পটুয়াখালীতে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

রিপন দাস, পটুয়াখালী
 | প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২৬

পটুয়াখালীতে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২৩ জন। বাড়তি এ রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তবে দিন যত যাচ্ছে গরমের সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত এক সপ্তাহে ৫২৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রন্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়।

এদিকে ডায়রিয়া রোগীর চাপে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হাসপাতালের মেঝে থেকে শুরু করে হাঁটার পথ, বারান্দা সবখানেই অস্থায়ী বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে মশা-মাছি এবং নোংরা পরিবেশের কারণে ভোগান্তিতে আছেন আগত রোগী এবং তাদের স্বজনরা।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দুমকী উপজেলার চরবয়রা এলাকার রোগী বৃদ্ধ জয়নাল (৬০) তার ছেলে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাতলা পায়খানা এবং বমি শুরু হয় এবং কেমন দুর্বল হয়ে পড়ে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে স্যালাইন দেওয়া হয়। সেই থেকে স্যালাইন চলছে। এখন শরীর কিছুটা ভালো। তবে হাসপাতালে কোনো বেড পাইনি, তাই বারান্দায় ফোম বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। একই কথা জানান হাজি খালি থেকে আসা রোগী চাঁদনী দেবনাথ সঙ্গে ছিল মা সুস্মিতা দেবনাথ।

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি করেছি, কিন্তু কোনো সিট খালি নেই, তাই রাস্তার পাশে ছিট লাইচ্চা স্যালাইন দিতেছি। স্যালাইন-ওষুধ হাসপাতালই দেছে। তয় মশা মাছির কারণে টেকা দায়। চার দিকে গন্ধ আর প্রচণ্ড গরম, ভোগান্তির যেন শেষ নাই।’

পটুয়াখালী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত সাত দিনে জেলায় ৫২৩ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় ভর্তি হয়েছেন ইতোমধ্যে ৩৫৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় এরমধ্যে বাউফল উপজেলায় ৬ জন, দশমিনা উপজেলায় ১১ জন, দুমকি উপজেলায় ৭ জন, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ৯ জন, কলাপাড়া উপজেলায় ১১ জন, গলাচিপা উপজেলায় ১৬ জন এবং পটুয়াখালী সদরে ৫৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ১৭৩৩ জন রোগী ডায়রিয়া আক্রন্ত হয়ে চিকিৎসা নিলেও কোনো রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিগত বছরগুলোতেও এমনভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। এসব বিষয় মাথায় রেখে ডায়রিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সকলের খাবার গ্রহণ এবং পানি পানের ক্ষেত্রে এই সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পরিস্থিতি এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। খাবার স্যালাইনসহ অনান্য ওষুধেরও পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।

অপরদিকে ডায়রিয়ার পাশাপাশি জেলায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে ১৬২ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। তবে ডায়রিয়া কিংবা নিউমোনিয়ায় এ বছর জেলায় কোনো রোগী এ পর্যন্ত মারা যায়নি বলে জানা যায়।

(ঢাকাটাইমস/৪এপ্রিল/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :