সম্পদের হিসাব চেয়ে ‘নোটিশ’ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন দুদকের সাবেক মহাপরিচালকের

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:১৪| আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০৬
অ- অ+

কেউ অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়ে থাকে। এরপর নোটিশপ্রাপ্ত ব্যক্তির দাখিল করা সম্পদের হিসাব বিবরণীতে গরমিল, ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্য থাকলে অথবা অনুসন্ধানে আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই এটা স্বীকৃত। সবাই এমনটিই জানেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দুদক আইন ও বিধির বাস্তবতা কী? দুদক কি সেই বিধি পুরোপুরি অনুসরণ করে থাকে? নাকি ধারণার ওপর কাউকে নোটিশ দিয়ে থাকে?

এ নিয়ে ঢাকা টাইমসের কথা হয় দুদকের আইন ও প্রসিকিউশন শাখার সাবেক মহাপরিচালক মো. মঈদুল ইসলামের সঙ্গে। সাবেক জেলা জজ হিসেবেও সুনামের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কারো সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ প্রদানের বিষয়টি নিয়ে ২০০৭ সালের দুদক বিধিমালার ১৭ ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কমিশন বা দুদক যেই প্রক্রিয়ায় নোটিশ দিচ্ছে তার প্রক্রিয়াতেই গলদ রয়েছে। কারণ ১৭ বিধিতে বলা হয়েছে, কমিশন কোনো তথ্যের এবং উহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ‘অনুসন্ধান’ পরিচালনার পর যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয়, কোনো ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির বৈধ উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তি দখলে রাখিয়াছেন বা মালিকানা অর্জন করিয়াছেন তাহা হইলে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে একজন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে ওই ব্যক্তির সম্পদ ও দায়দেনার হিসাব সরবরাহের আদেশ জারি করিতে পারিবেন।’

দুদকের সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, গণ্ডগোলটা এখানেই। বিধিতে বলা আছে ‘প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান’ সাপেক্ষে কাউকে নোটিশ করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো অনুসন্ধানই হয় না। অনুসন্ধান প্রতিবেদন সাপেক্ষে নোটিশ দেওয়া হয় না। তবে দায়সারা একটা অনুসন্ধান দেখানো হয়। অথচ উচিত হচ্ছে, নোটিশ জারির আগেই বাস্তবিক অর্থে দুদককে নিশ্চিত হওয়া। যাকে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে তার মোট সম্পদ কত, এর মধ্যে বৈধ সম্পদ কত, আর অবৈধ সম্পদের পরিমাণ কত- তা নিশ্চিত হওয়া। ‘আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে লোকটি বিশাল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন’ এমনটি আইনানুগভাবে ভাবার সুযোগ নেই।

মঈদুল ইসলাম বলেন, ‘দুদক কীভাবে সন্তুষ্ট হলো যে, লোকটি দুর্নীতিবাজ বা অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন, এর বাস্তব ভিত্তি থাকতে হবে। এর জন্য নোটিশ জারির আগেই বের করতে হবে তার সমুদয় সম্পদের হিসাব, যা আগেই দুদকের কাছে প্রতিবেদন হিসেবে রক্ষিত থাকবে। এমনকি দুদক যে নোটিশ দেয় তাতেও ওই ব্যক্তির অবৈধ সম্পদের পরিমাণ থাকতে হবে। হিসাব দাখিল করে তিনি প্রমাণ করুন তার ওই সম্পদ অবৈধ নয়। না পারলে তিনি মামলার আসামি হবেন।’

সাবেক এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিশন কোন বিবেচনায় নোটিশ জারি করলো তা যদি এভাবে ধোঁয়াশায় থাকে তাহলে যেকেউ ভবিষ্যতে এটি চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। আমি দায়িত্বে থাকার সময়েও লিখিতভাবে কমিশনকে এসব বিষয়ে বিধি অনুসরণ করে নোটিশ জারি বা অনুসন্ধান ও মামলার বিষয়ে বলেছি। বারবার বলেছি, কখন কার কাছে কোন প্রক্রিয়ায় নোটিশ যাবে।’

মঈদুল ইসলাম মনে করেন, নোটিশ প্রক্রিয়ায় এসব ভুলভ্রান্তি ও বিধি অনুসরণ না করায় নানারকম সমস্যা হয়ে থাকে। যেসব কর্মকর্তা এ নিয়ে কাজ করেন তারা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/এমএম/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দাম্পত্য কলহের জেরে যমজ ২ শিশুকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেন মা
ইউআইইউ এলাকায় র‍্যাবের অভিযান, বিদেশি পিস্তলসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী মোজাম্মেল গ্রেপ্তার
ভোটের মার্কা থাকছে না শাপলা, ইসির নীতিগত সিদ্ধান্ত
ফের এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা