বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সামনেই সাংবাদিককে ছাত্রলীগ কর্মীর হেনস্তা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) পুলিশের সামনেই সাংবাদিককে হেনস্তা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত ছাত্রলীগ কর্মী আবুল খায়ের আরাফাত। এসময় সাংবাদিককে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ব্রিফিংয়ে মাসুদ রানা বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.আর মুকুলের ভিডিও বক্তব্য ধারণ করতে গেলে আরাফাত তাকে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে নিয়ে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। হেনস্তার একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
মাসুদ রানা ঢাকা টাইমসের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য।
মাসুদ রানা বলেন, গত ২৯ জুলাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার সময় আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমাকে নিষেধ করে। আমি আমরা কাজ চালিয়ে যাওয়ায় দূর থেকে আমাকে গালিগালাজ করে ও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। সেই জের ধরেই আজ বেলা ১২ টার দিকে আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করার (ওসির একটা প্রেসব্রিফিংয়ের ভিডিও নেয়ার) সময় ছাত্রলীগ কর্মী দাবি করা এ কে আরাফাত সকলের সামনেই আমাকে পিছন থেকে টেনে হিঁচড়ে পাশে নিয়ে যায় এবং আমার কাজে বাধা দেয়। এসময় হাতে খামচি দিয়ে ধরে এবং তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে আমি হাতে আঘাত পাই ও রক্ত বের হয়। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে যেতে না চাইলে সে আমার পেটে চেপে ধরে এবং আমি চিৎকার করলে সেখানে উপস্থিত পুলিশ তার হাত থেকে ছাড়িয়ে আমাকে ঐ স্থান ত্যাগ করতে সহযোগিতা করে। আমি এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং পেশাগত দায়িত্ব পালন নিয়ে শঙ্কিত। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে সকল সংবাদকর্মীর নিরাপত্তা চাই।সাংবাদিক হেনস্তা ও তুলে নেয়ার চেষ্টা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে অভিযুক্ত আবুল খায়ের আরাফাত বলেন, আমি কোনো সাংবাদিক লাঞ্ছিত করিনি। ঐ ছেলেটা আমার ক্যাম্পাসের ছোট ভাই তাই ডেকে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। কথা বলতে চাইলে তাকে টেনে হিঁচড়ে কেন নিয়ে আসছিলেন, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি আরাফাত।
বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশ থেকে একজনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, আমি দেখে ছেলেটিকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সহযোগিতা করি। ছেলেটি তখন আমাকে বলে সে সাংবাদিক। তবে ছেলেটাকে যে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তাকে চেনেন না বলে জানান ওসি মুকুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে আমার নজরে এসেছে যেহেতু এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে ঘটেছে, তারা বিষয়টি দেখবেন আশা করি। এছাড়াও, এই ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পেলে তার যথাযথ ব্যবস্থা এবং দোষীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবেন বলে জানান উপাচার্য।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। পরিচয়ধারী ছাত্রলীগ কর্মী আবুল খায়ের আরাফাতের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ট্রেইনি কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে পুলিশের কাছে আটক, হত্যার ভয় দেখিয়ে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাই মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একটি মিটিংয়ে হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/পিএস

মন্তব্য করুন