চাদর দিয়ে আড়াল তৈরি করে স্বর্ণের দোকানে চুরি

রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে স্বর্ণের দোকান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অভিনব কৌশলে চুরি করে একটি চক্র। তারা প্রথমে দোকান বা প্রতিষ্ঠানটিকে কিছু দিন পর্যবেক্ষণ করেন কখন বন্ধ কিংবা এর আশপাশে লোকজনের আনাগোনা কম থাকে। সবকিছু ঠিক হওয়ার পর দোকান চাদর দিয়ে আড়াল করে তারপর করে চুরি।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি ডিবি) উপকমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান এ তথ্য জানান। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডিসি ডিবি মশিউর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাজধানীর ভাটারা থানার ১০০ ফিট রোডের মাদানী এভিনিউয়ের হাজী ম্যানশনের নিচতলার নূর জুয়েলার্সে করা চুরির ঘটনায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. শরীফ ওরফে জামাই শরীফ, মো. আমির হোসেন ওরফে মোটা আমির, মো. ইয়াছিন আরাফাত মোল্লা ওরফে কানা মোটা ইয়াছিন, মো. ফারুক, মো. নুরে আলম সুমন ওরফে ডিবি সুমন, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে আব্দুল্লাহ, মোকাররম হোসেন ওরফে রুবেল ওরফে মনির হোসেন ওরফে মনু, মো. পারভেজ। তাদের হেফাজত থেকে চুরি হওয়া দুই ভরি স্বর্ণ, ১২ লাখ টাকা এবং তালা কাটার যন্ত্রপাতি, চুরির কাজে ব্যবহৃত তিনটি বিএমডব্লিউ ছাতা উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মশিউর রহমান বলেন, ১৪ এপ্রিল দুপুরে ভাটারা থানার ১০০ ফিট রোডের মাদানী এভিনিউস্থ হাজী ম্যানশনের নিচতলার নূর জুয়েলার্সের মালিক ও কর্মচারীরা দোকানে তালা লাগিয়ে পার্শ্ববর্তী মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে দোকানে এসে দেখতে পান কলাপসিবল গেট ও সাটারে দেয়া তালাগুলো কাটা। ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পান স্বর্ণালংকারের বাক্সগুলো এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে এবং দোকানের ট্রেতে রাখা কোনো স্বর্ণালংকার আর নেই। তারা হিসাব করে দেখতে পান, প্রায় ১৮৬ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ক্যাশে থাকা ৫০ হাজার টাকা তালা কেটে অজ্ঞাতনামা চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি মামলা করেন দোকান মালিক।

সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ বিভাগের ডিসি ডিবি বলেন, গত বুধবার কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ওই চোর চক্রের সর্দারসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চুরি করার প্রক্রিয়া: চক্রটির চুরির কৌশল বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মশিউর রহমান বলেন, চোরচক্র কোনো একটা প্রতিষ্ঠানে চুরি করার আগে ওই এলাকায় কয়েকদিন অবস্থান করে। পায়ে হেঁটে, রিকশায় চড়ে এলাকা রেকি করে। প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা কোথায় যায়, কখন কতক্ষণ অবস্থান করেন তাও পর্যবেক্ষণ করে। অপরাধ সংগঠনের দিন মালিক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকাকালীন সময়ে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিয়ে কখনো ছাতা, কখনো চাদর দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে এক ধরনের আড়াল সৃষ্টি করে। পরে তালা কাটার যন্ত্র দিয়ে মুহূর্তেই কলাপসিবল ও সাটারের তালা কেটে একাধিকজনকে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে সাটার বন্ধ করে দেয়। ভিতর থেকে চুরি শেষ হওয়া পর্যন্ত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অবস্থানে সতর্ক থেকে ছাতা এবং চাদর দিয়ে আড়াল তৈরি অব্যাহত রাখে। নির্দিষ্ট কিছু দোকানদারের কাছে তারা চোরাই স্বর্ণালংকার কম দামে বিক্রি করে।

ধরা পড়া এড়ানোর জন্য এই চক্রের সদস্যরা সব রকমের প্রযুক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে বিধায় তাদেরকে সহসা ধরা যায় না। জুয়া খেলা, অবৈধ মাদক এবং অবৈধ যৌনতায় আসক্ত হওয়ায় চুরি থেকে প্রাপ্ত অর্থ তাদের কাছে বেশি সময় থাকে না।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুন/এএ/এফএ)