সামাজিক দূরত্ব মানা এখন কথার কথা

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২০, ০৮:৫৯ | প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০২০, ০৮:৩১

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব প্রতিপালনের নির্দেশনা এখন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মানার ব্যাপারে প্রায় সবখানেই ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। ফলে সংক্রামক ব্যাধিটির বিস্তার বৃদ্ধির ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে নতুন করে। এমনকি মাস্ক পরে চলাফেরা করতেও অনেকের মাঝে অনীহা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মহামারীকালে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এমন অবহেলা নীরবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে সতর্ক করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তবে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে পড়া মানুষকে সামাজিক দূরত্ব মানার মধ্যে নিয়ে আসা এখন কঠিন হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক। এই সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষকের মতে, মানুষ এখন করোনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন তাদেরকে যতবেশি সম্ভব মাস্ক পরতে উৎসাহিত করতে হবে।

গেল মার্চের শুরুর দিকে দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর একে একে সবকিছুই বন্ধ হয়ে পড়ে। জুলাইয়ে এসে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে চললেও দেশে ক্রমেই বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন হাজার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আর প্রায় দিনই ৩০ জনের ওপরে মারা যাচ্ছেন। এই অবস্থার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের নির্দেশনা থাকলেও তাও এখন মানা হচ্ছে না।

মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানার অনীহা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘সংক্রমণের বর্তমান পর্যায়ে এসেও অনেকে স্বাস্থ্যাবিধি মেনে চলছেন না। অনেকে অবহেলা করছেন এবং পাত্তা দিচ্ছেন না। এ অবহেলা ভয়ংকর ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এজন্যং চরম মূল্যা দিতে হতে পারে।’

তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমরা সচেতন না হলে সরকার বা কোনো সংস্থা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারবে না এটাই বাস্তবতা। নিজেদের স্বার্থেই সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। কারণ সরকারের দেয়া নির্দেশনা না মানলে যে কোনো সময় যে কেউ বিপদে পড়তে পারি।’

সামাজিক দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে মানুষ অহীনা দেখাচ্ছে মন্তব্য করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যক্তি পর্যাায়ে সচেতনতার বিকল্প নেই। এখানে গোয়ার্তুমির করার সুযোগ নেই। বুঝতে হবে আমি আপনি সুস্থ থাকলে প্রতিবেশিও নিরাপদ থাকবে।’

তবে ভ্যাকসিন আসার আগে করোনা দেশ থেকে চলে যাবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বক্তব্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এমন বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। আর এ ধরনের কথায় মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে।

মন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। উল্টো সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা কঠোরভাবে পালনের পরামর্শ দিয়েছেন।

করোনা বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির উপদেষ্টা ও বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না এটা কিন্তু তাদের দায়িত্ব। আমি জানি না, বুঝি নাই, একথা বলার সুযোগ নেই। এভাবে যদি আক্রান্ত হতে থাকে তাহলে করোনা দীর্ঘসময় ধরে থাকবে এবং ঝুঁকির পরিমাণ বাড়বে। মানুষ কোনো নিয়মই মানছে না। তারা নীরবভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সোমবারও ১৩ হাজার ৩৮২টি নমুনা পরীক্ষায় দুই হাজার ৪৮৫ জনের শরীরে করোন শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ৯৭ হাজার ৮৩ জন।

দেশে করোনার সংক্রমন শুরুর দিকেই সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্কতার সঙ্গে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। যা এখনো বলবৎ আছে। শুরুর দিকে মাস দুয়েক নির্দেশনা পালনে সক্রিয়তা থাকলেও এখন সেটা নেই। বিশেষ করে লকডাউনের সময় কড়াকড়িভাবেই পালন করা হত সামাজিক দূরত্ব।

তবে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিকের হতে শুরু করলে সামাজিক দূরত্ব তো দূরে থাক ব্যক্তিগত সচেতনতায়ও দেখা দিয়েছে অহীনা। নিয়ম মেনে বাইরে বের হতে মাস্ক পরাও অনেকে বাদ দিয়েছেন। কেউ আবার নামকাওয়াস্তে পরছেন। অথচ করোনা সংক্রমণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে অবস্থান ১৫ নম্বরে। অন্যান্য দেশের মত করোনার ভ্যাকসিন পেতে অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশও।

সামাজিক দূরত্ব মানার প্রতি অবহেলার বিষয়ে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, অনেক দিন থেকেই এ নিয়ে শিথিলতা চলে এসেছে। সামাজিক দূরত্ব তো দূরে থাক ব্যক্তিগত সুরক্ষা মানার ক্ষেত্রেও মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। এটা ক্ষতি বয়ে আনবে। ঝুঁকি বাড়াবে।’

সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মহামারীর শুরুতে যে পরিমাণ সচেতনতা বা কড়াকড়ি ছিল ধীরে ধীরে তা কমে এসেছে। বদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত না থাকা এবং জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে আসা এর অন্যতম কারণ। আর এখন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের দিকে যাওয়াও অনেকটাই অসম্ভব।

সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শুধু করোনা নয়, যে কোনো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে যতদিন যায় মানুষের মধ্যে এটি সহজ করে নেওয়ার প্রবণতা তত বেশি তৈরী হয়। দেশেও মানুষ করোনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে এখান থেকে তাদেরকে সামাজিক দূরত্বের দিকে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এখন সরকারকে মাস্ক পড়ার ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে বিনামূল্যে দিতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৫আগস্ট/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :