ফেনীর মুহুরী নদীতে বালু লুটের মহোৎসব

আরিফ আজম, ফেনী
| আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৩ | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:২৯

ফেনীর পরশুরাম পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ড খন্দকিয়া ও দুবলার চাঁদ। ওই এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী নদী দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এখানে বালু তোলা হচ্ছে। অথচ এর বিপরীত পাশেই চলছে বালু লুটের মহোৎসব। সেখানে মাটি কেটে বসানো হয়েছে তিনটি ড্রেজার।

এ অবস্থা শুধু পৌর শহরেই নয়, তৎসংলগ্ন মির্জানগর ইউনিয়নের কাউতলী এলাকায় রয়েছে বালু লুটের আরও ভয়াবহ চিত্র। বছরের পর বছর চললেও প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের নজরে পড়েনি সর্বনাশা এ চিত্র।

সোমবার সরেজমিনে কাউতলীতে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে দিনরাত বালুর ট্রাক চলাচল করছে। ফলে বেড়িবাঁধ খানাখন্দকে ভরে গেছে। ওই সড়কের পাশে আলী হোসেন মজুমদার বাড়ির সম্মুখ স্থানসহ আশপাশের কয়েকটি স্পটে নদী থেকে দূরবর্তী স্থানে মাটি কেটে বালুমহাল তৈরি করা হয়েছে। দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি নদী। যার ফলে মুহুরী নদীর চিরচেনা রূপ বদলে গেছে। প্রতিদিন অবৈধভাবে তোলা বালু মিনি ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আলী হোসেন মজুমদার বাড়ি সম্মুখস্থ স্থানে বালুর পাহারাদারের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করেই তিনি বালুর ব্যাপারে জানতে পার্শ্ববর্তী একটি দোকান দেখিয়ে দেন এবং বলেন সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি সার্বক্ষণিক বসা থাকেন। তারা বালু তোলা ও বিক্রির ব্যাপারে বলতে পারবেন। স্থানীয়ভাবে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক একরামুল হক চৌধুরী পিয়াস, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহআলম সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান, তাদের সহযোগী এমাম হোসেন।

দক্ষিণ কাউতলী এলাকার স্থানীয় মেম্বার ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ফজলুল বারী মনছুর জানান, বালু উত্তোলন দীর্ঘদিন চললেও কোনো প্রতিকার নেই। সব বিষয়ে প্রতিবাদও করা যায় না।

পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান লিটন এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

অভিযুক্ত একরামুল হক চৌধুরী পিয়াস জানান, আমার কোনো বালুঘাটও নাই, মেশিনও নাই। পরশুরামে বালুমহালের ইজারাদার শাপলা ট্রেডার্স। তাদের মাধ্যমেই বালু উত্তোলন হচ্ছে। আমি বালু সংক্রান্ত কোনো কাজে জড়িত নই।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং চিংনু মারমা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ইজারার স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বালু তোলা হচ্ছে কি না জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা ঢাকা টাইমসকে বলেন, মুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, অবৈধভাবে বালু তুলতে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে বালুমহাল ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ ব্যাপারে তথ্য পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া রয়েছে।

বাউরখুমা মহালে মানা হচ্ছে না ইজারার শর্ত: পরশুরাম পৌর শহরের বাউরখুমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে রয়েছে বালুমহাল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও পরশুরাম ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর হোসেন চৌধুরী ইজারা নিলেও জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির দেওয়া কোনো শর্ত মানা হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি বছরে পরশুরাম উপজেলার একমাত্র বালুমহাল বাউরখুমায় ৮২ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা নেয় মেসার্স শাপলা ট্রেডার্স। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজারা নেওয়া বালুমহাল থেকে নদীর বাইরে দূরবর্তী স্থানে বসানো হয়েছে তিনটি ড্রেজার। সড়কের পাশে রয়েছে বালুর স্তুপ। এখানে টিলার ওপর একটি টিনের ঘরে দেখা মিললো স্থানীয় এক ব্যক্তির।

তিনি নিজকে কৃষক পরিচয় দিয়ে জানান, প্রতি ফুট বালু ১৬ টাকায় বিক্রি করা হয়। এখানে নদী থেকে অনেকদিন বালু উঠে না। এ কারণে পাশের জায়গা থেকে বালু তুলতে দেখি।

দিনরাত ট্রাক চলায় হুমকির মুখে বেড়িবাঁধ: প্রতিবছর বন্যায় মুহুরী নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। বছর ঘুরলেই এলাকার মানুষের এ দুর্ভোগ নিত্যদিনের। পুনরায় বাঁধ নির্মাণের পর এটি রক্ষায় আর কারো তদারকি থাকে না। পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলী এলাকায় বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে দিনরাত বালু বহনকারী মিনি ট্রাক চলাচল করে। যার ফলে হুমকির মুখে রয়েছে বাঁধ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বালুবাহী ট্রাক চলাচল করার কারণে বেড়িবাঁধ সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। রাস্তা বেহাল হওয়ার কারণে রিকশা, ভ্যান বা অটোরিকশাসহ ছোট কোনো যানই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারছে না।

দক্ষিণ কাউতলী এলাকার স্থানীয় মেম্বার ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ফজলুল বারী মনছুর ঢাকা টাইমসকে জানান, মাঝেমধ্যে স্থানীয় এলাকাবাসী রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর বালু কারবারীরা বেড়িবাঁধের রাস্তা ঠিক করার আশ্বাস দিয়ে পুনরায় চালু করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রতিবছর বন্যা এলে বেড়িবাঁধ নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়। পরশুরামে নতুন যোগ দিয়েছি। কাউতলী এলাকায় বেড়িবাঁধের ওপর ট্রাক চলাচল করে কি না খবর নিতে হবে। সত্যতা পেলে ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা ঢাকা টাইমসকে বলেন, বালুবাহী ট্রাক গ্রামীণ রাস্তায়ও চলার অনুমতি নেই। বেড়িবাঁধের ওপর চলাচলের বিষয়টি কেউ জানায়নি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

ফেনীস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় জনগণকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। খবর পেলে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৬ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :