খেজুর রস সংগ্রহে প্রস্তুত নোয়াখালীর গাছিরা

এম.আর রিয়াদ, নোয়াখালী
  প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:০৭
অ- অ+

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে রয়েছে শীতের দিনের খেজুর রস। কয়েক বছর আগেও গ্রামের প্রায় প্রতিটি এলাকার বাড়ির দরজায়, ক্ষেতের আইল, সড়কের পাশে ছিল সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ। শীতের দিনে প্রায় দুই-তিন মাস খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। জনপ্রিয় এ খেজুরের রস অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।

নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচর, কবিরহাট, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকার গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

সরজমিনে জেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শীত শুরুর পর গত এক সপ্তাহ থেকে নোয়াখালীতে শীত কিছুটা বেড়েছে। আর শীতের মৌসুমের আগমনের শুরু থেকেই গাছিরা খেজুরের রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আর এতে করে পুরো বছর ধরে অযত্নে পড়ে থাকা গ্রামগঞ্জের খেজুর গাছগুলোর কদরও বেড়ে গেছে। নতুন করে গাছগুলোর অপ্রয়োজনীয় পাতা ছাঁটাই (ঝুড়া) করে রস বের করার উপযোগী করা হচ্ছে।

গাছে উঠে কোমরে দড়ি বেঁধে পাখির মতো ঝুলে এ ছাঁটাইয়ের কাজ কষ্টের হলেও রস সংগ্রহের পর এ কষ্টের অনুভূতি আর থাকেনা বলে জানিয়েছেন গাছিরা। গ্রামঅঞ্চলে একটি প্রবাদ আছে ‘যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি খেজুর গাছ রস দিবে’। তবে গাছ সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী রস সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

একসময় শীতের মৌসুমে গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে রস দিয়ে রান্না করা হতো ফিন্নি, পায়েস, রসের গুড় দিয়ে ভাঁপা পিঠা এবং গাঢ় রস দিয়ে তৈরি করা হতো মিঠাই, আর সেই মিঠাই দিয়ে শীতের সকালে বানানো হতো চিড়া মুড়ি খই। আবার কেউ কেউ চিতল পিঠা বানিয়ে খেজুরের মিঠাই দিয়ে খেতো বেশ মজা করেই। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি গুড় তৈরি করেন অনেকে। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিটি ঘরে চলতো হরেক রকম পিঠা ফুলির মহোৎসব। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেতো তখন। এছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে আর্কষণীয় ও মজবুত ফাটি তৈরি হয়। জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার হয় খেজুর গাছ। এখন অবশ্য নতুন প্রজন্মের কাছে এসব কথা রূপকথার গল্পের মতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে ক্রমান্বয়ে স্মৃতির পাতায় চলে যাচ্ছে খেজুর রস।

কথা হয় কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের জগদানন্দ গ্রামের গাছি আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে বাবা-দাদার ঐতিহ্য হিসেবে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে আসছেন তিনি। বর্তমানে জগদানন্দ গ্রামের বিভিন্ন জায়গা তার ৪০টি খেজুর গাছ রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে গাছের পাতা ছাঁটাই করে খেজুর রস বের করার উপযোগী করার কাজে ব্যস্ত তিনি।

ইত্যেমধ্যে ৩০টির বেশি গাছ প্রস্তুত করেও নিয়েছেন। রস দেয়া শুরু হলে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বাইসাইকেলযোগে ফেরি করে রস বিক্রি করবেন। গত বছর প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ টাকার রস বিক্রি করেছেন। চলতি বছর ভালো রস সংগ্রহ করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে অপরিকল্পিত বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে বর্তমানে খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছ রক্ষার দাবিও করেন এ গাছি।

সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লাক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কয়েকজন গাছি জানান, সঠিক পরিচর্যা করলে একটি খেজুর গাছ থেকে ৮-১০ বছর পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। উপজেলায় বর্তমানে খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। আর যেগুলো রয়েছে তাও একেকটা থেকে একেকটার দূরত্ব বেশি হওয়ায় এখন আগের মত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। গাছ কমে যাওয়ায় এ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ।

(ঢাকাটাইমস/৬ডিসেম্বর/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ পৌরসভায় শেষ হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ: অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল মারল কে?
কিছু ঘটলেই যমুনায় যাওয়ার প্রবণতা সহ্য করা হবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ 
সিলেট থেকে ৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনায় গেল প্রথম হজ ফ্লাইট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা