সমাবর্তনে ঢাবির ফটোগ্রাফি সোসাইটির রমরমা বাণিজ্য!

৫২তম সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তন চলাকালে ছবি তুলে তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটির বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে এধরনের কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা। অনেকে এ ব্যাপারে প্রশাসনের নির্লিপ্ততাকে দায়ী করেছেন।
সোমবার রাতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ ফেসবুক গ্রুপে খাইরুল ইসলাম নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ‘টিএসসির তথাকথিত সামাজিক সংগঠনের অন্তরালে ব্যবসা’ শিরোনামে একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি নিজেকে ভুক্তভোগী দাবি করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তালহা নামে এক যুবক নিরাপত্তা পাস ব্যবহার করে ছবি তুলছেন এবং তার পকেটে থাকা ভিজিটিং কার্ড বিতরণ করে ছবি নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভিজিটিং কার্ডের তথ্যের ভিত্তিতে যোগাযোগ করে ছবি নিতে চাইলে প্রতিটি ছবির জন্য ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে। ফটোগ্রাফিক সোসাইটির একাধিক সদস্য বিশেষ নিরাপত্তা পাসের মাধ্যমে ক্যামেরা নিয়ে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করে এ বাণিজ্য পরিচালনা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী একাধিক গ্রাজুয়েট জানান, সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী কৃতি শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পদক নেয়ার মুহূর্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ছবি স্মৃতি হিসেবে সবাই রাখতে চায়। ওই মুহূর্তের একটি স্থির চিত্র ধারণ করে মোটা অংকের টাকা দাবি করার মাধ্যমে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি এক রকম জিম্মি করছে শিক্ষার্থীদের। ভিভিআইপি অতিথি থাকার কারণে অনুষ্ঠানস্থলে ক্যামেরা কিংবা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাথে রাখার অনুমতি ছিল না। সেখানে ফটোগ্রাফিক সোসাইটির তিনজন সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে ছবি তুলে শিক্ষার্থীদের এক প্রকার জিম্মি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ উঠার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি আবু জাফর মো সালেহ। যেখানে প্রতিটি ছবির জন্য চড়া মূল্য নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি বছর সমাবর্তন উপলক্ষে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ফটোসেশনের আয়োজন করে থাকে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ পায় না ডিইউপিএস। ফটোস্টুডিও নির্মাণ, তিনদিন ধরে ৩০-৪০ জন ফটোগ্রাফারদের ব্যয়, ছবি প্রিন্টিং ও প্রচার-প্রচারণা বাবদ বড় অংকের টাকা খরচ হয়ে যায়। ছবি বিক্রির মাধ্যমে ডিইউপিএস এই ব্যয় বহন করে। ব্যয় নির্বাহের পরবর্তীতে যেসব উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে তা ডিইউপিএসের সদস্যদের ফটোগ্রাফি কর্মশালা, ফটো-আউটিং, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয়। তাই এক্ষেত্রে ডিইউপিএস যে ছবি নিয়ে ব্যবসা করে তা বলা যৌক্তিক না ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আর ডিইউপিএস থেকে কাউকে ছবি তোলা বা নেয়ার জন্য বল প্রয়োগ করা হয় না। শুধু স্বেচ্ছায় যারা ছবি সংগ্রহ করতে আসে তাদেরকেই ছবি প্রদান করা হয়। সংগঠনের আর্থিক তহবিলের জন্যে পূর্ব থেকেই এমন প্রথা চালু ছিল, অতীতে এর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসে নাই। ভবিষ্যতে এমন অভিযোগ যাতে না আসে, তার জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)র সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি । তবে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে অভিযোগ উঠার পর ডিইউপিএস এর সভাপতির সাথে কথা বলেছি। যদি এরকম কিছু ঘটে থাকে তাহলে এই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং কেন এটি ঘটল এবং কেন শিক্ষার্থীরা ডিইউপিএস এর দ্বারা নিগ্রহের শিকার হলো তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছি।’
এ ব্যপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী ঢাকা টাইমসকে বলেন, এটি অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের ছাত্রের এরকম বাণিজ্যিক মনোভাব আমাকে খুব আহত করেছে। আমি সংগঠনটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে ডেকে সতর্ক করে দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে এ ধরণের কাজ করলে মি আইনগত ব্যবস্থা নেব বলে জানিয়েছি। তারা আমাকে কথা দিয়েছে এ ধরনের কাজ আর করবে না। শিক্ষার্থীদের সেবা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করবে।
(ঢাকাটাইমস/১০ডিসেম্বর/এমআই/জেবি)

মন্তব্য করুন