স্থানীয় নির্বাচন আগে দেওয়া মানে রাজনীতিবিদদের অবিশ্বাস করা: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দেওয়া মানে হলো রাজনীতিবিদদের অবিশ্বাস করা। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার কারণটা কি আমি জানি না। এই কথাগুলো সামনে আসছে যে এই ধরনের নাকি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমি আগেও বলেছি আপনারা কি তাহলে রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে, যাদেরকে দমন প্রেরণ করেছে শেখ হাসিনা তাদের প্রতি বিশ্বাস নেই।
তিনি বলেন, প্রথমে আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা। তার জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে দিতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ে সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক সরকারের অধীনেও যে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এটা দেখার জন্য তো আগে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে।
শনিবার মেঘনা উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আজকে যদি শেখ হাসিনার পতন না হতো, শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থেকে যেতেন, তাহলে আমি সেলিম ভূঁইয়া সহ এখানে আমরা যারা যারা আছি প্রত্যেকের ফাঁসি দিয়ে দিত শেখ হাসিনা। কারণ এই মহিলার তো কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই। এই মহিলা তার গদি তার সিংহাসন রক্ষা করার জন্য কে বাঁচল কে মরল কখনো তিনি তার গ্রাহ্য করেনি। যে মহিলা তার ক্ষমতায় থাকার জন্য পাঁচ বছরের শিশু আহাদ কে হত্যা করতে পারে, যে মহিলা গাজীপুরের চৌদ্দ বছরের একজন শিশুর গায়ে চল্লিশটি গুলি করতে পারে সেই মহিলা টিকে থাকলে তো আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার কথা নয়, আমাদেরকেও সে ফাঁসি দিয়ে দিত।
রিজভী বলেন, শিশু বাচ্চারাসহ তাদের অভিভাবকরা যখন রাস্তায় নেমে এসেছে, তারা একের পর এক অকাতরে জীবন দিচ্ছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ নিজের শার্টের বোতাম খুলে পুলিশের গুলিকে যখন বরণ করে নিয়েছে, তখন সারা বাংলাদেশের মানুষের রক্তের লৌহ কণিকা শ্বেত কণিকা জেগে উঠেছে। এই এক রাক্ষসী এক দানব টিকে থাকলে বাংলাদেশর স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের ইজ্জত সম্মান কিছুই থাকত না। ওই মাসুম বাচ্চারা ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণেই আজকে আমরা মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। কিছুটা স্বস্তিতে জীবন যাপন করতে পারছি। গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, এখন আমাদেরকে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং চর্চা করার জন্য অনেক কাজ করতে হবে। গড়িমসি করে গণতন্ত্রের মূল কাজগুলো বন্ধ রাখা চলবে না। এদেশের মানুষ বিগত ১৬-১৭ বছর ভোট দিতে পারেনি এটা গোটা বিশ্ব জানে। কারণ হাসিনা জানতো যে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশের মানুষ জানে কাকে ভোট দিতে হয়, সেই কারণে জনগণের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে শেখ হাসিনা একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেননি। তিনি দিনের ভোট রাতে করেছেন এবং ভোটারদেরকে ভয় দেখানোর জন্য মাইকিং করেছেন। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে তারা বলেছেন আপনারা ভোট দিতে যাবেন না।
তিনি বলেন, আমরা ২০১৪ সালে দেখেছিলাম ভোটকেন্দ্রে চতুষ্পদ জন্তু ছাড়া আর কেউ ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি যখন অংশগ্রহণ করল শেখ হাসিনা যে আদৌও অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করবে না তার প্রমাণ তো আপনারা পেয়েছেন। ৩০-৪০ জন বিএনপির প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মামলা দিয়েছেন ঢালাওভাবে এটা কি নির্বাচন ছিল? এটা ছিল নির্বাচন নিয়ে একটা ছিনিমিনি খেলা। সেই ছিনিমিনি খেলা আমরা শেখ হাসিনার সময় দেখেছি। জনগণ কিন্তু ভোট দিতে পারেনি। জনগণের ক্ষমতা শেখ হাসিনা কেড়ে নিয়েছিলেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তিনি মনে করতেন এই জনগণই তার শত্রু পক্ষ। সুতরাং এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে সমস্ত গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি এই সরকার জনগণের ক্ষমতা আগে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে রাজনৈতিক দল এলাকায় এলাকায় প্রার্থী দিবে জনগণ তাদেরকে ভোট দিবে। যে দল বেশি আসনে জয়লাভ করবে তারা সরকার গঠন করবে। এটা শেখ হাসিনার ১৭ বছর হতে দেয়নি। জনগণের কাছে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা ড. ইউনূস সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, মোস্তাক আহমেদ, আকতার হোসেন, তারেক মুন্সি, ডা. জাহিদুল কবির, মেহেদী হাসান পলাশ,আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন