কলাগাছের সুতায় স্বপ্ন বুনছেন একদল নারী-পুরুষ

আসিম সাঈদ, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা)
 | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:২৬

চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদায় পরিত্যক্ত কলাগাছের বাকল থেকে উৎপন্ন আঁশযুক্ত সুতা দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন এক কৃষি উদ্যোক্তা। ওই কলাগাছের সুতাকে কেন্দ্রকরে গড়ে উঠেছে এক ক্ষুদ্র কুটির শিল্প। দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে কলাগাছের আঁশযুক্ত সুতার তৈরি এসব পণ্য। কলাগাছের সুতায় বানানো পণ্যে যেন স্বপ্ন বুনছেন একদল নারী-পুরুষ।

জানা গেছে, পরিত্যক্ত কলাগাছের বাকল থেকে উৎপন্ন সুতা দিয়ে নৌকা, ওয়াল ম্যাট, ফুলদানি, ক্যাপ, হ্যারিকেন, পাপোশ, টেবিলম্যাট ও বাজারের ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন কৃষি উদ্যোক্তা শাহিন আলী। এরই মধ্যে এসব পণ্য মানুষের নজর কাড়তে শুরু করেছে। পণ্যগুলো বিভিন্ন সরকারি দপ্তরসহ বাসা বাড়িতেও শোভা পাচ্ছে। তৈরি পণ্যগুলো শুধু দেশে নয় বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ওই গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ এ শিল্পে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা চেষ্টা করছেন তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে।

দামুড়হুদা উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের যুবক শাহিন আলী দুই বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ভিডিও দেখে সেখান থেকে সুতা তৈরির বিষয়ে অবগত হন। মোবাইল যোগাযোগ করে কিনে আনেন সুতা তৈরির মেশিন। এরপর গ্রামের কলাক্ষেত থেকে কলার কাঁদি পেড়ে নেওয়ার পর পরিত্যক্ত কলাগাছের বাকল সংগ্রহ করেন তিনি। পরে সেই বাকলগুলো মেশিনে দিয়ে সুতা বের করেন। বেশকিছু দিন সুতা তৈরি করার পর তার মাথায় আসে এ সুতা দিয়ে পণ্য তৈরি করার চিন্তা। পরবর্তীতে কলাগাছের বাকলের তৈরি সুতা পানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি শুরু করেন তিনি। প্রথমে বাড়ির মেয়েদের নিয়ে শুরু করেন পণ্য তৈরি। পরে আস্তে আস্তে গ্রামের অন্য নারী-পুরুষদেরকেও যোগ করা হয় এ পেশায়। বর্তমানে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন ওই গ্রামের শতাধিক নারীকে।

উদ্যোক্তা শাহিন আলী বলেন, আমরা কলাগাছের সুতা থেকে পাপোশ, টেবিলম্যাট, বাজারের ব্যাগ, ওয়ালম্যাট, ভ্যানিটিব্যাগ ও নারী-পুরুষের অলংকারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে থাকি। সরকারি সহায়তা পেলে এই কর্মক্ষেত্র আরো জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হবে।

এ পেশার সাথে জড়িত থাকা কয়েকজন নারী কর্মী জানান, তারা উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিত্যক্ত কলাগাছের সুতা দিয়ে বিভিন্ন রকম পণ্য তৈরি করছেন। এ পণ্যগুলো তৈরি করে অর্থ উপার্জন করছেন। এর ফলে তারা আজ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে দামুড়হুদা উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক নাসরিন খাতুন জানান, গ্রামের অসহায় দরিদ্র নারী এবং ছাত্রীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য এদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। প্রশিক্ষিত হয়ে তারা পরিত্যক্ত কলাগাছ থেকে তৈরি সুতা ব্যবহার করে অত্যন্ত সুন্দর করে নানা রকমের ব্যবহৃত পণ্য বানাচ্ছেন। এই পণ্যগুলো মানসম্মত করে প্রস্তুত করার জন্যই যুব উন্নয়ন এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

জানতে চাইলে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে পাটাচোরা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা শাহিন আলীকে সহায়তা করেছি। তিনি সফল হলে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন সম্ভব হবে। কাজ করে অনেক বেকার নারীরা নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন। যারা এসব পণ্য তৈরি করছেন তাদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। তাছাড়া এসব পণ্য তৈরির প্রধান উপাদান কলাগাছ। তাই কলা চাষে এ উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এলাকার কৃষকদের।

(ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :