সালথায় এনআইডির জন্য ৫ রোহিঙ্গার আবেদন! জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থাকার অভিযোগ

সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০০

ফরিদপুরের সালথায় অর্থের বিনিময় নির্বাচন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় পাঁচজন রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন নির্বাচন অফিসে। তাদের করা আবেদনে অভিভাবকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, বাংলাদেশীয় জন্মসনদ ও নাগরিকত্ব সনদ সংযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) আবেদনগুলো বাতিল করে দেন সালথার নির্বাচন কর্মকর্তা।

জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে দিলদারা বেগম (২৬), নূর মোস্তফা (২১), হাফিজুর রহমান (২৬), বুশরা বেগম (২৫) ও নূর বশার (২৩) নামে পাঁচজন রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। এসব রোহিঙ্গার বাবা হিসেবে সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়ীয়া গ্রামের খোরশেদ আলী, মনিরুল ইসলাম, খোকন মিয়া, কালা মিয়া ও আব্দুল মানিকের জাতীয় পরিচয়পত্র আবেদনের সংযুক্ত করা হয়।

তবে বাবা হিসেবে যাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে, তাদের হদিস খুজে পাওয়া যায়নি ফুলবাড়িয়া গ্রামে। এমনকি মা হিসেবে যাদের পরিচয়পত্র সংযুক্ত রয়েছে তাদের পরিচয়ও মেলেনি। ফুলবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা শাওন কাজী ও ব্যবসায়ী তপন কুমার সরকার জানান, ফুলবাড়িয়া গ্রমে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদনকারীদের বাবা হিসেবে দেওয়া খোরশেদ আলী, মনিরুল ইসলাম, খোকন মিয়া, কালা মিয়া, আব্দুল মানিক নামে কোন ব্যাক্তি নেই।

আবেদনের সময় তারা যে জন্ম সনদগুলি জমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলি সব কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করা। ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের স্বাক্ষর করা। এ ছাড়া তাদের নামে গত ১০ সেপ্টেম্বর বল্লভদী ইউনিয়ন থেকে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুজ্জামান শাহীন। জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনপত্রে সনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন বল্লভদী ইউপির আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তাপস কুমার হোড়।

অফিভযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের অর্থের চুক্তিতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন, ইউপি সদস্য তপন কুমার হোড় ও ফুলবাড়িয়া বাজারের করিম টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী করিম বাওয়ালীর সহায়তায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। যে অনুয়ায়ী সব কাগজপত্র জোগার করে আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ না করায় বিষয়টি গত মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জানাজানি হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই খবরটি সালথায় ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই পাঁচটি আবেদন বাতিল করে দেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ বলেন, আমার কাছে আবেদন আসার পর দেখি এদের জন্ম সনদ এক জায়গার এবং তারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে চান সালথার ফুলবাড়িয়া থেকে। এতে সন্দেহ হয়। তিনি আরও বলেন, তারা রোহিঙ্গা কিনা তা আমি বলতে পারবো না। তবে আমরা যে রকম সাবলীলভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলি তাদের কথা বলায় আরষ্টতা ছিল। তবে চেহারাগত আমূল কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনি । তারা যে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন তা যাচাই করে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই কাগজগুলি তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় তাদের গত ১০ সেপ্টেম্বর করা আবেদনগুলি গতকাল বুধবার বাতিল করা হয়। তবে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, অর্থ লেনদেন হলে তো এনআইডি করেই দিতাম।

আবেদনকারীদের মধ্যে একজন হলেন, দিলদারা বেগম। তার পিতার নাম খোরশেদ আলী। সালথার একটি ইউনিয়নের এক উদ্যোক্তার মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনুসন্ধান ওয়েবভ সাইড ঘেটে জানা গেছে, দিলদারা বেগমের জন্ম সনদ কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়ন থেকে করা। তবে সেখানে তার স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার রাইল্যা গ্রাম। কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শামসুজ্জামান চৌধুরী দাবি করে বলেন, গত ৭ এপ্রিল তার ইউনিয়ন থেকে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে কোনো জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়নি। এগুলো ভুয়া। তিনি বলেন, তার পক্ষে কোনো অন্যায় কাজ করা সম্ভব না।

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনের শনাক্তকারী বল্লভদী ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড় বলেন, ওইদিন (১০ সেপ্টেম্বর) আমি কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম। এই সময় করিম টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী করিম বাওয়ালী এসে আমার কাছ থেকে ওই পাঁচটি আবেদনের স্বাক্ষর নিয়ে যায়। আমি বুঝতে পারিনি সে (করিম) আমার সাথে প্রতারণা করবে। আমার সাথে রোহিঙ্গাদের কোন ধরনের অর্থ লেনদেন হয়নি।

তবে মুঠোফোন ও দোকান বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে করিম বাওয়ালীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয় বল্লভদী ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুর রহমান শাহিন বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করে ওই পাঁচজনের নামে নাগরিক সনদ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা প্রকাশের পর আমি ইউপি সদস্য তাপস কুমার হোড়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, করিম নামে এক ব্যক্তি ব্যস্ততার সুযোগে শনাক্তকারী হিসেবে তার স্বাক্ষর নেন। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তবে ওই নাগরিক সনদের স্বাক্ষর আমার না। এটি জাল স্বাক্ষর। অর্থের বিনিময় নাগরিক সনদ দেওয়ার কথাটি ভুয়া।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান বলেন, পাঁচ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। তবে প্রাথমিকভাবে সেটি ঠেকানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে, যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :