হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ভেষজ ঔষধি কাসাভা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৩ | প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২১

আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় পঞ্চাশ কোটি মানুষের খাবার কাসাভা। অনেক দেশের প্রধান খাদ্যও কাসাভা। সর্বপ্রথম মায়া সভ্যতার লোকজন কাসাভা চাষের সূচনা করেছিল। দক্ষিণ আমেরিকায় কাসাভার চাষ শুরু হয়। পরবর্তীতে পর্তুগিজদের হাত ধরে ভারতে আসে কাসাভা। উনিশ শতকের শেষের দিকে খ্রিস্টান মিশনারীদের হাত ধরে বাংলায় আসে কাসাভা উদ্ভিদটি।

কাসাভা নামটি বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত না হলেও দিন দিন এর পরিচিতি বাড়ছে। এই ফসলটি স্থানীয়ভাবে শিমুল আলু, কাঠ আলু, ঠেংগা আলু ইত্যাদি নামে পরিচিত। কাসাভা বা শিমুল আলুর বৈজ্ঞানিক নাম ম্যানিহট এসকুলেন্টা। একটা সময় বাণিজ্যিকভাবে খুব বেশি চাষাবাদ ছিল না কাসাভার। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় স্বল্প পরিসরে কাসাভার আবাদ করা হত। কিন্তু বর্তমান সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে কাসাভার বাণিজ্যিক আবাদ শুরু করা হয়েছে। কুমিল্লা, পঞ্চগড়, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ পাহাড়ি এলাকায় চাষ হচ্ছে কাসাভা।

বাংলাদেশে কাসাভার কয়েক ধরনের জাত চাষ করা হয়৷ তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় ফিলিপাইন থেকে আসা দুইটি জাত। সাধারণত আবাদের এক বছর পরেই ফলন পাওয়া যায়। মাত্র ৮/১০ বছর আগে দেশে কাসাভা চাষ শুরু হলেও দিন দিন ব্যপক জনপ্রিয় হচ্ছে এটি৷ বর্তমানে দেশে ০.০৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে ০.৪৬ লক্ষ টন কাসাভা উৎপাদন হয়। যা দেশীয় চাহিদার মাত্র ২ শতাংশ। এক সময়ে অবহেলায় চাষ হওয়া ফসলটি বর্তমান বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল।

কাসাভা আটার পুষ্টিগুণ গমের আটার চেয়ে অনেক বেশি। কাসাভাকে প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে আটা/ স্টার্চ পাওয়া যায়। এই আটা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরী যায়। তাছাড়া এর থেকে তৈরি স্টার্চ ক্যামিকেল এবং গার্মেন্টসে কাপড় তৈরি সহ নানা শিল্পে ব্যবহার করা হয়। গার্মেন্টস শিল্পে কাপড়ে মাড় দিতে মূলত কাসাভার স্টার্চ ব্যবহৃত হয়।

কাসাভার খাদ্যমানের মধ্যে প্রোটিন আছে ১০ শতাংশেরও বেশি। অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কার্বোহাইড্রেট আছে যথাক্রমে ১০ ও ৩০ শতাংশ। আরো আছে ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভা আলুতে রয়েছে ৩৭ গ্রাম শর্করা, ১.২ গ্রাম আমিষ, ০.৩ গ্রাম চর্বি, ৩৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম আয়রন, ০.০৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ, ৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১৪৬ ক্যালরি খাদ্যশক্তি।

কাসাভা থেকে প্রাপ্ত স্টার্চ কাগজ শিল্পে, বেকারী শিল্পে, ঔষধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে, জুস, জ্যাম-জেলি, গ্লুকোজ, অ্যালকোহল, আটা, গাম, তৈরীতে ব্যপকভাবে ব্যবহার হয়। এর স্টার্চ/আটা গমের আটার সংগে মিশিয়ে রুটি, পরাটা, কেক ইত্যাদি তৈরী করা যায়।সেই সাথে বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাঁপড়, চিপসসহ নানাবিধ খাদ্য তৈরিতে এর ব্যবহার রয়েছে।

এছাড়াও কাসাভার মূল বা আলুর পিলেট, আটা মুরগি, গরু, মহিষ, ছাগল, মাছ, ইত্যাদির জন্য একটি বিকল্প খাদ্য হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত পাতা ও বাকি অংশ জৈব সার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কাসাভা সরাসরি রান্না করেও খাওয়া হয়। অন্যান্য সবজি বা শুটকি, মাংসের সাথে একে রান্না করা যায়। কেউ কেউ এর টিউবার মিষ্টি আলুর মত পুড়িয়ে খান।

কাসাভা আলুকে প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে আটা ও স্টার্চ পাওয়া যায়। এই আটা দিয়ে রুটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবার পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি আলু থেকে আটা ও স্টার্চ মিলিয়ে প্রায় ৩৪০ গ্রাম পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। এক হেক্টর জমি থেকে বছরে প্রায় ২৫.৫ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৩ হাজার ৪০০ কেজি কাসাভা আটা ও স্টার্চ পাওয়া সম্ভব।

কাসাভা থেকে কেবল খাবারই তৈরি হয় না। এ থেকে তৈরি স্টার্চ ব্যবহৃত হয় শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে। কাসাভা স্টার্চ বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা স্টার্চের যথার্থ বিকল্প। কাসাভা স্টার্চ টেক্সটাইল, ওষুধ ও রসায়ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সিমেন্টের গুণগত মানোন্নয়ন, কাগজ, আঠা, প্রসাধন, রাবার ও সাবান শিল্পে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে স্টার্চ, মল্টোজ, লিকুইড, গ্লুকোজসহ অন্যান্য রূপান্তরিত চিনি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এমনকী সমরাস্ত্র কারখানায় বুলেট ডিটোনেশন কাজে ব্যবহৃত মোমবিহীন চাঁচ হিসেবে কাসাভার স্টার্চও ব্যবহার করা যায়।

কাসাভার স্টার্চ ওষুধ তৈরির কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর থেকে পাওয়া স্টার্চ বেশ উন্নত মানের। দামে কম হওয়ায় বিপুল পরিমাণে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। কাসাভার স্টার্চ ট্যাবলেট, ক্যাপসুল এবং পাওডার জাতীয় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। ট্যাবলেটের নির্দিষ্ট আকার দিতে, এর বিভিন্ন উপাদান গুলোকে এক সাথে মিশ্রিত করতে এই স্টার্চ ব্যবহৃত হয়।

সব পুষ্টিগুণ মিলে সেলুলোজের সঙ্গে পাওয়া যাবে মিনারেল ও ফাইবার গ্লুটামিন। এর আঠালো অংশ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ উপশমের ক্ষেত্রে কাজ করে। কাসাভা ফাইবার বাড়তি কোলেস্টরলের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করে। এমনকি এটি ক্যানসার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। জেনে নিন কাসাভার ঔষধি গুণ এবং পুষ্টিগুণ-

কাসাভার নানা রকম ঔষধি গুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হজমে সহায়তা করে, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ শূণ্য। কাসাভা সব ধরনের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়৷ এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বিদ্যমান যা হার্টকে ভালো রাখে৷ সেই সাথে হার্ট এট্যাক, স্ট্রোক সহ নানা রকম রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কারণ কাসাভায় থাকা ফাইবার এলডিএলের মত খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।

কাসাভা দেহের টিস্যু মেরামত ও রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে লাইসিন, আইসোলিউসিন, ভ্যালিন এর মত প্রোটিন। নিয়মিত কাসাভা গ্রহণ আমাদের দেহের টিস্যু গুলোকে সুস্থ রাখে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামতেও অবদান রাখে।

কাসাভায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা শরীরের হাড় ভালো রাখতে সহায়ক। সেই সাথে ভিটামিন কে এর উপস্থিতির কারণে অস্টিওপরোসিস, আলঝেইমার্সের মত রোগ প্রতিরোধে সক্ষম কাসাভা। নানা রকম সমীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত কাসাভা গ্রহণে প্রবীণ বয়সেও দেহের হাড় মজবুত থাকে।

কাসাভায় রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে হাইপারটেনশনের ঝুঁকি কমে।এছাড়া এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে৷ যারা ডায়াবেটিস রোগী বা ভবিষ্যতে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন তারা নিয়ম করে কাসাভা গ্রহণ করতে পারেন। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিভিন্ন ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি ক্যান্সার প্রতিরোধও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আলুর তুলনায় দ্বি গুনেরও বেশি পুষ্টি থাকে কাসাভায়৷ এর শর্করার প্রায় ৯০ শতাংশই উন্নত স্টার্চ হিসেবে থাকে।

(ঢাকাটাইমস/৭ সেপ্টেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :