সাগরে মাছ ধরা নৌকায় গণডাকাতির প্রস্তুতি, গোলাবারুদ-আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:১৩ | প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৫৫

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নৌকায় গণডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল একদল জলদস্যু। তারা ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদ নিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে ধরা পড়ে যায়। রবিবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত অভিযানে ৩০ জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে বাহিনীটি।

এসময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি ট্রলার, আটটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচটি কার্তুজসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

একই দিন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম।

চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা ও বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যু বাহিনী কিছু দিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পর সম্প্রতি তারা আবারও সাগরে জেলেদের ওপর অত্যাচার, জুলুম, চাঁদাবাজি এবং অপহরণ করছে। র‌্যাব এ তথ্যের পর গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। ১১ ফেব্রুয়ারি এবং ১২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের স্থল ও সাগর পথে দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালায়। এ সময় করিম, মো. রুবেল, মো. জফুর, শফি আলম, আ. রহিম, মো. শামীম, মো. ইউসুফ, শাজাহান, সাহাব উদ্দিন, মো. শওকত, মো. ইসমাইল, দেলোয়ার ইসলাম, নুর মোহাম্মদ, আব্দুর রহিম সিকদার, মফিজুর রহমান, ফজল হক, গিয়াস উদ্দিন, মো. কাছেদ, মো. আকিদ খান, দিদারুল ইসলাম, মো. নাইম, হারুন, মো. ইয়াছিন, খলিলুর রহমান, মো. ইকবাল হোসেন, মো. শাহেদ, মো. হোসেন, আলী হোসেন, আব্দুল মান্নান, মো. সোলায়মান নামে ৩০ জনকে আটক করে।

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা এক-দুই সপ্তাহ বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি করে বেড়াতেন। এই দস্যুদের গডফাদারদের কাজ হলো অস্ত্র-গুলি ও ট্রলারের জোগান দেওয়া। বিভিন্ন নৌ, লঞ্চ ও স্টিমার ঘাটে সোর্সের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাগরে অভিযানে যাচ্ছে কি না তা তদারকি করতেন। জলদস্যুরা উপকূলে আসার পর বোট মালিক এবং মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে ডাকাতির মালামাল বিক্রি করতেন। এছাড়া জলদস্যুরা সাগরে গিয়ে ডাকাতি করে মাছ এবং মালামাল বিক্রির শতকরা ৪০ শতাংশ কথিত গডফাদার, ২০ শতাংশ তেল খরচ এবং বাকি ৪০ শতাংশ ডাকাতি সঙ্গে সরাসরি জড়িত সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করতেন।

র‌্যাব-৭ এর এই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের তিনটি সশস্ত্র ডাকাত চক্র (ভোলা, বরিশাল, কুতুবদিয়া এবং আনোয়ারা এলাকায়) একত্রিত হয়ে সাগরে বড়ভাবে দস্যুতার পরিকল্পনা করছে। তাদের ১০-১২ দিনের মধ্যে প্রায় ১৫-২০টি ট্রলারে ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল। এই জলদস্যুরা ডাকাতি শেষে লুটপাট করা মাছ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দিকে নিয়ে বিক্রি করতো। পরবর্তী সময়ে লাভের টাকা আনোয়ারা-কুতুবদিয়া এলাকার জলদস্যুদের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দিতো। অভিযানের পরিকল্পনা অনুযায়ী র‌্যাব-৭ পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে গহিন সমুদ্রে তাদের গতিরোধের চেষ্টা করে। এসময় দস্যুরা র‌্যাবকে প্রতিহত করে এবং তাদের দিক পরিবর্তন করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নৌ-বন্দর এলাকার ১৫ নম্বর ঘাটের দিকে আসতে থাকে। র‌্যাব সদস্যরা তাদের দুটি ট্রলারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রলার থেকে অস্ত্র ও ডাকাতির মাছ এবং মালামালসহ ৩০ জনকে আটক করে। ডাকাত দলটি মূলত তিনটি পর্বে বিভক্ত হয়ে তাদের দস্যুতার কার্যক্রম পরিচালনা করত।

ডাকাতিতে শাহেদ-ইউসুফ মাঝির গ্রুপ:

গ্রেপ্তারকৃত শাহেদ মাঝি ছিলেন প্রথম গ্রুপের দলনেতা। তার বাড়ি কুতুবদিয়া এলাকায়। তার দলের কাজ ছিল ডাকাতি করার জন্য অস্ত্র, বোট, জাল এবং আনুষঙ্গিক যে সব সরঞ্জামাদি লাগত সেগুলো সরবরাহ করা। শাহেদ মাঝির দলে নয়জন ডাকাত সদস্য ছিল।

আর ইউসুফ মাঝি ছিলেন দ্বিতীয় গ্রুপের ডাকাত নেতা এবং ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী। প্রথমে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নির্বাচন করতেন। তার নির্দেশনার পর ডাকাতির জন্য তারা নির্দিষ্ট একটি জায়গায় একত্রিত হতেন। এরপর ডাকাতির স্থান নির্বাচন করে নিজে সশরীরে হাজির হয়ে ডাকাতির কার্যক্রম শেষ করতেন। এই দলে ১১ জন সদস্য কাজ করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, এই দলের সদস্যরা কয়েকটি সংঘবদ্ধ চিহ্নিত শীর্ষ জলদস্যু ও ডাকাত দলের হয়ে কাজ করেন। যারা বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকায় সংঘবদ্ধ জলদস্যুতার ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এই দলগুলো দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ কক্সবাজার, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী থানা এলাকাসহ সাগর পথে বিভিন্ন চ্যানেলে ডাকাতি করে আসছেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/এসএস/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :