গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও অনাহারে নিহত ৬২ হাজার ছাড়াল

গাজায় দখলদার ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনির মৃত্যুর সংখ্যা ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা আগ্রাসনে এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল অবিরাম বোমাবর্ষণের কারণে গাজার কোথাও আর নিরাপদ আশ্রয় নেই। হামলার ফলে খাদ্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিবারের জন্য খাদ্যের সন্ধানে বের হওয়া অনেক মানুষ প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন।
ইসরায়েলি সেনারা বর্তমানে গাজার বৃহত্তম শহর গাজা সিটিকে দখলের জন্য ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। সোমবার ভোর থেকে শুরু হওয়া আক্রমণে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জন খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। শহরের সাবরা এলাকায় ড্রোন হামলায় সাংবাদিক ইসলাম আল-কউমিসহ তিনজন নিহত হন।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানান, গাজার পূর্বাঞ্চল অব্যাহত হামলার শিকার হচ্ছে। ভারী কামান, যুদ্ধবিমান ও ড্রোনের আঘাতে আবাসিক এলাকাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুটি শিশু। এ নিয়ে দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ২৬৩ জন, এর মধ্যে ১১২ শিশু।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজায় পাঁচ বছরের নিচে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহে বাধা থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
এদিকে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছে হামাস। প্রস্তাব কার্যকর হলে গাজায় আটক অর্ধেক ইসরায়েলি বন্দি এবং ইসরায়েলে আটক কিছু ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবে। তবে ফিলিস্তিনিরা বলছেন, আগেও বহু যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে, কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হয়নি।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে। এখন পর্যন্ত গাজায় ৪২ মিলিয়ন টনের বেশি ধ্বংসস্তূপ জমেছে, যা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান। এগুলো সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুযায়ী, গাজার মোট ভবনের অর্ধেকেরও বেশি—অন্তত ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত, এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং এক-তৃতীয়াংশ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলতে ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৯ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন