গাজায় ৩ ধাপে যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব
মিশরের রাজধানী কায়রোতে শান্তি আলোচনায় গাজা উপত্যকায় একটি নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপিত হয়েছে। যেখানে তিনটি ধাপে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় শর্তসাপেক্ষে প্রত্যাবর্তন এবং ৯০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার শান্তি আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি ফিলিস্তিনি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলি বেসামরিক জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৯০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১০০ জন যাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন।
সূত্রটি বলেছে, প্রথম পর্যায়ে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় প্রত্যাবর্তন অনুমতি দেওয়া হবে, তবে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে এবং মনোনীত আশ্রয়কেন্দ্রে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে, সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং পরবর্তীতে নির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে, গাজা থেকে ইসরায়েলি মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে ফিলিস্তিনি সূত্রটি উল্লেখ করেছে।
প্রস্তাবটির বিষয়ে হামাসের একজন কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাউই আনাদোলুকে বলেছেন, প্রস্তাবটি একটি পরিষ্কার যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে উপেক্ষা করে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলতে ব্যর্থ হয়।
বন্দী বিনিময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রস্তাবটি নিশ্চিত করে যে সমস্ত ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে, অন্যদিকে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি আপস সাপেক্ষে।
এদিকে নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
এর আগে সোমবার, ব্যাপক বৈঠকের পর মিশরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পরোক্ষ আলোচনায় নিযুক্ত হওয়ার পর ইসরায়েলি ও হামাস উভয় প্রতিনিধিদল কায়রো ত্যাগ করে।
তেল আবিব বিশ্বাস করে গাজায় ১৩৪ ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে, যখন ইসরায়েলি জেলে কমপক্ষে ৯ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন ধরে গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য তোড়জোড় চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ একাধিক বিশ্ব নেতা দাবি করেছিলেন রমজান মাস শুরুর আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে। তবে রমজান শেষ হতে চললেও গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে গত মাসের শেষের দিকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠক করেছেন ইসরায়েল, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। সেই বৈঠক শেষে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন মিসর ও কাতারের কর্মকর্তারা।
সেই বৈঠকেই হামাসকে ৪০ দিন যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ কাতার ও মিসর। তবে কয়েক দফায় বৈঠক হলেও, কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েল। এতে কোনো ফলাফল ছাড়াই যুদ্ধবিরতির আলোচনা শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। চার মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারীও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে। বিনিময়ে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। হামাসের কাছে এখনো প্রায় ১৩৪ জন জিম্মি রয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।
(ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল/এমআর)