ইমামের রাজকীয় বিদায়, ঘোড়ার গাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হলো বাড়ি, পেলেন ৯ লাখ টাকা

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৯| আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:০৪
অ- অ+

এ কোনো সামরিক-বেসামরিক বা উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা নয় বা মন্ত্রী-এমপির রাজকীয় বিদায় নয়। এটি হলো ধর্মীয় আনুগত্যে বিশ্বাসী নিভৃত পল্লী এলাকার একটি মসজিদের ইমামের অবসরকালীন বিদায় অনুষ্ঠান। প্রায় তিন যুগ ইমামতি শেষে ইমামকে অবসরকালীন রাজকীয় বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছেন গ্রামবাসী। বিদায়বেলায় ইমামকে ফুল ছিটিয়ে এবং ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা দেন তারা। সঙ্গে এককালীন পেনশন হিসেবে দেওয়া হয় নয় লাখ টাকা। পরে ঘোড়ার গাড়িতে করে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয় বাড়িতে।

ইমামের এই রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানটি একনজর দেখতে মসজিদের সামনে ভিড় করেন গ্রামবাসী। মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের নতুন কহেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে এই রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সম্মানিত করতে ঘোড়ার গাড়ি বহরের সঙ্গে সঙ্গী হয়েছে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল। নতুন কহেলা জামে মসজিদ কমিটি এবং গ্রামবাসী এই রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

রাজকীয় বিদায় নেওয়া ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান খান উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের মৃত কুরবান আলীর ছেলে।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালে যুবক বয়সে ৬০০ টাকা বেতনে নতুন কহেলা জামে মসজিদে ইমাম হিসেবে যোগদান করেন মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান খান। বিদায়ের প্রাক্কালে ইমামের বেতন হয় ১৭ হাজার পাঁচশ টাকা।

মোহাম্মদ শাহজাহান খান ঢাকার লালবাগের একটি স্বনামধন্য মাদ্রাসা থেকে মাওলানা পাস করেন। তার মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী সে সময়ে ৬০০ টাকা বেতন ধার্য করা হয়। তার এই দীর্ঘ ইমামতি পেশায় থাকাকালীন এলাকায় ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি অসংখ্য মানুষকে কুরআনের শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি জানাজা পড়িয়েছেন হাজারের অধিক মানুষের। গ্রামের মানুষ নানা ধরনের উপহার দিয়েও তাকে বিদায় জানান। বিদায়ী সফর সঙ্গী হয়ে এই গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ সাত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইমামের নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন। এমন বিদায় জানাতে পেরে খুশি নতুন কহেলা গ্রামবাসীও। ইমামের দীর্ঘ দিনের স্মৃতি তার হৃদয়কে ব্যথিত করবে বলেও জানান তারা।

এমন ব্যতিক্রমী বিদায়ে এলাকাবাসীর ভালোবাসার কাছে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান খান। ২০২৪ সালে গ্রামের পক্ষ থেকে ওমরা পালন করতে পাঠানো হয়েছিল তাকে। ভালো এবং জানাশোনা একজন ইমামকে বিদায় জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত পুরো গ্রামবাসী। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো পেনশন দিতে পারায় খুশি স্থানীয়রা।

নতুন কহেলা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাশেম খান বলেন, “ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান তার চাকরি জীবনে গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আমরা গ্রামবাসী একজন উঁচুমানের ইমামকে বিদায় দিয়ে ব্যথিত।”

বিদায়ী ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান বলেন, “আমি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষের জানাজা পড়িয়েছি। ৬০০ জনকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে আমি কাজগুলো করতে পেরে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার বিদায়বেলায় এলাকার মানুষ এত বড় আয়োজন করেছে তার জন্য এলাকার মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”

নতুন কহেলা জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সেলিম খান বলেন, “এমন বিদায় সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি এলাকার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন।”

ইমামের পরবর্তী জীবন ভালো কাটতে সরকারি চাকরির মতো পেনশন দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/০২এপ্রিল/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা