মিয়ানমার সংকট নিয়ে বিএনপি'র প্রতিক্রিয়া, না কি মিথ্যাচার?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
| আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১২ | প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০০

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সেই দেশের বিভিন্ন জাতীগোষ্ঠী দীর্ঘদিন থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ করে আসছে। ২০২১ সাল থেকে এই যুদ্ধ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার পর বেগবান হতে শুরু করে। এর মধ্যে তিনটি আন্দোলনরত শক্তির মধ্যে ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠার পর জান্তা বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে জান্তারা নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেছে ইদানীং। এর মধ্যে যুদ্ধরত কতিপয় সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজেদের অবস্থান সংহত করে ফেলেছে। এই অবস্থায় সম্প্রতি আরাকান অঞ্চলের বিদ্রোহী বাহিনী সামরিক জান্তার সরকারি বাহিনীকে তাদের অবস্থান থেকে অনেকটাই হটিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি, মর্টারশেল এবং রকেট নিক্ষেপের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সাড়ে তিন শতাধিক সদস্য প্রাণ বাচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে এরই মধ্যে।

আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী মিয়ানমারের বিজিপির সদস্যদের প্রথমে নিরস্ত্রকরণ করেছে এবং এরপর আশ্রয় প্রদান করেছে। গত ৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হওয়ায় বাংলাদেশ ভূখণ্ডেও বেশকিছু গুলি, মর্টার এবং রকেট উড়ে এসে পড়ে। এতে সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতরে যারা বসবাস করেন তাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের একজন নারী এবং একজন রোহিঙ্গা শ্রমিক মিয়ানমার থেকে উড়ে আসা মর্টারশেল-এর আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া কয়েকদিন এই পারস্পরিক গোলাগোলিতে আরো কয়েকজন মানুষ আহতও হন। আরাকান বাহিনী এবং মিয়ানমার বাহিনীর মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও যুদ্ধে শুধু বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নয় ভারতের ভূখণ্ডেও চরম নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ এরই মধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদুতকে ডেকে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের মৃত্যুসহ মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা অঞ্চলে যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং অবিলম্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমার থেকে কোনো উত্তেজনা যেন বাংলাদেশে প্রবেশ না করতে পারে সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছে। একইসঙ্গে যেসব বিজিপি এবং সরকারি বাহিনীর সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানায়।

বাংলাদেশ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান উত্তেজনাকর অবস্থায় বিজিবি, সেনাবাহিনী, র‍্যাব ,পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্যকে নিরাপত্তা বিধানের জন্য নিয়োগ করে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে আর যেন কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারেও কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকারপ্রধান থেকেও অত্যন্ত সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সবাইকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল বাহিনীকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ কোনো অবস্থাতেই প্রতিবেশী কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে যেমন চায় না, একইসঙ্গে কোনো যুদ্ধে জড়ানোর মতো কোনো উস্কানি দেবেও না- তবে কেউ তা দেওয়ার চেষ্টা করলে বসেও থাকবে না বলে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রায় একই অবস্থানের কথা প্রতিধ্বনিত করেছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভারত সফরকালে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নীতিনির্ধারকদের সাথে বৈঠকে চলমান মিয়ানমারের উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়া ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রশ্নে ভারত এবং বাংলাদেশ অভিন্ন স্বার্থে এক সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে মতৈক্য পৌছাতে পেরেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ফলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এখন সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে তা একান্তই সেই দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে বাংলাদেশসহ সকলেই মনে করে।

বাংলাদেশ কোনো অবস্থাতেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো পক্ষ অবলম্বন না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার যে অবস্থান নিয়েছে তা কূটনীতি এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহাবস্থানের উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত বলে সকল মহলই মনে করে।

কিন্তু বিএনপি মিয়ানমারের সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা এবং প্রচারের মহড়াতে যেন আঁটসাঁটভাবে নেমেছে। তারা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংগঠিত গোলাগুলি ও সংঘর্ষে যেসব অস্ত্রশস্ত্র বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়েছে এবং তাতে যে মৃত্যু এবং আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন নেতা যার যার মতো করে সেখানকার পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন- 'মিয়ানমারের মতো দেশ আমাদের দেশে গুলি করে হতাহত করে। এসব কীসের আলামত?

চীনের সঙ্গে এত বন্ধুত্ব, মিয়ানমার চীনের লালিত দেশ। সেই দেশ থেকে গুলি আসে- এটা নতুন কোনো খেলা কি না জানি না, আমি বুঝতেছি না। আজকে রাখাইন থেকে সৈনিক পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, এটা কীসের লক্ষণ? আপনারা কি যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলবেন? আবার কি বলবেন দেশ বাঁচাতে হবে? আর আপনার কাজ আপনি করবেন?’

তিনি আরো বলেছেন যে- পশ্চিমে ভারত এবং পূবদিকে মিয়ানমারের গুলির ফলে বাংলাদেশ নাকি ক্রসফায়ারে পড়েছে। বিএনপির নেত্রীবৃন্দ মিয়ানমার ইস্যুতে আরো অনেক মন্তব্য করেছেন। মিয়ানমার ইস্যুতে সরকার দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতারা বলেছেন- যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলছেন তারা। সীমান্তে হত্যার বিষয়ে সরকারের কোনো প্রতিবাদ নেই বলেও অভিযোগ দলটির নেতাদের। দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেগে উঠতেও আহ্বান জানান তারা। নির্বাচন ইস্যু ছাপিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে নতুন করে যোগ হয়েছে মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা ও গোলাগুলির ঘটনা। তারা বলছেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে এ ঘটনার কোনো প্রতিবাদ করছে না সরকার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন- 'লোভী ও কলঙ্কিত জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আজ আমাদের সীমান্ত বাহিনী রক্তাক্ত হচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করার ভাষা পাচ্ছি না।' মানববন্ধনে প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন- 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কখনো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে না। তারা ক্ষমতায় থাকলে মানুষ কখনোই নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে না। রাখাইন থেকে সেনারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এটা কীসের লক্ষণ?আবার কি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলবেন?'

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনকারী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই ইস্যুতে এখন প্রতিদিন মাঠ কাঁপাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন। জাতীয় প্রেসক্লাব কিংবা আশপাশের সড়কে মিছিল অথবা সেমিনারে মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে তারা যা বলেন তাতে সে দেশের সঙ্গে সরকারের যুদ্ধে জড়িয়ে উত্তর দেওয়াটি বোধহয় তাদেরকে খুশি করতে পারে। এলডিপি প্রধান কর্নেল অলি আহমেদ বলেছেন- 'এখনো সময় আছে।

মিয়ানমারের মতো দেশ বাংলাদেশে গুলি, বোমা ছুড়ছে, আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে, সীমান্তে মানুষ মারা যাচ্ছে।' তিনি আরও বলেন- 'আমাদের মন্ত্রী-বাহাদুররা শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। বাংলাদেশকে রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখনো সীমান্তে সেনা মোতায়েন হয়নি। অথচ আমরা

একটি স্বাধীন দেশ। সে স্বাধীনতা আমরা কীভাবে ভোগ করছি। মিয়ানমারের চেয়েও আমরা কি দুর্বল?'

সরকারের দুর্বলতার কারণে আমাদের এই অবস্থা বলেও মন্তব্য করেন অলি আহমেদ। প্রায় একই রকম উত্তেজনাকর বক্তব্য অন্যান্য যুগপৎ আন্দোলনকারী দল ও মঞ্চের নেতারাও প্রতিদিন করছেন, টেলিভিশন-এর টকশোতে এসে এবং এর দায় সরকারের ওপর চাপাচ্ছেন তারা। অথচ সহজেই অনুধাবন করা যায় যে- মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে এখনও যেহেতু যুদ্ধে জড়াচ্ছে না, তাহলে আমরা কেন মিয়ানমার-এর সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে যাবো। মিয়ানমারে যা-কিছু ঘটছে তা সে দেশের জান্তা সরকার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র আন্দোলনরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ-এর বিষয়। যেসব গোলাগুলি রকেট ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র একে অপরের প্রতি ছুড়ছে তার কিছু কিছু আমাদের সীমান্তঘেঁষা ভূখণ্ডে এসেও পড়ছে। এই অস্ত্র সরকারি বাহিনীর না কি বিরোধী বাহিনীর তার নিশ্চয়তা দেওয়া বা চিহ্নিত করা এই মুহূর্তে কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। একমাত্র সরকারি পক্ষের গোলাগুলির বিরুদ্ধে আমাদের সরকার প্রতিবাদ জানাতে পারে। কিন্তু মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থাটি এখন সেরকম নয়। বরং জান্তা সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তাদের বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অনেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার অনেকে ভারতেও পালিয়ে গেছেন। উদ্ভূত এই পরিস্থিতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনী চলমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলোর নেতাদের বক্তব্য স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ভাষ্য নয়, বড়োজোর এসবকে উস্কানিমূলক এবং মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত অথবা চরম সরকার বিরোধী অবস্থান থেকে এলোমেলো উত্তেজনাকর মন্তব্য ছুঁড়ে দেশের জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার কোনো হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। তবে দেশের মানুষ মিয়ানমারের অবস্থা সম্পর্কে যা জানে তার ফলে বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনওয়ালাদের চাইতে মনে হয় অনেক বেশিই স্পষ্ট ধারণা তাদের রয়েছে। সুতরাং, বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনকারীরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারকে অভিযুক্ত করে সারা দিনরাত মনের মাধুরী মিশিয়ে যা খুশি তা বলে মনের সান্ত্বনা পেতে পারেন কিন্তু মানুষকে খেপানো তো দূরের কথা বরং নিজেরা সাধারণ মানুষের কাছে হাসির পাত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। কিন্তু বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা বুঝতে পারছেন না যে, দেশের সাধারণ মানুষ তাদের চাইতে মিয়ানমারের সংকট বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি ধারণা এবং জ্ঞান রাখেন। সুতরাং বিএনপি ও সমমনাদের বক্তৃতা বিবৃতি এবং দেশ নিয়ে বড়ো বড়ো কথা ও উপদেশ মাঠে মারা যাওয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না। দেশের মানুষ বোকা নয়, তবে অতি চালাকদেরও তারা ভালোভাবেই চেনে। এখন বিএনপি এবং সমমনাদের ভেবে দেখা উচিত তাদের অতীতের মতো বর্তমান প্রচারণাও চরমভাবে ব্যর্থ হতে চলেছে কি না?

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: ইতিহাসবিদ, কলাম লেখক ও সাবেক অধ্যাপক বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :