বেগমগঞ্জ ইউএনও’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সাংসদের

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে দুর্নীতির অভিযোগে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নোয়াখালী-৩ আসনের (বেগমগঞ্জ) সাংসদ মামুনুর রশিদ কিরণ। বুধবার দুপুরে উপজেলার পরিষদ কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় সাংসদের নিজস্ব কার্যালয়ে এ সম্মেলন হয়।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে সাংসদের কয়েকজন লোক তার বিরুদ্ধে লেগেছে বলে দাবি করেন।
সম্মেলনে সাংসদ মামুনুর রশিদ কিরণ অভিযোগ করে বলেন, ‘গত বছরের ১১ জুন ইউএনও মাহবুব আলম বেগমগঞ্জে যোগ দেয়ার পর থেকে নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দের টাকা থেকে তিনি ঠিকাদারদের কাছ থেকে পাঁচ শতাংশ ঘুষ নেন।’
ইউএনও নিজে ঠিকাদার সেজে ৭৫০০ টাকার বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন ১৭০০৫ টাকার মেমো বানিয়ে উপজেলার ১৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেন ইউএনও।
এছাড়া উপজেলার হাট বাজার ইজারা মূল্য থেকে ১৫ শতাংশ, ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের বরাদ্দ থেকে পাঁচ শতাংশ, রাজস্ব খাতের বরাদ্ধ থেকে পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে বরাদ্দ গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের ২৪টি ঘর থেকে ১৫ শতাংশ হারে ঘুষ নিয়েছেন ইউএনও। তিনি নিজেই ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করান বলে অভিযোগ আছে।
এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে বৃহত্তর নোয়াখালী বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনীতে কয়েকশ ব্যবসায়ী ও ইটভাটার মালিকদের থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়ার কথা বলে ৫০ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলে আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ড্রেজিং মেশিন আটক করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন, এডিপির টাকা দিয়ে কোনো উন্নয়ন কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করাসহ আরো নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়ার সময় ইউএনও সাংসদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন বলেও অভিযোগ করেন সাংসদ কিরণ।
তার অভিযোগ, সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে অন্যত্র বদলির আদেশ দিয়ে চলতি বছরের পাঁচ মার্চের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও তিনি তা মানছেন না।
সাংসদ বলেন, ‘যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার সেখানে কি করে একজন ইউএনও এভাবে দুর্নীতি করে।’
তিনি দ্রুত ইউএনও মাহবুব আলমকে অপসারণ করে তার এসকল দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানান।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর উল্যাহ, আওয়ামী লীগ নেতা আনছারি, কামরুজ্জামান রিয়াজসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও উপজেলার হাট বাজার ইজারা প্রদানে অনিয়মের প্রতিবাদ ও অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে সাংসদের কয়েকজন লোক আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।’
বদলির বিষয়ে ইউএনও জানান, তার বদলির আদেশ আপতত স্থগিত রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/পিএল/এলএ)

মন্তব্য করুন