মেয়ে পথশিশুদের গল্পগুলো নির্মম

নাসিমা আক্তার তূরা, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৩১| আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ০৯:২৮
অ- অ+

ঢাকার ট্রাফিক সিগন্যালে কয়েক মুহূর্তের জন্য দাঁড়ালেই দেখা মিলবে এদের। একদল ছেলেমেয়ে গাড়ি থামা মাত্রই দৌঁেড় জানলার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের কারো হাতে ফুল, কারও হাতে বই, কারো হাতে পত্রিকা, আবার কারও হাতে চকলেট। গাড়ির আরোহীদের কাছে তারা এগুলো বিক্রি করে।

ঢাকার খুব পরিচিত দৃশ্য এটা। পরিচিত দৃশ্যের এই ছেলেমেয়েরা পথশিশু। পথই তাদের জীবন জীবিকার সবকিছু।

রাজধানীর পথশিশুদের কয়েকটি ভাগ রয়েছে। ১. কিছু শিশু যারা ২৪ ঘণ্টাই রাস্তায় থাকে। তাদের থাকার কোন জায়গা নেই। এ ধরনের পথশিশুদের বেশিরভাগ হয় এতিম নয় বাবা-মা তাদের ফেলে রেখে গেছে। ২. কিছু পথশিশুর পরিবার আছে। তারা দিনের বেলায় রাস্তায় থাকলেও রাতে পরিবারের সঙ্গে বাসায় বা অন্য কোথাও থাকে। ৩. কিছু পথ শিশু যারা পরিবারসহ রাস্তাতেই থাকেন।

যেসব মেয়েরা রাস্তায় তাকে তাদের জীবন বড়ই কষ্টের। তারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। সদরঘাট ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে চোখে পড়ল এক পথশিশু। এই মেয়েটার বয়স হবে ৮-৯ বছর। শীতের সন্ধ্যায় মেয়েটি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।

মেয়েটির মা তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। মা বাসায় গেলেই খুব মারধর করে। তার বাবার কোন খোঁজ খবর নাই। এই মেয়েটি রাতে রাস্তায় থাকে।

মেয়েটি বলল, বিভিন্ন দুষ্ট লোকেরা তাকে নানা রকম খারাপ কথা বলে। রাতে রাস্তায় থাকতে তার কষ্ট হয়। যে বয়সে তার স্কুলে থাকার কথা সেখানে তার জীবন কত কষ্টের। এমনও দিন যায় এই ছোট মেয়েটির পেটে কোন খাবার পড়ে না।

এই শিশুটিও যৌন অত্যাচার থেকে বাদ যায় না। রাতে যখন নির্জন হয়ে যায় এলাকা, তখন সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে মানুষ। যৌন সন্ত্রাস ছিন্নভিন্ন হতে হয় এদেরকে।

কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট টার্মিনালে দেখা যায় অনেক পথশিশু। মেয়ে পথশিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এক শিশু বলল ‘আমার বাপ মা নাই। আমি ছোট্টকাল থেইক্যা এইহানে থাহি। রাতে কেলাবে থাহি।’

এই শিশুটিও জানালো তার জীবনের দুঃসহ নানা স্মৃতি। এগুলো এতটাই করুণ যে লিখে বোঝানো কঠিন। মারধর, আধপেটা খাওয়া তার কাছে কিছুই না। আর শৈশবে মানুষের ধর্ষকামের যে দিকটি সে দেখেছে, তাতে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সে গড়ে উঠতে পারবে কি না, তার সন্দেহ আছে। সবগুলো একই রকম।

সদরঘাটেই এলাকায় পাওয়া গেলো আরও একটি মেয়েকে। সে বলল ‘আমার বাড়ি নাই রাস্তাঘাটে ঘুমাই। মার বিয়া অইছে। আমি মার লগে থাহি না।’

এই পথশিশুরা পেটের দায়ে কাজ করছে দিনরাত। তাদের বাবা মার খবর জানে না। মেয়ে পথশিশুরা নানা বাজে কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তারা যৌনপল্লীতেও ঢুকে পড়ছে। সমাজ, রাষ্ট্র তাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারছে না।

বেসরকারি সংগঠন পথবাসী সেবাকেন্দ্র (সাজেদা ফাউন্ডেশন) এর ম্যানেজার রাসেল বারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, পথশিশুরা প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আর মেয়ে পথশিশুরা মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৯১৩ জনকে বিভিন্নভাবে সেবা দিয়েছি।’

সরকার কী করছে

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পথশিশু পুনর্বাসন নিয়ে সরকারি কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, রাতে ঘরের বাইরে খোলা আকাশের নিচে বা এখানে সেখানে ঘুমায় সারাদেশে এমন শিশুর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩৮০। এদের মধ্যে ঢাকায় আছে দুই হাজার ৫৬৭ জন। পথ শিশুদের মধ্যে ২৫ শতাংশ মেয়ে শিশু।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মেহ জাবিন ঢাকাটাইমসকে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে তারা পথশিশুদের উপর জরিপ করছেন। এসব শিশুদের সাময়িক আবাসন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা শিশুদের প্রয়োজনীয় তথ্যসহ ডাটাবেইজ তৈরি করছি। বিভিন্ন জায়গায় পথশিশুদের রাত্রিকালীন অবস্থানের জন্য শেল্টারহোম রয়েছে। তালিকাটা পেলেই তাদেরকে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সেল্টারের ঠিকানা-

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ২৬ নং ওয়ার্ড

মহিলা সহায়তা কেন্দ্র ( মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর) ১/৬ এ , ব্লক বি , লালমাটিয়া, ঢাকা, ড্রপ-ইন সেন্টার (অপরাজেয় বাংলাদেশ) ১৪০ পূর্ব তেজতুরী বাজার, পথবাসী সেবাকেন্দ্র ( সাদেদা ফাউন্ডেশন) ৪১/ক, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, রহমান ভিলা-এর দ্বিতীয় তলা কাওরান বাজার । হ্যাপী হোম (অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ) ২০/ডি র্প্বূ তেজকুনী পাড়া, তেজগাঁও।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, আট নং ওয়ার্ড

পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র (মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণলয় ) রাজ্জাক টাওয়ার, ২২ কমলাপুর বাজার রোড, শিশু বিকাশ কেন্দ্র (বাংলাদেশ শিশু একাডেমি) ৯/১১ আজিমপুর (পঞ্চম তলা) লালবাগ কেল্লা রোড, সেল্টার হোম (ইনসিডিন বাংলাদেশ) ১৬২ দক্ষিণ মুগদাপাড়া (শান্ত সিএনজি পাম্পের পাশে) ওয়ালটন শোরুম এর পঞ্চম তলা, পথবাসী সেবাকেন্দ্র ( সাজেদা ফাউন্ডেশন) ৭২/বি/১ মিয়া জান গলি (পুকুরপাড় থেকে ডানদিকে) মানিকনগর, হ্যাপী হোম (অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ) ১০৩/বি, উত্তর মুগদা পাড়া।

ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/ডব্লিউবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনীর হাতে চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার
আরেকজন ফ্যাসিস্ট বিরোধী অফিসার পেল ডিবি: ইলিয়াসের পোস্ট
মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযান, হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেপ্তার ২০
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় ক্যাথলিক স্কুলে হামলা, নিহত ৩
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা