বিএনপিতে শামা-বাবুলের কপাল খুলবে কবে?
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু এবং জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে প্রায় দুই মাস। তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো চাঁদাবাজি বা দখলদারত্বের অভিযোগ না থাকলেও ২১ আগস্ট ফরিদপুরের নগরকান্দা বাজারে বিএনপির দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে এক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২২ আগস্ট তাদের সদস্যপদ স্থগিত করে বিএনপি।
সংঘর্ষে নিহত কবির ভূঁইয়া (৫৫) উপজেলার ছাগলদি গ্রামের আবুল বসার ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি বিএনপির সমর্থক ছিলেন।
প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা গত ৫ আগস্টের পর কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারলেও উচ্ছৃঙ্খল কিছু নেতাকর্মীর কারণে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে দলটির হাইকমান্ডকে। তবে শামা ও বাবুল প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারা বলছেন, এদের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা কখনই সাংগঠনিক বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। সঠিক তদন্ত হলে বিএনপিতে দ্রুতই তাদের কপাল খুলবে।
এই ঘটনার কয়েকদিন আগেও দখলদারত্বের অভিযোগ এই দুইজনের সুপারিশে কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে ২১ আগস্টের ঘটনায় তাদের দুইজনই দলের সদস্যপদ হারান।
নেতারা বলছেন, পদ স্থগিত হওয়া এই দুজনই বিএনপিতে পরিচিত মুখ। দলটির রাজনীতিতে রয়েছে অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষা। শামা ওবায়েদ বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব একেএম ওবায়দুর রহমানের কন্যা। দলটির বৈদেশিক কমিটির সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকায় তাকে দেখা গেছে সবসময়। তিনবার ধানের শীষ নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। এছাড়াও বিএনপি করার অপরাধে তৎকালীন স্বৈরশাসকের দোসররা তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টাও করেছেন। টেলিভিশন টকশোগুলোতেও বিএনপির পক্ষে ছিল তার সরব উপস্থিতি।
অন্যদিকে শহিদুল ইসলাম বাবুল ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও ছিলেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন করায় তার বিরুদ্ধে ১২৮টি মামলা দায়ের করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে একটি মামলায় সাজাও হয়েছে। রাজপথে তার সাহসী ভূমিকার কারণে তাকে কৃষক দলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক করে বিএনপি।
শামা ওবায়েদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ফরিদপুর তথা নগরকান্দা শুধু আমার জন্মস্থানই নয়, এটি আমার প্রাণের এলাকা। আমার বাবারও জন্মস্থান। আমার বাবা জীবিত থাকা অবস্থা থেকেই আমি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি এলাকার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সংগঠনকে তৃণমূলে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া বা ইউটিউবে আমি বিশ্বাস করি না। আমি কাজে বিশ্বাসী। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমাদের অনুপ্রবেশকারীদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। সেদিনও পতিত স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীরাই আমাদের সাথে মিশে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে বলে আমি মনে করি। আমি দলের প্রতি আস্থাশীল। দল অতীত বিবেচনা করে আমাদের বিষয়ে একটি পজিটিভ সিদ্ধান্ত নেবে বলে বিশ্বাস করি।
শহিদুল ইসলাম বাবুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমার ৩৮ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কখনো কালো দাগ লাগেনি। দলের নিয়ম ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে কাজ করেছি। কোনোদিন শোকজ খাইনি। তবে ২১ আগস্ট যে ঘটনাটি ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এটি আমার জীবনে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে থাকবে। আমি বিষয়টি নিয়ে কাউকে দায়ী করছি না। এতে নিশ্চয়ই আমাদের অসতর্কতা ছিল।
তিনি বলেন, সেদিনের ঘটনাটি মূলত আওয়ামী লীগের কিছু অনুপ্রবেশকারী ঘটিয়েছিল। আমাদের মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু কর্মী ঢুকে গিয়েছিল। এ বিষয়ে অবশ্যই আমাদের গাফিলতি ছিল, যা অস্বীকার করার কিছু নেই। তাই সকলকেই অনুপ্রবেশকারী থেকে সাবধান থাকতে হবে।
বাবুল বলেন, দল আমাদের দীর্ঘদিনের ত্যাগ, অবদান এবং শ্রমের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে।
এ বিষয়ে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খোন্দকার মাশুকুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, তারা দলের পরীক্ষিত সৈনিক এবং নেতা। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে "ভাবিয়ে করিও কাজ, করিয়ে ভাবিও না"। আমি আশা করি তারা অতীত ভুল বুঝে সহসাই আমাদের সাথে কাজ করবেন এবং তাদের অতীত ত্যাগ বিশ্লেষণ করে দল তাদের ফিরিয়ে আনবে।
শামা এবং বাবুলের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, তাদেরও উচিত ছিল সব কিছু লক্ষ্য করে কাজ করা। তাদের ভুলের কারণে একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তবে দলের প্রতি শামা ওবায়েদ এবং বাবুলের ত্যাগ এবং অবদান অস্বীকার করা যাবে না। অপেক্ষা করতে হবে। সময়ই সব ঠিক করে দেবে।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদাররেছ আলী ঈসা ঢাকা টাইমসকে বলেন, এরা দুইজনই দলের ত্যাগী এবং দায়িত্বশীল নেতা। সেদিন (২১ আগস্ট) যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেটি মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভুল বোঝাবুঝি। তাদের ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়েছেন এই দুই সিনিয়র নেতা। আমি আশা করব বিএনপির হাইকমান্ড তাদের সদস্যপদ ফিরিয়ে দিয়ে আবারও সক্রিয় রাজনীতি করার সুযোগ করে দেবে।
এর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সরকারপতনের পর গত ১১ আগস্ট বরিশালে পুকুর দখলের অভিযোগ উঠলে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়।
একইভাবে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পদাবনতি ঘটিয়ে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/জেবি/ডিএম)