গরুর দুধ কাঁচা খেলে যেসব অসুখ হতে পারে

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:২০ | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:২৫

দুধকে আদর্শ খাবার বলা হয়। কারণ খাদ্যের ছয়টি পুষ্টি উপাদান কার্বোহাইড্রেট (শর্করা), প্রোটিন (আমিষ), ফ্যাট (স্নেহ), মিনারেল (খনিজ উপাদান), ভিটামিন ও পানি-সবই দুধে থাকে। বাড়িতে দুধ এলে প্রথমেই আমরা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখি। সেটা কাঁচা দুধ হোক বা প্যাকেটের। কাঁচা দুধে নানা রকম ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকে। ফুটিয়ে নিলে সেগুলো মরে যায় এবং হজমের গোলমাল কম হয়। ফোটানো দুধ একটু বেশি দিন ভাল থাকে। ফ্রিজে রেখে আপনি অনায়াশে তিন থেকে চার দিন চালিয়ে নিতে পারবেন।

তবে গরুর দুধে বিপদ! গল্প নয় সত্যি। সঠিকভাবে গরুর দুধ জ্বাল না দিলে অসুখ বাসা বাঁধছে শরীরে। সে অসুখের নাম ব্রুসেলোসিস।

সম্প্রতি ভারতসহ কয়েকটি দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগের অনেকের উপসর্গ ছিল এক। ধুম জ্বর। সেখান থেকে গা হাত পায়ে অসহ্য ব্যথা। সেরোলজি টেস্ট করাতেই ধরা পড়ল সত্যিটা। ব্রুসেলোসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা। করোনা আবহে ব্রুসেলোসিসের বাড়বাড়ন্তে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।

গ্রামে গবাদি পশুর সংস্পর্শে এসেছে এমন কারও টানা ৫/৭ দিন জ্বর থাকলে টেস্ট করাতে হবে। ব্রুসেলোসিস ধরা পড়লেই চালু করতে হবে ডক্সিসাইক্লিন ক্যাপসুল। দিতে হবে জেন্টামাইসিন ইঞ্জেকশন। অসুখ সনাক্ত করতে লাং ফাংশন টেস্ট, ইউরিয়া, এবং ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকের মতে, ব্রুসেলোসিস ব্যাকটিরিয়া জনিত রোগ। এই ব্যাকটিরিয়া কোনও প্রাণীকে সংক্রমিত করলে তা সেই প্রাণীর শরীরে থাকে। ওই প্রাণীর মাংস অথবা দুধ গ্রহণ করলে তা মানুষের দেহেও সংক্রমিত হতে পারে। সে কারণেই রান্না না করে ডেয়ারি প্রোডাক্ট খেতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা।

পাস্তুরাইজড ডেয়ারি প্রোডাক্ট থেকে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু যারা গরুর দুধ, ছাগলের দুধ খান তাদেরই ভয়টা বেশি। ব্রুসেলা ব্যাকটিরিয়া সংক্রমিত পশুর দুধ না ফুটিয়ে পান করলে বা গবাদি পশুর বা তাদের মাংসের সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরেও ব্রুসেলা সংক্রমিত হয়। এতে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, শিরদাঁড়া বা মাথা যন্ত্রণার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা না পড়লে পরে ক্রমশ শরীরের একাধিক অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে।

সাধারণত প্যাকেটের দুধ পাস্তুরিত করাই থাকে। বা সহজ ভাষায় বললে, যতটা ফুটালে ব্যাকটেরিয়া মরে যায়, ততটা তাপমাত্রা পর্যন্ত ফোটানোই হয়। তারপরেই বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে টেট্রা প্যাকে যে দুধ বিক্রি হয়, সেগুলো ফোটানোর কোনও প্রয়োজন নেই। সিল না খোলা পর্যন্ত আপনি বাইরেই রাখতে পারবেন। খারাপ হওয়ার ভয়ও নেই।

বেশিক্ষণ বারেবারে ফুটানো ক্ষতিকর। এতে প্রায় সকল ভিটামিন ও অন্যান্য উপকারী উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। একবার ফুটালে আর দ্বিতীয়বার ফুটানোর দরকার নেই। বারবার ফুটানো দুধের গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়। ফুটানো দুধ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন এবং ঠান্ডা অবস্থায় খেতে পারেন। আর কাঁচা দুধ একবারেই খাবেন না। এটি নিরাপদ নয়।

ফুটানো দুধ অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তের শর্করা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। পাশাপাশি, দুধ ফুটালে দুধের ল্যাকটোজ নামের যে সুগার থাকে, তা ভেঙে গিয়ে ল্যাকটুলোজ ও বিভিন্ন এসিডে রূপান্তরিত হয়। ফলে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে তাদের জন্য ফুটানো দুধ সহনীয় হতে পারে।

সরাসরি গোয়াল থেকে আসা কাঁচা দুধ না ফুটিয়ে খেতে কঠোর ভাবেই নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি। ফলে এই দুধ অবশ্যই ফুটিয়ে খান। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা দুধে অনেকরকম রোগজীবাণু বাসা বাধে। সরাসরি ডেয়ারি থেকে আনা দুধ খেলে সেই জীবাণু শরীরের নানা ক্ষতি করতে পারে। দুধ ফোটালে উচ্চ তাপমাত্রায় সেই সব জীবাণু মরে যায়।

প্যাকেটের দুধও ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল, এমনটাও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ পাস্তরাইজেশন পদ্ধতিতে দুধ একশো শতাংশ ব্যাকটিরিয়া মুক্ত করা সম্ভব হয় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, না ফোটানো দুধে ই-কোলাই, সালমোনেল্লার মতো ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধে। এই ব্যাকটিরিয়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেয়। বিশেষত গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং বয়স্কদের তাই সব সময় দুধ ফুটিয়ে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা।

দুধ সব সময় ফুটিয়ে খান। কাঁচা দুধে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, ফোটালে সেই ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। পাস্তরাইজড প্যাকেট দুধ উচ্চ তাপমাত্রায় না ফোটালেও গরম করে খান। সুস্থ থাকবেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :