সেদিন কী বলেছিলেন এমপি বাহার?
সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের ‘মাদকমুক্ত পূজা’ করার আহ্বান জানিয়ে দেয়া একটি বক্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। এ সময় তিনি দাবি করেন, তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। সংসদ সদস্যের দেয়া সম্পূর্ণ বক্তব্যটি ঢাকা টাইমসের হাতে এসেছে।
বক্তব্যে এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, যে খাদ্য খাওয়ার পর মানুষ মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে, সে খাদ্য কোনো ধর্মে অনুমোদিত না। পূজার সময় আমি (আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার) প্রতিটা মণ্ডপে ঘুরি। আমি না গেলেও আমার টিম যায়। হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন না। আমি ডিসি-এসপিকে বলে দেই, তোমরা বাইরের উপজেলাগুলো দেখো। আমি আমার উপজেলা দেখি। আমরা মাদকমুক্ত পূজা কুমিল্লা থেকে শুরু করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আমরা যেমন প্রথম ‘মাদকের বিরুদ্ধে ফুটবল’ চালু করেছি। তেমনি ‘মাদকমুক্ত পূজা’ চালু করব। আমরা (কুমিল্লা) যেটা চালু করি, অনেকদিন পর মানুষ সেটা চিন্তা করে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পূজা হোক, ধর্মীয় অনুভূতির মাধ্যমে পূজা হোক।
পূজায় মেয়েদের উত্যক্ত করার বিষয়টি নিয়ে এমপি বলেন, মাদকমুক্ত পূজা করতে পারলে অর্ধেক হিন্দু আর অর্ধেক মুসলমান ছেলেমেয়ে লাগবে না। পূজায় সকল হিন্দু মেয়েরা ঘর থেকে বের হয়। মুসলমান ছেলেরা গিয়ে মেয়েদের উত্যক্ত করে। মণ্ডপে মেয়েরা ফ্রি-মুভ (উন্মুক্ত চলাফেরা) করতে না পারলে পূজা করে লাভ কি? এজন্য মাদককে নিয়ন্ত্রণ করেন, দেখবেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হয়ে গেছে।
এ সময় পূজামণ্ডপ কমানোর বিষয়ে পরামর্শ দেন এমপি বাহার। তিনি বলেন, আপনারা সারাবছর একে অন্যের বাড়িতে দাওয়াত খান। কিন্তু পূজা এলেই পুরোনো দ্বন্দ্ব মনে করেন। আলাদা মণ্ডপ তৈরি করেন। পূজার নিরাপত্তায় এত ফোর্স কোথায় পাবো আমরা? এত শক্তি কোথায় পাবো আমরা? সারাবছর সিসি ক্যামেরা দিয়ে মণ্ডপের নিরাপত্তা দিতে হয়। তাই আপনারা স্থায়ী মন্দিরে পূজা করুন।
পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় এমপি বাহার বলেন, দুইবার কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আপনারা অনেকে মণ্ডপে নাচানাচি করেন। মদ খেয়ে রাত ১২টায় ঘুমান। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। আপনারা মদমুক্ত পূজা করেন। তাহলে এত মণ্ডপ হবে না। আপনারা যদি বলেন মণ্ডপে মদ নাই, আমি ধরাবো। প্রত্যেক মণ্ডপে লিখবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনারা রাত ৮টার মধ্যে মূর্তি বিসর্জন করে দিন।
প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের মদমুক্ত পূজা করার আহ্বান জানানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা জানান বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
তারা জানান, মদের জন্য পূজার সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা তার রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে জনসম্মুখে নিঃসন্দেহে ভূলুণ্ঠিত করেছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বাহাউদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়া হলে এর খেসারত দিতে হবে। এছাড়া গত শুক্রবার ঢাকা এবং কুমিল্লায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনটি।
(ঢাকাটাইমস/১৪ অক্টোবর/ইএইচ)