প্রবাসী বাংলাদেশির দেখা মার্কিন নির্বাচন
আমেরিকানরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন উৎসবমুখর নির্বাচন নাকি খুব কমই হয়েছে। অবশ্য গত ক'দিনে, বিশেষত আজ ভোটের দিন, সারাদিন যে পরিমাণ উত্তেজনা আর উৎকণ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছিল, সেটা ছিল ব্যাখ্যার অতীত।
এই ক'দিনে আমেরিকার নির্বাচনকে ঘীরে যে কয়েকটি ব্যাপার প্রকটভাবে সামনে এসেছে-
১. নিউইয়র্ক প্রবাসী মুসলমানদের অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিলো ভোটটা হচ্ছে মুসলিম এবং অমুসলিম প্রার্থীদের মধ্যে! মোটামুটি সবাই ধরেই নিয়েছেন, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে মুসলমানরা সাগরে ভাসবে! হিলারি নির্বাচিত হলে মুসলমানরা সপ্তম আকাশে চষে বেড়াবে! কারো কারো অবস্থায় মনেহল, হিলারি নির্বাচিত হলে আমেরিকায় বুঝি ইসলামি হুকুমতই কায়েম হয়ে যাবে!! আমেরিকান কনস্টিটিউশন যারা পড়েন, এখানকার উচ্চকক্ষ-নিম্নকক্ষ ক্ষমতা যারা বুঝেন, এখানকার আদালতের ক্ষমতা যারা জানেন, তাঁরা জানেন অভ্যন্তরীণ বিষয়াশয়ে রাষ্ট্রপতির অনেক ক্ষমতা হলেও তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন না। সুতরাং মনে হয় না এতটা নিশ্চিত হয়ে ভাবার যুক্তি ছিল। কথাবার্তায় বিপরীত হলেও কে বলবে ট্রাম্প মুসলমান বান্ধব হয়েও তো উঠতে পারেন।
২. আমেরিকা প্রবাসী বাঙালিদের ধারণা, নির্বাচনটা হচ্ছে বাংলাদেশি প্রার্থী এবং বিদেশির মধ্যে। ধরে নেয়া হয় ডেমোক্রেটরা ইমিগ্রেন্ট বান্ধব। সেই অর্থে অভিবাসীরা, বিশেষত বাংলাদেশিরা মনে করছেন হিলারি ক্লিনটনই একমাত্র ভরসা। আদতে বিপরীতও হতে পারে। দেখা যেতে পারে ইমিগ্রেন্টদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প আশির্বাদও হয়ে উঠতে পারেন। হতে পারে নির্বাচন-পূর্ব কঠিন কথাবার্তা বৈতরনী পাড়ি দেয়ার কৌশলও হয়ে থাকতে পারে। অন্তত আশাবাদী হতে দোষ কী!
৩. সেই চিরাচরিত আওয়ামী লীগ-বিএনপি মার্কা সনাতন সমর্থকদের ভাবসাবে মনে হলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেত্রী হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে। আদু ভাইরা ভুলে যান তাঁরা বাংলাদেশি কিন্তু আমেরিকানরা ভুলে না যে, তাঁরা আমেরিকান। আমেরিকানদের জন্ম হয়নি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ-বিএনপি নিয়ে ভেবে মাথা নষ্ট করবার জন্য। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ভাবনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ফ্যাক্টর না। ফ্যাক্টর হলো আমেরিকার স্বার্থ। আর দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দলের স্বার্থে আত্মবিকৃতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একই মুদ্রার দুই পীঠ। সুতরাং আমেরিকার জন্য আওয়ামী লীগ যা, বিএনপিও তা। সেটা হিলারি প্রেসিডেন্ট হলেও, ট্রাম্প হলেও।
লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসী