‘হর্ন হুদাই, বাজায় ভোদাই’
চালক ভাই, ভাবার একটু সময় হবে? খুব বেশি না। কয়েক মিনিট। আচ্ছা ভাবতে হবে না। শুনুন। আপনার কানে যদি একমুঠো পেরেক ঠেসেঠেসে ভরে দেয়া হয় কেমন লাগবে? যদি একটা একটা করে গেঁথে দেয়া হয় কানের ভেতরে, যেটা পৌঁছে যাবে কানের পর্দা ভেদ করে, তখন? অনুভব করুন সুঁচালো একটা পেরেকের মাথা ঢুকে যাচ্ছে কানের ছিদ্র দিয়ে। খোঁচায় খোঁচায় রক্তাক্ত হচ্ছেন আপনি। দরদর করে বেয়ে পড়ছে রক্ত। কপাল কুঁচকে ফেললেন যে? গা শিউরে উঠেছে নিশ্চয়ই?
একবার কি ভেবে দেখেছেন, কারণে-অকারণে আপনার বাজানো হাইড্রোলিক হর্ন কীভাবে মানুষের শ্রবণশক্তি কেড়ে নিচ্ছে? এভাবেই পেরেকের মতো বিঁধছে কানে। দিন দিন বধির হয়ে যাচ্ছে নগরীর মানুষ। নিরব শ্রবণ ঘাতক আপনি যখন যানজটে বসে থাকেন, অকারণে হর্ন বাজান-তখন একটিবার কি ভেবে দেখেন? আপনি নিজেও দেখছেন সামনে যাওয়ার মত জায়গা নেই। সারির পর সারি গাড়ি। তারপরও কেন? হর্ন কি আপনাকে যানজট ঠেলে নিয়ে যাবে? নাকি যানের জট খুলবে?
আপনি বলবেন আপনার একার হর্নে কী আসে যায়। এই একজন একজন করে যখন শতজন হয়, আর সবাই মিলে একসঙ্গে বাজাতে থাকেন হর্ন-সেই সময়টার কথা একবার চিন্তা করার সুযোগ আপনাদের হয় না। আপনার পেছনে আরাম করে গা এলিয়ে যে সাহেব বসে থাকেন, তার সামনে যখন আপনি ঘাতকের মতো হর্ন বাজাচ্ছেন তখন সেও নির্লিপ্ত। আপনার অপকর্মকে তিনি প্রশ্রয় দেন। বিবেক বলতে যেই বিষয়টি মানুষকে মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে টিকিয়ে রেখেছে সেটাও তখন কর্পূরের মতো উবে যায়। তাই কি?
চালকের আসনে বসে গেলেই নিজেকে চালক ভাবা ঠিক না। মনে রাখতে হবে, আপনি একজন মানুষ। একজন বাবা। কিংবা একজন ভাই। বা কারো ছেলে। আপনার এই হর্নের কারণে ক্ষতি হচ্ছে আপনার প্রিয়জনের। মায়ের সঙ্গে হাত ধরে যে শিশুটি স্কুলে যাচ্ছে প্রতিদিন তারও। ওই শিশুটি তো আপনারও হতে পারে, যে কিনা হর্ন শুনে দুহাতে কান চেপে ধরে?
২০০৭ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর রোড, গুলশান, ধানমন্ডি এলাকাসহ বেশ কিছু সড়কে হর্ন বাজানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছিল। এই আদেশ হওয়ার পর কয়েকদিন অভিযানে জরিমানা করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও দিতো বাহিনীটি। কিন্তু এখন বন্ধ হয়ে গেছে সব অভিযান। আসলে এখনকার পুলিশ কর্মকর্তারা সেই আদেশের কথা মনেই করতে পারছেন না।
হর্ন থাকলেই বাজাতে হবে, কেন? প্রয়োজন হতে পারে। তখন পরিমিত পর্যায়ে বাজান। অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনি একা। আপনার মতো এরকম এক-এক করে একসময় সবাই সচেতন হবেন। যানজটে বসে আপনার যে চালক ভাইটি অনবরত, অহেতুক হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছেন, গ্লাসটি নামিয়ে তাকে একবার বলে দেখুন, ভাই অযথা হর্ন না বাজালে কী এমন ক্ষতি? কথাটা সহজভাবে হয়তো সে নেবে না। তাতে কি আপনি তো তাকে ভাবনার খোরাক দিলেন। সময় পেলে সে আপনার কথাটা তার মাথায় ঘুরবে। সে যদি একটু ঠা-া মাথায় চিন্তা করে তবে নিশ্চয়ই বুঝবে আপনি অহেতুক কিছু বলেননি। যাত্রী, পথচারী কিংবা যে সাহেব বসে থাকেন শীতাতপ বাহনে-তারও চেষ্টা করতে দোষ কী? অপঅভ্যাসটা আমাদেরই গড়া। নির্মূল করতে হবে আমাদেরই। সচেতনতার বিকল্প কী? সেদিন একটা সচেতনতামূলক প্রচারণা দেখে মুখটিপে হাসলাম। আইডিয়া বেশ। সাদার মাঝে নীল হরফে লেখা- ‘হর্ন হুদাই, বাজায় ভোদাই।’ এই অকারণে হর্নদাতা চালক-আপনি তাহলে কী?
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ : সাংবাদিক
ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এইচএফ/এমএইচ