গ্যাসের দামবৃদ্ধিতে আরও অস্থির হতে পারে বাজার
এক দিকে নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি অপরদিকে রমজানের আগেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গেজেট জারি করা হয়েছে। গেজেটে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। নতুন এই দাম চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কার্যকর হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য গ্যাসের পূর্ব মূল্য ছিল প্রতি ঘনমিটার ১৪ টাকা।
এর আগে গত বছর ১৮ জানুয়ারি আবাসিক, সিএনজিচালিত যানবাহন, সার ও চা শিল্পে ব্যবহার ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, যা ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হয়।
একই দিনে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেয় সরকার। রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি সর্বোচ্চ ৭৫ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ৩৪ পয়সা কার্যকর হবে। হঠাৎ করেই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে জনমনে বেশ অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এস এম শামসুল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, গ্যাস বিদ্যুতের দাম বারানো মানে পন্যের মূলো বৃদ্ধিকে উসকে দেওয়া। গ্যাস বিদ্যুতের সাথে সকল পন্যদ্রব্য জড়িত আছে। গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের দাম বাড়বে, বিদুতের দাম বাড়লে পন্যদ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, উৎপাদন ব্যয় বাড়লে পন্যের বিক্রির দাম বাড়বে। অতয়েব রমজানের আগেই গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যবসায়ী আছে তারা যখনই জানতে পারবে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বেড়েছে তখনই নানা অজুহাতে বাজারে নিত্যপন্যের দাম বৃদ্ধি করে দিবে। যেখানে নিত্যপন্যের বাজারে অস্বস্তি রয়েছে সেখানে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকেই বেশ কিছু নিত্যপনের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বাড়তি দেখা গেছে।
রাজধানীতে কয়েকটি বাজার থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, দুই দিন আগেও জাত ভেদে আলুর দাম ছিল ২৫-৩০টাকা। তবে মঙ্গলবার বিকেল থেকে কয়েকটি বাজারে আলু কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৫০টাকায়।
এছাড়াও কালিবাউস মাছ, কাতল মাছ, পাঙ্গাশ, রুই, সিলভারকার্প, তেলাপিয়া, শিং, চিংড়ি, ইলিশ মাছের দাম বেড়েছে গত দুইদিনের তুলনায় কেজিপ্রতি ৩০-৫০টাকা।
গরুর মাংস, খাসির মাংস, ব্রয়লার মুরগি, কক মুরগি, লেয়ার মুরগি, দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ১০-২০টাকা।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষনার পরই এর প্রভাব পরতে থাকে মাত্র ঘন্টাখানেক ব্যাবধানেই।
কাপ্তান বাজারে বাজার করতে আসা বাবলা নামের এক ব্যক্তি ঢাকা টাইমসকে বলেন, এমনিতেই বাজারের সব জিনিশের দাম বাড়তি তার মধ্যে বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম বাড়িয়ে আমাদের বিপাকে ফেলা হচ্ছে। সারা দিন এমনিতেই গ্যাস থাকে না, বিদ্যুৎও থাকে না। তার মধ্যে দাম বাড়ানো হলো। এইদিকে এই দাম বাড়ানোর কারনে সব জিনিষের দাম আবার বারানো হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের জীবন্ধারন অনেক কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়ে পরবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে বিভিন্ন পন্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। উৎপাদন খরচ বাড়লে উৎপাদকরা তাদের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি পন্যদ্রবের বিক্রির দাম বাড়ে। আর নিত্যপন্যের দাম বাড়লে মানুষ ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এতে করে পন্যের কর কমে যায়। সরকারের রাজস্বও কমে যায়।
(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি)