নারী ও শিশু নির্যাতন: নিগ্রহের ধরনে বদল, বেশিরভাগই আড়ালে

নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনা ক্রমবর্ধমান। বিশেষ করে নগরে বা শহরে এটি ভয়ানক আকার নিয়েছে। কেবল চলতি বছরের চার মাসেই ঢাকা মহানগরে নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত ৬৯৩টি মামলা হয়েছে। তবে নিগ্রহের ধরনে বদল আসায় বেশিরভাগ ঘটনা প্রকাশ্যেও আসছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বদলে যাওয়া নাগরিক যাপনে সামাজিক অধঃপতনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও সম্মিলিতভাবে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা না গেলে সহজেই ভয়ংকর এই নিগ্রহের প্রতিকার মিলবে না।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গেল বছর ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে ২২১৮টি। এর মধ্যে ধর্ষণ মামলা ৫৪৬টি। শিশু নির্যাতনের মামলা ৪২০টি।
পুলিশ সদর দপ্তরে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ে কাজ করা উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীসহ সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের অন্যতম কারণ হচ্ছে-পরকীয়া আর যৌতুক। বিশেষ করে মা-বাবার মধ্যে ঝামেলার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। ক্ষেত্রবিশেষে তারাই বেশি নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
ঢাকার মহানগর পুলিশের তথ্য বলছে, রাজধানীতে গত চার মাসে পুলিশের আটটি বিভাগের ৫০টি থানায় নারী ও শিশু নির্য়াতনের মামলা হয়েছে ৬৯৩টি। এরমধ্যে ধর্ষণ মামলা হয়েছে ১৬৪টি। আর শিশু নিযার্তন মামলা হয়েছে ১৫০টি।
আর গত বছর ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৫৪৬টি ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪২০টি। আর নারী ও শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে ১১টি।
এছাড়া চলতি বছরের গত চার মাসে সারাদেশে যৌতুক ও পরকিয়াসহ বিভিন্নভাবে স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন দশ জন নারী। এসব ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ১৬ জন।
ডিএমপির একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডিএমপির আট বিভাগের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ওয়ারী বিভাগে ১৬১টি। এরপর পর্যায়ক্রমে মতিঝিল বিভাগে ১৫০টি, তেজগাঁও বিভাগে ১১৫টি মামলা হয়েছে। আর সবচেয়ে কম মামলা হয়েছে রমনা বিভাগে ৩৫টি। তবে গত বছর থেকে এই পর্যন্ত রাজধানীতে কোনো এসিড মারার মত ঘটনা ঘটেনি।
ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওয়ারী এলাকায় ভাসমান মানুষের বসবাস বেশি। ফলে এখানে এসব অপরাধও বেশি হচ্ছে।’
মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক মিঠু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মুগদা, সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানার একটি অংশে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। এই তিন থানা এলাকায় যৌতুক ও আত্মহত্যার ঘটনাও বেশি ঘটছে।’
পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক, পারিবারিক ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের কারণেই নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়ে গেছে। প্রতিটি মামলা ভিন্ন ভিন্ন ধরণের, কোনোটির সাথে কোনোটির মিল থাকে না। নারী ও শিশু নির্যাতন সামাজিকভাবে প্রতিরোধেই তারা বেশি জোর দিচ্ছেন।
৯৯৯-এ অভিযোগ বেড়েছে
পারিবারিকভাবে নির্য়াতনের শিকার হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৭ হাজার ৪৩১টি ফোনকল এসেছে ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’ নম্বরে। গতবছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪৩৪টি।
নারী ও শিশুরা ফোন করে কী ধরনের অভিযোগ দেয় জানতে চাইলে জাতীয় জরুরি পরিষেবা-৯৯৯ এর মিডিয়া অফিসার পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বেশিরভাগ নারী স্বামীর পরিবারের সদস্যদের হাতে মারধর ও হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন। এছাড়া অনেক সময় রাস্তা ঘাটে বখাটেদের হয়রানির শিকার হয়েও ফোন করেন নারীরা।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে দিনে ৫-১০টা অভিযোগ করত শিশুরা। এখন সেটা পায় ৩০-৪০টা। শিশুরা নিজেরাই ফোন করে অভিযোগ দেন। কোথাও হয়রানির শিকার হলেই শিশুরা এখন ফোন করে।’
(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/ডিএম)

মন্তব্য করুন