ভেষজ চীনাবাদাম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১০:০৮ | প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১০:০৪

চীনাবাদাম সব বয়সের মানুষের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। পার্কে কিংবা যে কোনো জায়গায় ঘুরতে ফিরতে চীনাবাদাম খাওয়ার অভ্যাসও রয়েছে অনেকের। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেষজ চীনাবাদামের রয়েছে নানা রকমের অবদান। চীনা বাদামের প্রোটিন দেহ গঠনে ও মাংশপেশি তৈরিতে সাহায্য করে।

চীনাবাদামের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকো। আদি উৎস আমেরিকা হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশ, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মধ্য আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, বাংলাদেশসহ আরো অনেক উষ্ণমন্ডলীয় দেশে চীনাবাদামের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। চীনাবাদাম হচ্ছে সয়াবিনের পর সর্বাপেক্ষা বেশি তেল প্রদায়ী ফসল। চীনাবাদামের গাছ একটি ঔষধী জাতীয় লতানো গুল্ম, যা ৩০ সেমি থেকে ৫০ সেমি (১ ফুট থেকে ১.৫ ফুট) দীর্ঘ হয়।

চীনাবাদামের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যারাকিস হাইপোজিয়া। উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় চীনাবাদাম কিন্তু বাদাম নয়, বরং শস্য। তার কারণ, এটি মাটির নিচে হয়। তাই এর আরেক নাম গ্রাউন্ড নাট বা মাটির বাদাম। উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় বাদাম হতে গেলে সেটিকে বড় কোনো গাছে ফল বা বীজ আকারে হতে হবে। যেমনটা আখরোট, কাজু বা কাঠবাদাম হয়ে থাকে। তবে বাদামের স্বাদের সঙ্গে এবং পুষ্টিগুণে মিল থাকায় একে চীনাবাদাম বলে ডাকা হয়।

চীনাবাদাম গ্রাউন্ড নাট বা মেটে বাদাম হিসাবেও অভিহিত যা ফ্যাবাসিয়াই (বা ফ্যাবাসি) জাতির অন্তর্গত এবং এগুলোর ভোজ্য বীজের জন্য প্রধানতঃ চাষ করা হয়। অন্যান্য শস্য উদ্ভিদের থেকে আলাদা, চীনাবাদাম মাটির উপরে নয় মাটির নীচে জন্মায়।

চীনাবাদামের ফুল থেকে স্বাভাবিতভাবে অন্যান্য ফুলের মতই হয় না। গাছে হলুদ রঙের ফুল ধরে। সেই ফুলে পরাগায়ণ হবার পর ফুলের পাপড়িগুলি ঝরে যায় এবং ওভারীটি ফুলে উঠে পেগে পরিণত হয়। সেই পেগটি আরো একটু লম্বা হয়ে একটি দন্ড সহকারে হঠাৎ মাটির ভেতরে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে চীনাবাদাম হয়ে বাড়তে থাকে।

চীনাবাদামের পুষ্টি উপাদান হিসেবে প্রতি ১০০ গ্রামে আছে- শর্করা ২১ গ্রাম, ফাইবার ৯ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ৪৮ গ্রাম, প্রোটিন ২৫ গ্রাম, থায়ামিন বি১ ০.৬ মিঃগ্রাঃ, রিবোফ্লাভিন বি২ ০.৩ মিঃগ্রাঃ, ন্যায়েসেন বি৪ ১২.৯ মিঃগ্রাঃ, ভিটামিন বি৬ ০.৩ মিঃগ্রাঃ, ফোলেট বি৯ ২৪৬ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন ই ৬.৬ মিঃগ্রাঃ, ক্যালসিয়াম ৬২ মিঃগ্রাঃ, লোহা ২ মিঃগ্রাঃ, ম্যাগনেসিয়াম ১৮৪ মিঃগ্রাঃ, ফসফরাস ৩৩৬ মিঃগ্রাঃ, পটাসিয়াম ৩৩২ মিঃগ্রাঃ এবং দস্তা ৩.৩ মিঃগ্রাঃ।

চীনাবাদামের মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এর উচ্চমাত্রার নিয়াসিন দেহকোষ সুরক্ষা করে, বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ করে, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে ও রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।

চীনাবাদাম প্রতিরোধ করে কোলন ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার ও হৃদরোগ। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড় গঠনেও সহায়ক। চীনাবাদামে আরও আছে প্রচুর আয়রন। এ উপাদান রক্তের লোহিত কণিকার কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। চীনাবাদামের ক্যারোটিন ও ভিটামিন ই ত্বক এবং চুল সুন্দর রাখে।

চীনাবাদাম খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। যে কোনও ধরনের হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায় এটি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চমাত্রায় চর্বি জাতীয় খাবারের সাথে যদি চীনাবাদাম যুক্ত করে খাওয়া হয় তাহলে ওই চর্বি জাতীয় খাবারের নেতিবাচক প্রভাব শরীরের উপর পড়ে না। যারা সপ্তাহে অন্তত দু’বার চীনাবাদাম খায় তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।

প্রোটিন সমৃদ্ধ। চীনাবাদামে রয়েছে ২২-৩০ শতাংশ ক্যালোরি। শিশুদের বৃদ্ধির জন্য যে প্রোটিনের প্রয়োজন তা বাদাম থেকে পাওয়া যেতে পারে।

যারা শরীরের ওজন কমাতে চাইছেন, তাদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় বাদাম। এতে উপস্থিত উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও অসম্পৃক্ত চর্বি ওজন ঝরানোর পক্ষে যথেষ্ট।

তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন বি-১, নিয়াসিন ও ফোলাট। যা চীনাবাদামে রয়েছে।

চীনাবাদামে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস ও অন্য ভিটামিন। যা হাড় শক্ত রাখে।

চীনাবাদামে থাকা নিয়াসিন, ভিটামিন বি-৩ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চামড়ায় ভাঁজ পড়া আটকায়। এছাড়া চামড়ার অন্য রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে এটি।

চীনাবাদামে রয়েছে জিঙ্ক। যা শরীরকে ভিটামিন এ ট্রান্সফারে সাহায্য করে। পরিষ্কার দৃষ্টিশক্তির জন্য এর প্রয়োজন রয়েছে।

বায়োটিনের বড় উৎস চীনাবাদাম। বায়োটিন হচ্ছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স-এর সমতুল্য। বায়োটিন ডায়াবেটিস, স্কোরেসিস ও মস্তিষ্কের সূস্থতার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চীনাবাদামে পর্যাপ্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যানসার প্রতিরোধ করে। বাদাম পিত্তথলির পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে। এই বাদামে শতকরা ৮০ ভাগ অসম্পৃক্ত ফ্যাট থাকে যা হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই কার্যকরী।

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চীনাবাদাম। কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত যে, পানিতে ভিজিয়ে বাদাম খেলে দেহের ভেতরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার কারণে দেহের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে পেটের অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের প্রকোপ কমতে থাকে।

কোষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে চীনাবাদাম। চীনাবাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকার কারণে শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরে যেন কোষের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরে বয়সের তেমন প্রভাব পড়ে না।

চীনাবাদাম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। এই ম্যাগনেসিয়াম রক্তের উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত যারা বাদাম খেয়ে থাকেন তাদের মাঝে শতকরা প্রায় ২৫ থেকে ৩৮ শতাংশ মানুষের টাইপ-২ ডায়াবেটিকস হওয়ার আশংকা কমে গেছে।

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে চীনাবাদাম। নিয়মিত নিয়ম করে চীনাবাদাম খেলে খিদে কমে যায়, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সে কারণে শরীরের ওজন স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে। এছাড়াও অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভবনা কমে যায়।

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে চীনাবাদাম। প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের অভাব পূরণ করতে নিয়মিত চীনাবাদাম খান। কারণ বাদামে শুধু ডায়াবেটিস নয়, ব্লাড প্রেসারসহ বহু ধরনের রোগের প্রতিকার পাওয়া যায়।

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় চীনাবাদাম। চীনাবাদামে থাকা বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরের ভাল কোলেস্টেরলে মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে অটোমেটিকভাবে খারাপ কোলেস্টেরল কমতে থাকে। ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

শরীরের পুষ্টি ঘাটতি দূর করে চীনাবাদাম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাধিক ক্রনিক রোগকে দূরে রাখতেও দ্বিধা করে না। একমুঠো চীনাবাদাম খেলে আপনার শরীরে ১৬১ ক্যালরি প্রবেশ করবে, ফলে বাদাম খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ভয় থাকে না।

চীনাবাদাম ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি করে। চীনাবাদামে এমন কিছু উপাদান আছে, যা কগনিটিভ পাওয়া অর্থ্যাৎ ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।

(ঢাকাটাইমস/২৫ জুলাই/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :