শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে শতভাগ আলোর পথে বাংলাদেশ

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
| আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:২৫ | প্রকাশিত : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৯

বর্তমান যুগে মানুষ প্রতি মুহূর্তে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে থেকে মানব সভ্যতার অগ্রগতি দ্রুত হয়েছে। আজ মানব জীবনে বিদ্যুতের অবদান খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা কত তা আমরা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করে থাকি।

আধুনিক মানব জীবনের সঙ্গে বিদ্যুৎ ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে আছে। বিদ্যুৎহীন জীবন এখন আমরা কল্পনা করতে পারি না। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন এখন অচল। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে বিদ্যুৎ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে। গ্রামে শহরে বা নগরে যেখানে মানুষ বসবাস করুক না কেন বিদ্যুৎ হলো তার নিত্যসঙ্গী।

খুশির খবর হলো, বাংলাদেশ এখন শতভাগ বিদ্যুতের যুগে। এটি জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে হয়েছে। এই অর্জন যে কোনো দেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক বড় সাফল্য। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্যও পেয়েছে। সরকার নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এর সুফল দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত আর বিস্তারিত পরিকল্পনার অংশই বিদ্যুৎ খাতের বিশাল সাফল্য।

গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়ার ফলে কৃষি অর্থনীতিতে পড়েছে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব। কৃষি উৎপাদনে বেড়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার। এতে নতুন নতুন জীবিকার পথ তৈরি হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বড় অবদান রাখবে।

২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের রূপকল্পেই ছিল ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা। সেটি শেখ হাসিনার সরকার সফলতার সঙ্গে করেছেন। পুরো দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসে গেছে। বিশেষ করে দুর্গম চরাঞ্চল ও বিচ্ছিন্ন কিছু এলাকা, যেখানে শুরুতে সৌরবিদ্যুৎ ও জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হয়েছিল, সেখানে এখন সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে। গ্রিড-অফগ্রিড মিলিয়ে দেশের সব এলাকা এখন শতভাগ বিদ্যুতের আওতায়। বিদ্যুতের কারণে দেশব্যাপী বেসরকারি খাতে বিরাট সাফল্য এসেছে। দেশের মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল চলছে বিদ্যুতে।

পাওয়ার সেলের তথ্যানুসারে, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৭। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫০। ২০০৯ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। তখন দেশে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ছিল এক কোটি আট লাখ। বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা চার কোটি ১৪ লাখ। সঞ্চালন লাইন ছিল আট হাজার সার্কিট কিলোমিটার, বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ২১৩ সার্কিট কিলোমিটার। মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬০ কিলোওয়াট ঘণ্টা।

বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ সেক্টরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হতো ৩২৬৮ মেগাওয়াট। ২০২৩ সালে বিদ্যুত উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ১৫ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট।

আগে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হতো গ্রাহকদের। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা হয়নি। সব মানুষকে বিদ্যুৎসেবার আওতায় আনতে মাঠপর্যায়ে কর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সব বিতরণ সংস্হা ও কোম্পানিগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য যত আবেদন পড়েছে সবগুলোতেই সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যারা আবেদন করেননি তাদেরকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় অথবা এলাকায় এলাকায় মাইকিংসহ প্রচারণার মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যত নতুন স্থাপনা-বাড়ি-কারখানা উঠছে বা উঠবে তাতে যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ধারবাহিকতা রক্ষা করে শতভাগ বিদ্যুতায়নের গৌরব অক্ষুন্ন রাখতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।

শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে অনেক বাধা ছিল। বিদ্যুৎ উত্পাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত নিয়োজিত সবাই একটি দল হয়ে কাজ করার ফলাফল হলো- নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এ অর্জন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এখনো শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি। সন্দ্বীপে, রাঙ্গাবালি দ্বীপেও বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। ঐ অঞ্চলের মানুষও একসময় বিশ্বাস করতে চাননি যে, তারা বিদ্যুৎ পাবেন। হাতিয়া নিঝুম দ্বীপে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যমুনা, তিস্তার অনেক দুর্গম চরাঞ্চলেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করার যে প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন শেখ হাসিনা, তা আজ দৃশ্যমান। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অন্ধকার থেকে বেরিয়ে শতভাগ আলোর পথে এসেছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা মানুষের কাছে যে অঙ্গীকার করেছেন তা পূরণের মাধ্যমেই তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ কাজে বিশ্বাসী, এই কারণেই বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপর আস্থাশীল। জনগণের সমর্থন নিয়েই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :