৩২ ঘণ্টা পুলিশি হেফাজতে থেকেও দুই ব্যক্তি হলেন অপহরণ মামলার আসামি!
জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানায় ৩২ ঘণ্টা পুলিশি হেফাজতে থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও শিক্ষার্থী অপহরণ মামলার আসামি হয়েছেন দুই ব্যক্তি।
অপহৃত ছাত্রী উদ্ধার হওয়ার পর সম্পৃক্ততা নেই মর্মে ছাড়া পেয়ে পরদিন দুপুরে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয় শিক্ষার্থী ইমাম আলী ও তার খালাতো বোন আমেনা বেগমকে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বকশীগঞ্জ উপজেলায় গত রমজানের আগের দিন অপহরণের শিকার হন চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৫ বছর বয়সী এক ছাত্রী। উপজেলার টাঙ্গারিয়াপাড়ার আজাদ হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওই ছাত্রীকে অপহরণ করেছে মর্মে অভিযোগ ওঠে। মেয়েকে ফিরে পেতে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশের দারস্থ হন অপহৃত ছাত্রীর বাবা।
গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অভিযুক্ত আনোয়ারের ছোট ভাই কলেজ ছাত্র ইমাম আলী এবং খালাতো বোন আমেনা বেগমকে থানায় আনেন বকশীগঞ্জের কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খায়রুল ইসলামের নেতৃত্ব পুলিশের একটি দল।
পরদিন মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে অপহরণকারী আনোয়ারকে আটক করাসহ অপহৃত ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর রাত ৩টার দিকে ইমাম আলী এবং আমেনা বেগমকে ছেড়ে দেওয়া পুলিশ।
পরেরদিন বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটায় বকশীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন অপহৃত ছাত্রীর বাবা। মামলায় পুলিশী হেফাজত থেকে রাতে ছাড়া পাওয়া ইমাম আলী এবং আমেনা বেগমকেও আসামি করা হয়।
পুলিশের দাবি, পুলিশী হেফাজতে থাকাকালীন ওই দুইব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ তোলেনি মামলার বাদি। সে কারণেই ২৪ ঘণ্টার কম সময় মধ্যেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বাদির ভাষ্য, তিনি যথা সময়েই থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মেয়ে অপহণের অভিযোগে ওই ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে আনোয়ার, তার ছোট ভাই ইমাম আলী, বাবা আজাদ, এবং খালাতো বোন আমেনা বেগমের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় এবং কুপরামর্শে স্কুলে যাতায়াতের পথে ওই ছাত্রীকে আনোয়ার বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করত। এক পর্যায়ে গত ১১ মার্চ সকাল ১০টার দিকে একই এলাকার এক গৃহ শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে আগের মতোই বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ফুসলাতে থাকে আসামিরা। এতে রাজি না হলে, আনোয়ার অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় ছাত্রীকে পাজা করে ধরে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে যায়। এ সময় এজহারে উল্লিখিত সাক্ষী (ওই ছাত্রীর চাচী) ঘটনা দেখে ফেলে।
মামলা বাদি বলেন, ‘ঘটনার পর গত ১৫ মার্চ চারজনের নামোল্লেখে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। দুইজনকে পুলিশ কেনো ছেড়ে দিয়েছেন, সেটা জানি না।’
পুলিশী হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া ইমাম আলী বলেন, ‘আমাকে গত ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে বসতবাড়ি পাশ্ববর্তী নঈমিয়া বাজার থেকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে থানায় এনে পরদিন ১৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টার থানা থেকে ছেড়ে দেয়। এসআই খায়রুল ইসলাম থানায় আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। আমার খালাতো বোন আমেনা বেগমকেও গালাগালি করেছেন।’
পুলিশী হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া আমেনা বেগম বলেন, ‘পুলিশ অযথা আমাদের ধরে থানায় রেখেছিল। আমাদের কোনো দোষ ছিলো না। আমাদের কষ্ট দিয়েছে পুলিশ। গালাগালি করেছে।’
বকশীগঞ্জের কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘অপহরণকারী আনোয়ারের ছোটো ভাই এবং খালাতো বোনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি।’
বকশীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান বলেন, ‘মামলার বাদি প্রথমে মেয়ে হারানো জিডি করেন। জিডিমূলে এক যুবককে আটক করাসহ আমরা ভিকটিমকে উদ্ধার করি। বাদি মামলার অভিযোগ দিয়েছেন বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে। তদন্ত কর্মকর্তা দুইব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছিল। ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাদি অভিযোগ পরে দেওয়ায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।’
(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/প্রতিনিধি/এসআইএস)