।
৬. সব জিনিস দুটি দেখছেন।
৭. সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা এবং রাতের বেলায় যন্ত্রণা বাড়ছে।
৮. হার্ট রেট বেড়ে গেছে।
৯. প্রস্রাব ও পায়খানা ধরে রাখা যাচ্ছে না।
১০. ব্লাড প্রেশার অনেকটা কমে গেছে বা বেড়ে গেছে।
১১. শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে ইত্যাদি।
চিকিৎসা কী?
এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। কেবল মাত্র সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্টের মাধ্যমেই এই অসুখের চিকিৎসা করা হয়। তাই লক্ষণ দেখা দেয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নেয়া দরকার। তাতেই বেঁচে যেতে পারে রোগীর প্রাণ।
(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/এজে)