আওয়ামী লীগের ইশতেহার বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

সামিয়া রহমান প্রিমা, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৫ | প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২১

আগামী জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করেস্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থানস্লোগানে মঙ্গলবার নির্বাচনি ইশতেহার- ২০২৪ ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্মোপযোগী শিক্ষা কর্মসংস্থান, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা নিম্নআয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সামনে রেখে মোট ১১টি বিষয় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এই ইশতেহারে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইশতেহার বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শুধু নির্বাচনি ইশতেহারেই নয়, যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, দ্রব্যমূল্যের বাজারে চলমান অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হওয়ায় নিয়ে ইশতেহারের অঙ্গীকার অনিশ্চিত। আওয়ামী লীগের মতো বড় দলের কাছে চিকিৎসাসেবা নিয়ে বড় প্রতিশ্রুতির প্রত্যাশা ছিল। ব্যাংকিং খাতের সক্ষমতা বাড়াতে হলে দুর্বলতাগুলোকে স্বীকার করে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দর্শনকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে চলমান রাখার আহ্বান বিশ্লেষকদের।

আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার বিশ্লেষণ:

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ১১টি অঙ্গীকারের মধ্যে প্রথমটিই হলো, ‘সকলের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য রাখার প্রচেষ্টা তবে দলটির প্রধান এই লক্ষ্য পূরণ অনিশ্চিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. বেনজির আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিগত সময়গুলোতে স্পষ্ট হয়েছে দ্রব্যমূল্য ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি। বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই ব্যবসায়ী। এই অতিরিক্ত দামের সময়ে সংসদে নীতিমালা পাস হতে পারতো। সরকারি দলে আরও কার্যকরী আলোচনা হতে পারতো। অসাধু ব্যবসায়ীদের জবাবদিহিতা হতে পারতো। সেসব তো দেখিনি। এই বাস্তবতায় নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকা নিয়ে আর আশাবাদী হতে পারি না।

এই জনস্বাস্থ্যবিদ রোগ বিশেষজ্ঞ আরও জানান, নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের নিম্ন মধ্য আয়ের মানুষ সুষম খাবার নিশ্চিত করতে পারছে না। আমিষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে আসছে।

তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক . মশিউর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একসময় দেশে মঙ্গার মুখোমুখি হয়েছি। মঙ্গা দূর করার জায়গায় নীতি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। মানুষ না খেয়ে থাকতো, মারা যেত। সেখানে এখন খাবার সংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি ছিল না, তারা বাসস্থান পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সফলতা অন্তর্ভুক্তিমূলক এই অর্থনৈতিক কর্মসূচি।

নিম্নআয়ের মানুষের চিকিৎসাসেবা সুলভ করা হবে’- আওয়ামী লীগের এই অঙ্গীকার প্রসঙ্গে ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘নিম্নআয়ের মানুষের চিকিৎসাসেবা তো বিনামূল্যে করতে হবে। এখানে সুলভ মানে চিকিৎসা খাতের ব্যবসায়ীরা হয়তো কিছু কমাবেন। কিন্তু সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মান উন্নয়ন হয়নি। মাত্র ২০ ভাগ মানুষ চিকিৎসা নিতে যান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়- যেমন সিটি স্ক্যান, এমআরআইসহ সকল টেস্টের অনেক খরচ। সেজন্যও পুরোপুরি চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

কঠিন রোগ সারাতে দেশে মধ্যবিত্তরাও ফতুর হয়ে যান উল্লেখ করে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘অনেক বড় বড় সৎ কর্মকর্তাদের দেখেছি, জীবনের সঞ্চয় ভেঙে চিকিৎসা নেন। ভবিষ্যৎ জীবন পরিবারগুলো পরে নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যান। চিকিৎসাসেবা তো ছিল সাংবিধানিক অধিকার।

বিগত মেয়াদগুলোতে মেগা প্রকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতা আছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক . মশিউর রহমান।

এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘চিকিৎসা শিক্ষা সর্বজনীন করার কোনো বিকল্প নেই। আর মাত্র ভাগ মানুষ দুর্নীতিতে যুক্ত। সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে এদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা’- এই অঙ্গীকার প্রসঙ্গে অধ্যাপক . মশিউর রহমানের অভিমত, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের আওতায় স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ- এই চারটি স্তম্ভ বাস্তবায়ন করা গেলে আওয়ামী লীগ অর্ধশতক ইতিহাসে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্থায়ী জায়গা করে নিবে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ব্যাংকিং খাতকে প্রাধান্য দেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক . মোস্তাফিজুর রহমান।

দেশের ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছেসম্প্রতি সিপিডির এই গবেষণাকে আমলে নেয়নি সরকার। পাল্টা বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী এবং নেতৃবৃন্দ সিপিডির এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এই বাস্তবতা উল্লেখ করে সিপিডির এই বিশেষ ফেলো ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন লক্ষ্য করলাম এনিয়ে নানা সমালোচনা করা হলো, কোনো স্বীকৃতি তো দেখলাম না। এখন যদি ম্যানিফেস্টোতে থাকে এবং বাস্তবায়ন করা হয়, তবে অবশ্যই খুশি হব। দুর্বলতার জায়গাগুলোকে স্বীকার করে, পরিবর্তনের কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়েছে, ঋণখেলাপি বেড়েছে, নানামুখী বিশৃঙ্খলায় ব্যাংক খাত থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে ভূমিকা থাকার দরকার ছিল তা যদি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় তাহলে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়াতে হলে সুশাসন দরকার।

স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা বাড়ানো জরুরি জানিয়ে . মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যারা লুটপাটের জন্য দায়ী এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আর্থিক ব্যবস্থাপনার নতুন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলেই অনেক সংকট দূর করা সম্ভব।

বিশ্লেষকদের মতে, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা চিকিৎসাসহ দেশের সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত উন্নয়ন করা সম্ভব।

এর আগে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেদিনবদলের সনদঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সবশেষ ২০১৮ সালেসমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশস্লোগানে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের কাতারে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা রয়েছে। এমনকি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

(ঢাকাটাইমস/২৮ডিসেম্বর/এসআরপি/আরআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :