ভালুকায় বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী সেচযন্ত্র ‘দোন’

আনোয়ার হোসেন, ভালুকা (ময়মনসিংহ)
  প্রকাশিত : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩১| আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৫
অ- অ+

শত শত বছর আগে থেকেই মানুষ কৃষিকাজে পানি সেচের জন্য নানা কৌশল ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম পদ্ধতি ছিল ‘দোন’-এর সাহায্যে ফসলের ক্ষেতে পানি সরবরাহ করা। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির সেচযন্ত্রের ভিড়ে প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে প্রাচীন সেচযন্ত্র ‘দোন’। এ যন্ত্রটি মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও তা কেবল স্বল্প পরিসরের জমি সেচ কাজে ব্যবহার করেন কৃষকরা।

জানা যায়, আগেকার দিনে ফসলি জমিতে পানি সেচের জন্য টিন বা বাঁশের তৈরি সেঁউতি ও কাঠের দোন ব্যবহার করা হতো। নদী, খালবিল বা জলাশয় থেকে টিন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি সেঁউতি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হতো। আর উঁচু-নিচু জমিতে পানি সেচ দিতে ‘দোন’ ছিল অতুলনীয়। গ্রামবাংলার কৃষকের আদি চিন্তা-চেতনার ফল ছিল এ কাঠের দোন আবিষ্কার।

আম অথবা কাঁঠাল জাতীয় গাছের মাঝের অংশের কাঠ কেটে নিয়ে তার মাঝখানে খোদাই করে ড্রেন তৈরি করে পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। কোনো কোনো স্থানে নারিকেল, তাল, জিগা, সুপারি ও পাইন গাছ দিয়েও এ দোন তৈরি করা হতো। তবে বর্তমানে কাঠের তক্তা দিয়েও এ দোন তৈরি করা হয়। এতে পানি সেচ দিতে শ্রমিক ছাড়া অন্য কোনো খরচ হয় না।

কৃষকরা জানিয়েছেন, ক্রস আকারে দুটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়। এক অংশে দোনের মাথা অন্য অংশে মাটির ভরা (ওজন) তুলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে একসঙ্গে অনেক পানি উঠে আসে। এভাবে অনবরত পানি সেচ দিলে দ্রুত সেচের কাজ হয়ে যায়। আধুনিক শ্যালো, ডিপ, এলএলপি প্রভৃতি সেচযন্ত্র আসায় দোনের ব্যবহার এখন নেই বললেই চলে। যেসব জায়গায় ভূপৃষ্ঠের পানি সহজলভ্য সেরকম কিছু এলাকায় শুকনো মৌসুমে দোনের ব্যবহার মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে।

ভালুকা উপজেলার ভরাডোবা গ্রামের কৃষক কাশেম বলেন, একসময় ভালুকার প্রায় নদী, বিলে একসময় সারা বছর পানি থাকত। এ নদী থেকে দোনের সাহায্যে ফসলের ক্ষেতে পানি দেওয়া হতো। এখন নদী হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। তবে যখন পানি থাকে, তখন দোন ব্যবহার করে বোরো ফসলের জমিতে স্বল্প পরিসরে সেচ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে বর্তমানে সব জমি শতভাগ সেচের আওতায় আসায় আগের দিনের ‘দোন’-এর সাহায্যে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে কৃষকরা এখন আর দোন ব্যবহার করে না। তবে কালেভদ্রে কিছু ‘দোন’ চোখে পড়ে। পানি শুকিয়ে গেলে ‘দোন’ অকেজো হয়ে পড়ে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব, ভালুকা প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান পাঠান কামাল বলেন, দোন দিয়ে পানির সেচ আগের দিনে ছিল, আর তা ছিল পরিবেশবান্ধব, এখন অধিকাংশ জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা মেশিনের সাহায্যে পানি সেচ দিয়ে থাকে।

(ঢাকাটাইমস/০৩এপ্রিল/এলএ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ডাক্তার প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য গণমাধ্যমে আংশিক প্রকাশ হয়েছে: আসিফ নজরুল
উপদেষ্টা ফারুকীর অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন, শঙ্কামুক্ত
যাত্রী সেজে আসা তিনজনের কাছে মিলল ৮৮৭ গ্রাম স্বর্ণ
অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের বঞ্চনা পর্যালোচনায় ৯ সদস্যের কমিটি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা