কারাগারে যেমন আছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেই গাড়ি চালক

আশিক আহমেদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৩ জুন ২০২৩, ১২:২৪ | প্রকাশিত : ১৩ জুন ২০২৩, ১১:২৮

অস্ত্র মামলায় ৩০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আব্দুল মালেক প্রায় দুই বছর ধরে কারাভোগ করছেন। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

কারাসূত্র জানায়, আব্দুল মালেকের ৩০ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় তিনি একজন কয়েদি হিসেবে রয়েছেন। তিনি কোনো ডিভিশনপ্রাপ্ত নন। তাই তাকে সাধারণ বন্দির মতো কাজ করতে হয়।

কারাগারে আব্দুল মালেক খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। ফজরের নামাজের পর সামান্য খাবার খেয়ে হাঁটাহাঁটি করেন কারা ফটকের সামনে। পরে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করে অর্পিত কাজে লেগে যান।

কী কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন আব্দুল মালেক?

কারাসূত্র জানায়, কারাগারে বাগান পরিষ্কার করা, রান্না করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ নানা ধরনের কাজ রয়েছে। এর মধ্যেই কোনো একটি করছেন আব্দুল মালেক। তাকে কী কাজ দেওয়া হয়েছে সেটা নির্দিষ্ট করতে জানাতে পারেনি সূত্র।

দুর্নীতি করে শতকোটি টাকার মালিক হওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আব্দুল মালেককে ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম। আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে হওয়া অস্ত্র আইনের মামলায় এ রায় দিয়েছেন আদালত।

২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া ৪২ নম্বর বামনেরটেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বাসা থেকে মালেককে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব-১-এ কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেন। পরের বছরের ১১ জানুয়ারি অস্ত্র আইনের মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১-এর উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান চৌধুরী ১৩ জনকে সাক্ষী করে মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। গত ৪ এপ্রিল মালেকের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

আরও পড়ুন>>ধানমন্ডিতে বিউটিশিয়ানকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: মামলার তদন্তের অগ্রগতি কতদূর?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি চালক আব্দুল মালেক নামের একজন আসামি আমাদের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তিনি তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।’

গাড়িচালক আব্দুল মালেক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯৮২ সালে প্রথম সাভারে একটি প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন তিনি। প্রায় চার বছর চাকরির পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে যোগ দেন। আটকের আগ পর্যন্ত প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ছিলেন তিনি। ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী ইউনিয়নের স্বঘোষিত সভাপতিও। আব্দুল মালেক ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এই সম্পদ বানিয়েছেন।

২০২২ সালের ১১ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত গাড়িচালক আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে করা পৃথক দুটি দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ ৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালত। এই মামলায় আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকার বিশেষ জজ ৬ এর আদালতের সহকারী কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচার চলাকালীন সময়ে আমি তার মামলা দেখতাম। তবে এখন কী অবস্থায় আছে সেটা বলতে পারব না।’

২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই দম্পতির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। ওই বছরের ২৭ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন।

প্রথম মামলার বিবরণ অনুসারে, মালেক ৯৩ লাখ টাকার বেশি মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করে দুদকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সম্পদ বিবরণী দেন। এছাড়া তার কাছে দেড় কোটি টাকারও বেশি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ আছে, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে মেলে না।

দ্বিতীয় মামলার বিবরণে বলা হয়, পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে নার্গিস বেগমের কাছে অবৈধভাবে অর্জিত ১ কোটি ১০ লাখ টাকার সম্পদ আছে।

ঢাকাটাইমস/১২জুন/এএ/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :