‘পরীক্ষা’ না ‘অপেক্ষা’ বুঝতেই সময়ক্ষেপণ

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৩১

ঠাণ্ডা-জ্বর গলা ব্যথা নিয়ে কদিন ধরে ভুগছিলেন রিজিয়া সুলতানা। করোনাভাইরাসের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে এসব উপসর্গ। তবুও করোনা টেস্ট করাবেন কি-না সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রিজিয়া। একপর্যায়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে করোনা টেস্ট করার পর পজিটিভ আসে। এরপর চিকিৎসার পাশাপাশি বাসায় আইসোলেশনে যান এই কর্মজীবি নারী।

তার মাধ্যমে স্বামী কিংবা সন্তানদের কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছে কি-না সন্দেহ থেকে সবাইকে করোনা টেস্টও করান রিজিয়া। তিনি এখন মানছেন, উপসর্গ দেখা যাওয়ার পরপরই টেস্ট করলে তার ভোগান্তি এতটা হতো না। করোনা পজিটিভ আসার পর তাকে মনোযাতনায় ভুগতে হয়েছে বেশি।

রিজিয়া সুলতানার মতো অনেকেই করোনা উপসর্গ দেখা যাওয়ার পরও পরীক্ষা করাতে সময় নেন। তারা আগে বোঝার চেষ্টা করছেন করোনা নাকি ঋতু বদলের কালে ঠাণ্ডাজনিত অসুখ। আর এটি করতে গিয়ে সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে গেল মার্চে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর উপসর্গ দেখা দিলেই টেস্ট করতে ছুটতেন রোগীরা। তবে ছয় মাসের মধ্যে করোনা টেস্ট নিয়ে মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। আর এখানেই বড় বিপদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানার সঙ্গে উপসর্গ দেখা দিলেই টেস্ট করাতে হবে। আর এখন করোনা টেস্ট করাও আগের চেয়ে সহজ। এরপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা না আসাটা দুঃখজনক।

এদিকে গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন করোনা শনাক্ত ও পরীক্ষার হারও অনেক কমে গেছে। মানুষের জীবনযাপন প্রায় স্বাভাবিক হতে শুরু করায় করোনা নিয়ে মানুষের মাঝেও করোনা সচেতনতায় শৈথিল্য এসেছে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও স্বাভাবিক হচ্ছে। কিন্তু এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। সম্প্রতি সরকারপ্রধানও শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে সবাইকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি যথাযথ স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মানার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত সাতদিনের নমুনা পরীক্ষার চিত্র

গত ২১ সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪টি পরীক্ষাগারে ১২ হাজার ৯৬৭টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩টি। ২২ সেপ্টেম্বর ১০২টি পরীক্ষাগারে ১৪ হাজার ২৪৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ১৬৪টি। ২৩ সেপ্টেম্বর ১০২টি পরীক্ষাগারে ১৩ হাজার ৯৭৭টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ১৫০টি।

২৪ সেপ্টেম্বর ১০৩টি পরীক্ষাগারে ১২ হাজার ৩৮২টি নমুনা সংগ্রহ ও ১২ হাজার ৯০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর ১০৩টি পরীক্ষাগারে ১২ হাজার ৫৯৩টি নমুনা সংগ্রহ ও ১২ হাজার ৪৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর ১০৪টি পরীক্ষাগারে ১০ হাজার ৬৮০টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৭৬৫টি। ২৭ সেপ্টেম্বর ১০৫টি পরীক্ষাগারে ১০ হাজার ২৬১টি নমুনা সংগ্রহ ও ১০ হাজার ৬৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর অভাব

এদিকে পর্যাপ্ত রোগী না পাওয়ায় কোভিড হাসপাতালগুলোও একের পর এক বন্ধ হতে চলেছে। করোনা পরীক্ষার হার কমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে। জুনের দিকে কোভিয হাসপাতালগুলোর ৩০ থেকে ৪৫ ভাগ বেড রোগী ভর্তি ছিল। আর এখন সেই সংখ্যা কমে ২০ শতাংশেরও নিচে নেমেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, করোনা আক্রমণের শুরুর দিকে সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য জুন মাসে যতগুলো বেড ছিল এর মধ্যে ৩০ থেকে ৪৫ ভাগ বেড ভর্তি ছিল। আর এখন এটা কমে ২০ ভাগের মতো আছে। শুরু দিকে হাসপাতলে মোট ভর্তি রোগীর হার ১৫ শতাংশের মতো ছিল। আর এখন তা কমে পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, ‘দেশে কোভিড আসার পর ঢাকা মহানগরে করোনা চিকিৎসায় ২১টি হাসপাতাল ছিল। এর মধ্যে ৫টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে। এগুলো হলো ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, মিরপুর লালকুঠি হাসপাতাল এবং বসুন্ধরা কোভিড-১৯ হাসপাতাল,হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল। এছাড়াও ১২টি হাসপাতালে কোভিড-১৯ সেবা কার্যক্রম বাতিলের পরিকল্পনা করেছে।’ তবে এসব হাসপাতালে এখন সাধারণ সেবা চালু থাকবে বলে জানান তিনি।

রোগী বাড়লে বন্ধ কোভিড ডেটিকেটেড হাসপাতাল আবার চালু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দেশে প্রথম দিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অতিমাত্রায় বাড়ায় যে পরিমাণ রোগী ছিলো এখন আর সেটা নেই। ফলে হাসপাতালে ভর্তির রেটও অনেকাংশেই কমে গেছে। কারণ এখন অনেকেই বাড়িতে বসেই আইসোলেশনে থেকে টেলিমিডিসিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করছে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সিরিয়াসলি অ্যাটাক না হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি জানান, একারণে হাসপাতালে করোনা রোগীর ভর্তির রেট ৫ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। রোগীর সংখ্যা কমায় এখন যেহেতু বেডগুলো খালি পড়ে আছে তাই এই হাসপাতালগুলোকে নন-কোভিড করার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। যাতে অন্যান্য যে রোগগুলো অর্থাৎ কোভিডকালীন সময়ের আগে যে ধরণের রোগ ছিলো সেই রোগে আক্রান্তদের সেবা দেয়ার ব্যবস্থাপনাকে পুনঃনির্মান করতেই এ ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তবে আসন্ন শীতের সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বা দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে এমন আশংকা থেকে ভাইরাসটি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় বন্ধ করে দেওয়া হাসপাতাল পুনরায় কোভিড ডেডিকেডেট করা যেতে পারে উল্লেখ করে ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এ ধারণাটা তৈরি হচ্ছে যে শীতে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। যদি বেড়েই যায় তাহলেও অসুবিধা নেই। আমাদের সব কিছুই প্রস্তুত আছে। তখন সেই হাসপাতালগুলোকে নন-কোভিড থেকে কোভিড ডেডিকেটেড করতে পারবো।’

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :