দলের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট খালেদা জিয়া!

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২০, ১৪:২২ | প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২০, ১০:৫১
কারামুক্ত হওয়ার পর গত বুধবার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’যান খালেদা জিয়া।

টানা ২৫ মাস কারান্তরীণ ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই সময়ে দলীয় প্রধানকে মুক্ত করতে কার্যত ব্যর্থ তার দল। না আন্দোলন, না আইনি লড়াই- কোনোটাতেই সফলতার মুখ দেখেননি দলের নেতারা। শেষমেশ পরিবারের মধ্যস্থতায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন খালেদা জিয়া।

একদিকে আন্দোলনে ব্যর্থতা, অন্যদিকে আইনি লড়াইয়ে কোনো সুরাহা করতে না পারা- সব মিলে দলের ভূমিকায় হতাশ বিএনপি-প্রধান। এ নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তার অসন্তোষও জানিয়েছেন তিনি।

জিয়া এতিমখানা (অরফানেজ) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। রায়ের পর ওই দিনই আদালত থেকে নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগারে নেওয়া হয় সত্তরোর্ধ্ব খালেদা জিয়াকে। সেই থেকে কারান্তরীণ ছিলেন তিনি।

গত ২৫ মার্চ ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের জিম্মায় ছয় মাসের জন্য কারামুক্ত হন খালেদা জিয়া। দুটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় তার মুক্তির আদেশে। এই সময়ে ঢাকায় তার নিজের বাসায় থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। তাই মুক্তির পর তাকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন সেখানেই আছেন।

ফিরোজায় ফিরে খালেদা জিয়া যে কয় ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন, আলাপে খালেদা জিয়া তার মুক্তির ব্যাপারে দলের ভূমিকা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তার মুক্তির জন্য যে ধরনের জোরদার আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল, দল তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজনৈতিক নানা দাবি আদায় হয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের যে ধরনের একাগ্রতা দরকার ছিল, তার অভাব ছিল বলেই তাদের কোনো হাঁকডাক কাজে আসেনি। এমনকি আইনি পথেও কোনো সুরাহা করতে পারেননি তারা। দলের নেতাদের এই ব্যর্থতার কারণে তাকে দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকতে হয়েছে।

দলীয় প্রধানের কারাবাস এত দীর্ঘ হবে, আগে থেকে তা আঁচ করতে পারেননি দলের শীর্ষ নেতারা- এমন কথা শোনা গেছে তাদের মুখে। তারা দাবি করেন, চেষ্টার তাদের কোনো ত্রুটি ছিল না। শুরু থেকে তারা আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন। এতে এতিমখানা ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলায় জামিন পান খালেদা জিয়া। কিন্তু অন্য মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোয় মুক্তি আটকে যায় তার।

তারপর বিভিন্ন সময় উচ্চ আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসনের জামিনের আবেদন করা হলেও কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। এমনকি বিএনপি-প্রধানের চিকিৎসাসেবা নিয়েও হয়েছে নানা নাটকীয়তা। তার অসুস্থতার বিষয়টি সামনে এনে আদালতে জামিন আবেদনও কোনো ফল দেয়নি। কারান্তরীণ অবস্থাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য রাষ্ট্রকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পরে কয়েক দফা তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ এখান থেকেই মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।

দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু কার্যত এসবের কিছুই কাজে আসেনি। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেও কোনো ফল হয়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু সরকার বরাবরই বলেছে যে, এ বিষয়ে তাদের কোনো হাত নেই। বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার। খালেদা জিয়ার জামিন বা মুক্তির বিষয়টি আদালতই নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছে সরকারপক্ষ।

খালেদাকে আন্দোলন-সংগ্রাম কিংবা আইনি লড়াইয়ে মুক্ত করতে না পারলেও বিএনপির চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না বলে দাবি করেন দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘যখন বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে নেমেছে, তখনই নানা ধরনের হামলা-মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের জব্দ করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারপরও বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে গেছেন।’

দলের চেষ্টা সফল না হওয়ার পেছনে সরকারের হাত দেখছেন বিএনপিপন্থী একজন আইনজীবী। তার ভাষ্য, ‘এর (এতিমখানা মামলা) চেয়ে আরও গর্হিত অপরাধের মামলার আসামির জামিন পাওয়ার নজির আছে। কিন্তু দিনের পর দিন আবেদন করেও বেগম জিয়ার জামিন হয়নি। কারণ সরকার চায়নি। সরকার চাইলে আরও আগেই খালেদা জিয়া মুক্ত হতে পারতেন, তা সম্প্রতি নির্বাহী আদেশেই প্রমাণ হলো।’

৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার বন্দিজীবন এটাই নতুন নয়। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় এক বছর সাত দিন বন্দি ছিলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতৃত্ব। তখন তাকে রাখা হয়েছিল সংসদ ভবনের একটি বাড়িতে।

এক-এগারোর সরকারের সময় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছিল, তার একটি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা। এতিমদের জন্য আসা দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নিম্ন আদালতে রায়ে পাঁচ বছরের সাজা পরে উচ্চ আদালতে আপিলে বেড়ে ১০ হয়।

এই সাজার সঙ্গে জিয়া দাতব্য (চ্যারিটেবল) ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। এ নিয়ে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৭মার্চ/এইচএফ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :