প্রেমিকাকে হত্যা: ‘মেহেদী দিয়ে হাতে লেখা' প্রেমিকের নাম দেখে অভিযুক্তকে ধরল র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:০১ | প্রকাশিত : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৫১

রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকার বংশাই নদীতে ভাসমান অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ উদ্ধারের পর প্রযুক্তির সহায়তায় মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছে র‍্যাব।

পাশাপাশি ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের পর হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা এনামুল সানাসহ জড়িত দুজনকে ব্যবহৃত আলামতসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

অভিযুক্তরা হলেন- এনামুল সানা ও সোহাগ রানা। এসময় উদ্ধার করা হয় নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে তাদের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে ঘটনার ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছে।

যেভাবে হত্যা: র‍্যাব জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে এনামুল ও রুবিনার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। রুবিনা বিয়ের কথা বললে এনামুল অস্বীকৃতি জানায় এবং রাগান্বিত হয়ে পড়লে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশচাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ গুমের উদ্দেশ্যে রুবিনার মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ‘গত ৯ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিক্রমপুর এলাকায় বংশাই নদীতে একটি অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ-পুলিশ ও র‌্যাবকে অবহিত করে। পরবর্তীতে র‌্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নদীতে ভাসমান অজ্ঞাত নারীর মৃতদেহটির নাম ও পরিচয় শনাক্ত করে। ভাসমান মৃতদেহটি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছের মেয়ে রুবিনা খাতুনের।’

তিনি বলেন, ‘নিহতের হাতে মেহেদী দেওয়া ছিল; যাতে একটি নামের অক্ষর ছিল। পরে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তা অভিযুক্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।’

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘পরবর্তীতে র‌্যাব নিহতের পরিবারের সদস্যদের সংবাদ দিলে তারা আশুলিয়া এসে এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে গত ১০ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার রাতে র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল আশুলিয়া থানার টেংগুরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ও প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে জানান, নিহত রুবিনা খাতুন নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। গত ৬ মাস আগে গ্রেপ্তার এনামুলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিহত রুবিনার পরিচয় হয় এবং এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। গ্রেপ্তার এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন এবং আগে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালান। এনামুল প্রায়ই রুবিনাকে অধিক বেতনে অন্যত্র চাকরি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘গত ৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় চলে যায়। এনামুল রুবিনা খাতুনকে সুযোগ বুঝে তার আশুলিয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার বাসায় রাখে। বাসায় অবস্থানকালীন সময় রুবিনা এনামুলকে বারবার বিয়ের কথা বললেও এনামুল বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় বিয়েসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া হয়। গত ৮ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে রুবিনা এনামুলকে পুনরায় বিয়ের কথা বলায় এনামুল বিয়েতে আবারও অস্বীকৃতি জানায় এবং প্রচুর রাগান্বিত হয়ে পড়লে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।’

একপর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশচাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল কীভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেবে সে বিষয়ে উপায় না দেখে তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু গ্রেপ্তার সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করে তার বাসায় আসতে বলে।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে সোহাগ রাত ৮টার দিকে এনামুলের বাসায় আসে এবং রুবিনার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক এনামুল ও সোহাগ রাত তিনটার দিকে সম্মিলিতভাবে রুবিনার মৃতদেহটি চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনে। এরপর রুবিনার মৃতদেহ এনামুলের মোটরসাইকেলের মাঝে বসিয়ে পেছনে সোহাগ লাশটি ধরে রাখে।’

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘এনামুল মোটরসাইকেল চালিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুমানিক ৫ কিলোমিটার দূরত্বে বংশাই নদীর ওপর রাঙ্গামাটজে পোঁছায় এবং পরিকল্পনা মোতাবেক রুবিনার মৃতদেহটি থেকে নদীতে ফেলে দেয়। পরে তারা নিজ নিজ বাসায় গিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন শুরু করে। তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মায়, যেহেতু তারা গোপনে লাশটি নদীতে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে এবং লাশটি খুঁজে পাওয়া গেলেও তার হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে পারবে না। সুতরাং তারা গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হবে।’

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তার এনামুল একাধিক নারীঘটিত বিষয়ে লিপ্ত ছিল। তার বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।’

গ্রেপ্তার সোহাগ গত ২ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি পেশায় একজন বাসের হেলপার। গ্রেপ্তার এনামুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় তার যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পাশে থাকতেন। ইতোপূর্বে ঢাকার ধামরাই থানায় মাদক মামলায় কারাভোগ করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১২ডিসেম্বর/এসএস/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

অবিবাহিত বলে চাকরি, স্ত্রীর অভিযোগে ফেঁসে গেলেন এএসপি ইমরান

জুতা রাখা নিয়ে দ্বন্দ্বে ব্যবসায়ী সাবেরকে খুন, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

মোসাদ্দেক আলী ফালুর বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দুদকের

চুরির মামলা তদন্তে নেমে একে একে মিলল ৫ অস্ত্র

শিল্পী পরিচয়ে ভয়ংকর মাদক কারবারে গায়ক রেবেল, কাজ করতেন ‘ভাইজানের’ হয়ে

২৮ অক্টোবর অছিম পরিবহনে ছাত্রদলনেতার আগুনে প্রাণ যায় নাঈমের, যেভাবে রহস্য উদঘাটন

কেরাণীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার 

সোনালী লাইফের বহিষ্কৃত সিইও মীর রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :