ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েদি নম্বর পি০১১৩৫৮০৯, মাগশট ভাইরাল
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জর্জিয়ার আটলান্টার ফুলটন কাউন্টি কারাগারে আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেললেন। কারণ আত্মসমর্পণের পর তাকে গ্রেপ্তার করে 'মাগশট' (গ্রেপ্তারির পর প্রথম ছবি) তোলেন জেল কর্তৃপক্ষ, আর মুহূর্তে তা ভাইরাল! এই প্রথম আমেরিকার কোনো সার্ভিং বা প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের 'মাগশট' তোলা হলো।
২০২০ সালে জর্জিয়া রাজ্যের নির্বাচনের ফল পাল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের মামলায় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি ফুলটন কাউন্টি কারাগারে আত্মসমর্পণ করেন। এর পরই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ সময় কারা কর্তৃপক্ষ তার একটি ‘মগশট’ বা মুখের ছবি নেন। মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যার মুখের ছবি নেওয়া হলো। ছবিটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের দুর্নীতি থেকে শুরু করে যৌন কেলেঙ্কারি বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত, ট্রাম্প ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রিপাবলিকান মনোনয়নের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। ওই বছরের মার্চে ম্যানহাটনের একটি গ্র্যান্ড জুরি জালিয়াতির ৩৪টি অভিযোগে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে।
সেই সঙ্গে পুলিশি খাতায় ট্রাম্পের দৈহিক বিবরণও 'টক অফ দ্য টাউন'। উচ্চতা- ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি, ওজন- ২১৫ পাউন্ড বা ৯৭ কিলোগ্রাম এবং স্ট্রবেরি-ব্লন্ড চুল। ফাল্টন কাউন্টি জেলের রেকর্ডস অনুযায়ী, ট্রাম্পের পরিচয় 'কয়েদি নম্বর পি০১১৩৫৮০৯'। তবে এই গ্রেপ্তারির মেয়াদ ছিল মাত্র ২০ মিনিট! ২ লক্ষ ডলারের বন্ডে মুক্তি পান ট্রাম্প। আর তার পর বিশাল কনভয় নিয়ে রওনা দেন বিমানবন্দরের উদ্দেশে। সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্পের দাবি, 'এখানে যা ঘটেছে, তা ন্যায়বিচারের নামে প্রহসন। আমি কোনও অন্যায় করিনি। আমেরিকার জন্য এটা দুঃখের দিন!'
ট্রাম্প ছাড়াও তাঁর কয়েকজন সাবেক সহযোগী মামলায় আসামি হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ‘ব্লাক বয়েস ফর ট্রাম্প’ সংগঠনের নেতা হ্যারিসন ফ্লয়েড।
নির্বাচনে কারচুপি-সহ ১৩টি অভিযোগে এদিন জর্জিয়া জেলে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ট্রাম্পকে। ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে হেরেছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগই তাঁর বিপদ বাড়িয়েছে। কারণ, ২০২৪-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান শিবিরের 'টপ' প্রার্থী ট্রাম্প। এই গ্রেপ্তারি এবং মাগ শট প্রকাশ তাঁর নির্বাচনী ভাবমূর্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন তার নিয়ম সংবিধানে রয়েছে এবং এগুলো বেশ সহজ। এক জন প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে, তাকে জন্মগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে এবং কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার পরও কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো জর্জ ডব্লিউ বুশ। মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর জন্য যিনি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
সম্প্রতি দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনে এক নিবন্ধে উদার আইনের অধ্যাপক লরেন্স ট্রাইব এবং জে. মাইকেল লুটিগ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী ১৪তম সংশোধনীর একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেউ যদি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে শপথ নিয়ে বিদ্রোহ করেন বা বিদ্রোহে জড়িত থাকেন বা সরকারের শত্রুকে সহায়তা করেন তাহলে তিনি পরবর্তী সময়ে সরকারি অফিসে বসার যোগ্য হবেন না। সাবেক প্রেসিডেন্টের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে উলটে দেওয়ার প্রচেষ্টা এবং এর ফলে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ তাকে অযোগ্যতার ধারার আওতায় নিয়ে গেছে। তাই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য।’