ধর্ষণের আসামিকে ‘ভুয়া’এফিডেভিট প্রদান, আইনজীবীকে আদালতে তলব
বিয়ের ভুয়া এফিডেভিট প্রদান করে ধর্ষণের আসামিকে জামিন পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে বগুড়ায় নাজমুল হোসেন পপন নামে এক আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর জন্য তলব করেছে আদালত।
অভিযুক্ত নাজমুল হোসেন পপন নোটারি পাবলিক আইনজীবী। তিনি বগুড়া জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
আগামী ৩ মে সশরীরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালতে হাজির হয়ে নিজের পক্ষে ব্যাখ্যা দিতে আইনজীবী নাজমুল হোসেন পপনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, দুই বছর আগে ধর্ষণের শিকার ১২ বছরের এক শিশুর বয়স বেশি দেখিয়ে আসামির সঙ্গে বিয়ের এফিডেভিট করেছিলেন ওই আইনজীবী। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার শুনানি চলাকালে বিষয়টি জানাজানি হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আশিকুল খবির এই আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদরের ইউসুফ আলী প্রামাণিক (৪০) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে নির্যাতিতার মা মামলা দায়ের করেন।
মামলার দায়ের করার পর একই বছর ১৯ অক্টোবর শিশুটির মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ডা. রোকসানা খাতুনের ওই প্রতিবেদনেও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মামলার তদন্তকর্মকর্তা ফুলবাড়ী ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক সুজন মিঞার তদন্ত প্রতিবেদনেও ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা মিললে তিনি চার্জশিট প্রদান করেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে ২০২১ সালের ৩ মে ওই শিশুকে ফুসলিয়ে এফিডেভিট মূলে বিয়ে করেন আসামি ইউসুফ আলী।
অভিযোগ উঠেছে, ওই এফিডেভিটে ধর্ষণের শিকার ১২ বছরের ওই শিশুর বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর। আসামি ধর্ষণের শিকার শিশুটির সঙ্গে সংসার করছেন এমন তথ্য দিয়ে মামলার কিছুদিন পর সে জামিন মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পরেই ইউসুফ আলী বিদেশে পালিয়ে যান।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি শুনানিকালে ধর্ষণের শিকার ওই শিশু আসামি ইউসুফকে বিয়ে করার বিষয়টি অস্বীকার করে।
এ বিষয়ে শিশুটির বাবা বলেন, ২১ সালে আসামি ইউসুফ আলী জামিন পায়। জামিনের বিষয়টি আমরা বুঝতে পারিনি। তবে জামিনের কয়েকদিন পর বুঝেছিলাম ও জামিন পেয়েছে। এখন লোকজনের মুখে শুনি ইউসুফ মালয়েশিয়াতে আছে।
এদিকে কারণ দর্শানোর খবর শুনেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা পপন। কিন্তু তার কাছে এখনও আদেশের কপি আসেনি বলে জানিয়েছেন। অভিযোগে নিজের দায় অস্বীকার করে নাজমুল হুদা বলেন, এফিডেভিটে অন্য একটি মেয়ের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। নাবালিকা শিশুর ছবি বা সে নিজে থাকলে বিষয়টি জানতে পারতাম। তবে বিচারকের নির্দেশ অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে আদালতে জবাব দিবেন বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ এর পিপি নরেশ মুখার্জী বলেন, আদালতে বিচারকের কাছে ধর্ষণের শিকার শিশুটি বয়ান দিয়ে বলেছে, ওই বিয়ের ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। আসামির সঙ্গেও কোনোদিন সংসার করেননি।
বিচারক তার বয়ানের ওপর ভিত্তি করে ৫০০/১৪ ধারায় নোটারি পাবলিক আইনজীবীকে শোকজ করেছেন। আগামী ৩ মে কারণ দর্শানোর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/পিএস)