রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হলুদ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২৩, ০৯:২৩

হাঁটতে গেলেই পায়ের আঙুলে ব্যথা, গোড়ালিতে ব্যথা কিংবা অস্থিসন্ধি ফুলে গিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা— এমন উপসর্গ মাঝেমধ্যেই কাবু করে অনেককে। কর্মব্যস্ত জীবন, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম যে সব অসুখকে আরও বড় আকারে ডেকে আনছে তার মধ্যে অন্যতম রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। এই রোগের কারণে যে কেবল গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা বাড়ে তা নয়, কিডনির সমস্যা ও ওবিসিটির মতো সমস্যাও শরীরে বাসা বাঁধে ইউরিক অ্যাসিডের হাত ধরে।

লাগামছাড়া জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, ডায়েটে প্রক্রিয়াজাত খাবারের আধিক্যের কারণে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে। রক্তে উচ্চমাত্রায় ইউরিক অ্যাসিড জমার এই সমস্যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ‘হাইপারইউরিসেমিয়া’। আর ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই গাঁটের ব্যথা অনিবার্য।

মূলত হাড় ও কিডনির উপরেই ইউরিক অ্যাসিড বেশি প্রভাব ফেলে। খাওয়া-দাওয়ায় একটু রাশ টানলেই এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। তবে ইউরিক অ্যাসিডের লক্ষণ সম্পর্কে অনেকেরই তেমন কোনও ধারণা নেই। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, কী করে বুঝবেন?

শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে বার বার প্রস্রাব পাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। কারণ কিডনি চায় শরীরে থাকা অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডকে বার করে দিতে। তবে প্রস্রাবের আধিক্য ছাড়াও শরীরে ইউরিক অ্যাসিডে মাত্রা বেড়ে গেলে প্রস্রাবের হঙ্গে হতে পারে রক্তপাতও। এ ছাড়া, হতে পারে ইউটিআই বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন।

ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়লে প্রস্রাবের সময় অনেকেরই জ্বালা করে। এই জ্বালা অনেক সময় এতটাই বেশি হয় যে মানুষটি প্রস্রাব করতেও ভয় পান। এর থেকে কিডনিতে পাথরও হতে পারে। এ ছাড়া প্রস্রাবে বিকট গন্ধও হতে পারে এই রোগের কারণে। তাই আপনার সঙ্গেও এমনটা ঘটলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে পিঠের নীচের দিকে, তলপেটে কিংবা কুঁচকিতে ব্যথা হতে পারে। তাই এমন উপসর্গ দেখলেও সতর্ক হন।

ইউরিক অ্যাসিড এক ধরনের রাসায়নিক যা খাবার হজম করবার সময় শরীরে উৎপন্ন হয়। ইউরিক অ্যাসিডে পিউরিন নামে এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা কিছু কিছু খাবারের মধ্যে পাওয়া যায়। ইউরিক অ্যাসিড রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে কিডনিতে পরিশ্রুত হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। কিন্তু মাঝে মধ্যে শরীর এতটা বেশি পরিমাণের ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন করে ফেলে যে তা ঠিক মতো পরিশ্রুত হতে পারে না। পারিবারিক রোগভোগের ইতিহাস, কর্মঠ না হওয়া এবং প্রচুর পরিমাণ আমিষ খাওয়ার ফলে শরীরে অত্যধিক ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিডের জন্য গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা বাড়ছে? হলুদের গুণেই কী ভাবে হবে মুশকিল আসান?

হলুদ রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ব্যথার ওষুধ খেলে শরীরে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই ওষুধের পরিবর্তে রোজ হলুদ বেশি মাত্রায় খেয়ে দেখতে পারেন।

গাঁটের যন্ত্রণা কমাতে কীভাবে হলুদ ব্যবহার করবেন?

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে হলুদ রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। হলুদে কারমিউমিন নামে একটি বিশেষ যৌগ থাকে যার প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে। রোজের ডায়েটে তাই হলুদ রাখলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ব্যথার ওষুধ খেলে শরীরে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাই ওষুধের পরিবর্তে রোজ কাঁচা হলুদ কিংবা হলুদ গুঁড়ো বেশি মাত্রায় খেয়ে দেখতে পারেন।

হলুদ যেভাবে খেলে উপকার পাবেন

হলুদ চা: চার কাপ জলে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। এ বার গ্যাস বন্ধ করে ওই মিশ্রণের মধ্যে আদার রস, লেবুর রস আর মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

দুধ হলুদ: দু’কাপ দুধ ভাল করে গরম করে নিয়ে তার সঙ্গে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন। স্বাদ বৃদ্ধি করতে একটু গোলমরিচ কিংবা কেশর মিশিয়ে নিতে পারেন।

কাঁচা হলুদ আর মধু: সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ আর মধু খেলেও উপকার পেতে পারেন। খেতে সুস্বাদু না হলেও এই খাবার কিন্তু বেশ স্বাস্থ্যকর।

ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে কফি, কোল্ড ড্রিংকস, মদ খাওয়া চলবে না। করা যাবে না ধূমপানও। পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়ো, ঢ্যাঁরস, টমেটোর মতো সব্জি না খাওয়াই ভাল। পাশাপাশি, অতিরিক্ত প্রোটিন যেমন— খাসির মাংস, সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলুন। বিভিন্ন রকম ডাল খাওয়াও ইউরিক অ্যাসিডের রোগীদের জন্য ভাল নয়। লেবু, মোসাম্বি, কমলালেবুর মতো টকজাতীয় ফল, চেরি, কাজু, মাখানা রোজের ডায়েটে রাখলে এই রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।

(ঢাকাটাইমস/২২ জুলাই/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :