ইভ্যালিতে চাকরি করে কোটিপতি, চলেন ব্যক্তিগত গাড়িতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:৫৫ | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:২১

আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে পিআরও বা জনসংযোগ কর্মকর্তা সোলাইমান হোসাইন শাওন। কদিন আগেও যিনি স্বল্প দামের মোটরসাইকেল ও গণপরিবহনে চলতেন, ইভ্যালিতে চাকরির সুবাদে রাতারাতি অর্থনৈতিকভাবে ফুলতে লাগলেন। এখন চড়েন ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে। নামে-বেনামে অর্জন করেছেন বিপুল টাকা।

তার বিরুদ্ধে গ্রাহক ও ইভ্যালির স্টাফদের অভিযোগ, তিনি ইভ্যালি থেকে অনৈতিক উপায়ে বিপুল টাকা উপার্জন করেছেন।

জানা গেছে, অল্প কদিনেই কোটিপতি বনে যাওয়া শাওন নিজের নামে বা আত্মীয় স্বজনের নামে ইভ্যালির বিভিন্ন অফারে নামিদামি পণ্য অর্ডার করতেন। পরে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতনদের তদবির করে পণ্য দ্রূত ডেলিভারি নিয়ে সেসব রিসেলিং করতেন। এছাড়াও মোটা কমিশনের বিনিময়ে তিনি গ্রাহকের বড় অংকের পণ্যের ডেলিভারি দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। এভাবেই অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্জন করেন বিপুল পরিমাণ টাকা। যেখানে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও সাধারণ গ্রাহক পণ্য ডেলিভারি পেতেন না সেখানে তার এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ ছিলেন সবাই।

র‌্যাবের অভিযানে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল গ্রেপ্তার হচ্ছেন- এমনটি আঁচ করতে পেরে আত্মগোপনে চলে যান শাওন। নিজের গ্রেপ্তার এড়াতে বন্ধ করে দেন ব্যক্তিগত ও অফিসের মোবাইল ফোন। কদিন ধরে নিজের ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটিও অন্য এক আত্মীয়র বাড়িতে রেখেছেন। আবার অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ নিজের স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির সাবেক একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে ঢাকাটাইমসকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, বৃহস্পতিবার ভোরে ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়াও বেশ কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন একজন ভুক্তভোগী। র‌্যাব এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য এসেছে। এই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির অন্যদেরও গ্রেপ্তারে বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দারা কাজ করছে।

আজ দুপুরে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা দল ও র‌্যাব-২ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাড়িতে অভিযান চালায়। প্রায় দুই ঘণ্টার অভিযান শেষে গুলশান থানায় একজন ভুক্তভোগীর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রীকে র‌্যাব সদরদপ্তরে নেওয়া হয়। সেখানেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। শুক্রবার সকালে তাদেরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হবে।

ইভ্যালির সাবেক এক কর্মী জানান, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ২০১৮ সালে তথ্য প্রযুক্তি বিটে কাজ শুরু করেন শাওন। স্বনামধন্য একটি অনলাইন গণমাধ্যমে কাজের সুযোগে পরিচয় হয় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেলের সঙ্গে। এরপর যোগদেন ইভ্যালির 'জনসংযোগ বিভাগে'। ইভ্যালিকে রক্ষা করে অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রকাশ করাই ছিল তার কাজ। এভাবে প্রতিষ্ঠানেও তিনি আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাতিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অল্পদিনেই কিনে ফেলেছেন ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার। স্ত্রী ও স্বজনদের নামে বেনামে করেছেন সম্পদ।'

তিনি আরও জানান, 'বেশিরভাগ সময় ইভ্যালি ছাড়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করত। এই সুযোগ কাজে লাগাতেন শাওন। বিশেষ করে নিজের বা স্বজনদের অ্যাকাউন্ট থেকে 'সাইক্লোন', টি১০, টি৩ এসব অফারে নামিদামি পণ্যের অর্ডার করে দ্রুত ডেলিভারি নিয়ে রিসেলিং করে ও কমিশন খেয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির আরও অনেকে তার চক্রে আছে।

এদিকে নাম করা গণমাধ্যমে চাকরিরত অবস্থায় ইভ্যালির মতো সমালোচিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে বিব্রত তার সহকর্মীরাও। নাম প্রকাশ না শর্তে প্রতিষ্ঠানটির অনেকে বলেন, 'আমরা তার (শাওন) এমন কাজ কখনও সাপোর্ট করিনি। কারণ ইভ্যালি একটি সমালোচিত প্রতিষ্ঠান। যতটুকু জেনেছি দ্রূতই তার বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

গুলশান থানা সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় অনেককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যারাই প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করে সাধারণ গ্রাহককে ঠকিয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে একাধিকবার শাওনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিনিয়োগকারীদের আন্দোলন:

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন গ্রেপ্তারের পর তার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে ভুক্তভোগীরা। যারা প্রতিষ্ঠানটিতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন। প্রায় ৫০ জন বিনিয়োগকারী বিক্ষোভ সেখানে অবস্থান করছেন। তারা বলছেন, এখানে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের একেকজন প্রায় ৮ থেকে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটিতে। জানা গেছে, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দেনার পরিমাণ ৪০৩ কোটি টাকা। আর প্রতিষ্ঠানটির চলতি সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। ৩৩৮ কোটি টাকাই কোম্পানির কাছে নেই।

ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

পুলিশের সোর্স হত্যা: পলাতক দুই আসামি গ্রেপ্তার

ডিজিটাল হুন্ডিতে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

ইউটিউবে জাল টাকা তৈরি শেখা, রাজমিস্ত্রি-জেলেকে নিয়ে গড়ে তোলা হয় চক্র

দুর্নীতি মামলায় মেজর মান্নান কারাগারে

ভুয়া নিয়োগপত্রে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

শিশু বিক্রির অর্ডার নিয়ে অপহরণ করতেন তারা

দুর্নীতির অভিযোগে রুয়েটের সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা ​​​​

যাবজ্জীবন সাজা থেকে বাঁচতে ২২ বছর ধরে তরমুজ ও ওষুধ বিক্রেতা, অতঃপর...

বিমানবন্দরে ডলার কারসাজি, ১৯ ব্যাংকারসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধর করে ছিনতাইয়ের অভিযোগ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :