গির্জার ফাদার হতে চান সুকান্ত 

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৬ | প্রকাশিত : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৪

হাতে কেচি, সুতো আর বাহারি ফুল নিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল চার্চ সাজাচ্ছেন ২২ বছর বয়সী বরিশালের এক যুবক। তার স্বপ্ন তিনি মানবকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করবেন। দীর্ঘ নয় বছর ধরে নিজেকে পরিবার থেকে আলাদা রেখে একজন সেমিনারিয়ান হিসেবে মানবসেবাকেই ধর্ম মনে করে এগিয়ে চলেছেন এক কঠিন পরীক্ষায়। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১০ বছর। এরপর তিনি হবেন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের একজন ফাদার। তার নাম সুকান্ত ফ্রান্সেস রয় (২২)।

সুকান্ত কাকরাইলের সেন্ট ম্যারিস ক্যাথিড্রাল চার্চে কর্মরত আছেন দুই বছর ধরে। এর আগে তিনি সাত বছর ছিলেন অন্য এক চার্চে। এই চার্চে বর্তমানে ৬১ জন সেমিনারিয়ান আছেন। এছাড়াও অনেক সিস্টার রয়েছেন যারা কাজ শেষে চলে যান।

সুকান্তের সঙ্গে ঢাকা টাইমসের কথা হলে তিনি বলেন, আমার চাচা মাইকেল রয় একজন ফাদার, তিনি বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে নিয়োজিত আছেন। ছোটবেলায় আমি এই চাচার কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পাই। এরপর সপ্তম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় আমি সিদ্ধান্ত নেই আমি ফাদার হবো। এজন্য আমি সেমিনারিয়ান হওয়ার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করি। প্রথম অবস্থায় আমার পরিবার থেকে একটু সমস্যা হয়েছিল, পরে আমার পরিবার আমার ওপরই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেয়। আমি আমার মা-বাবার একমাত্র ছেলে। প্রথমে তারা আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিল।

ফাদার হতে হলে প্রথমে সেমিনারিয়ান হতে হয়। আর এ জন্য ক্যাথলিক অফিসগুলো থেকে অনুশীলন করতে হয়। অনুশীলন শেষ করতে কমপক্ষে আট বছর সেমিনারিতে থাকতে হবে।

সুকান্ত বলেন, সেমিনারিয়ান হতে চাইলে সংসারি হওয়া যায় না, কোন সেমিনারিয়ান বিয়ে করে না, নিজের জীবনকে অন্যদের সেবার জন্য উৎসর্গ করেন। ফাদার হওয়া খুব সহজ বিষয় না, চাইলেই যে কেউ হুট করে ফাদার হতে পারে না, এজন্য তাকে অনেক অপেক্ষা করতে হয়। নিজেকে গড়ে তুলতে অনেক সময় দিতে হয়। ত্যাগ শিকার করেই একজন ফাদার হতে পারে। ক্যাথলিক অনুসারে কেউ যদি ফাদার হতে মনস্থ করেন তাহলে সপ্তম শ্রেণি বা মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়ার পর শুরু করতে হয়। অর্থাৎ সেমিনারিয়ান হতে হয় একটি নির্দিষ্ট সেমিনারিতে।

সিস্টারদের বিষয়েও একই প্রক্রিয়া এবং সিস্টারদের বড় হলো মাদার। উনারা পরিবার আত্মীয় সংসার সব ত্যাগ করে নিজের জীবনকে নিবেদিত করে। বিয়ে করেন না তারা। এটি একটি পবিত্র ব্রত হিসেবে মনে করেন তারা।

পরিবারের সঙ্গে সুকান্তের যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সব সময়েই চার্চেই থাকি। যখন আমাকে ছুটি দেয় তখন আমি আমার পরিবারের কাছে যাই। গ্রামে ঘুরি, আড্ডা দেই। ছুটি শেষ হলে আবার চার্চে চলে আসি। শুধুমাত্র আমি আমার ভবিষ্যৎ পরিবার বা সংসার নিয়ে ভাবি না। কারণ ফাদার হতে হলে সংসারের মায়া ত্যাগ করতে হয়। সংসার হলে ফাদার হতে পারে না। সকল মানুষের সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।

সুকান্ত বলেন, আমরা সব সময়ই মানুষের সেবা দেওয়ার বিষয়টা মাথায় রাখি। বিভিন্ন সময় আমরা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দেই। এছাড়াও বিভিন্ন সেবামূলক কাজে যখন যেখানে যাওয়া প্রয়োজন হয় তখন সেখানে যাই। এজন্য আমাদের কোনো বেতন নেই। আবার কোনো খরচও নেই। কারণ আমরা নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেই সেবা দিয়ে থাকি।

কেন ফাদার হওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল- এ প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, আমার মা হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছেন। তিনি সিস্টার না হলেও সব সময় মানুষকে সেবা দিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমার মায়ের সেই কার্যক্রমগুলো আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছিলাম। তখনই আমি ভাবতে থাকি আমিও নিজেকে মানবসেবায় নিয়োজিত করব। আর ফাদার হলে সেই সেবাটা পরিপূর্ণভাবে প্রদান করা যায়। কারণ নিজের সংসারের প্রতি কোনো টান থাকে না।

রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন গির্জার ভেতরে ও বাইরে সাজানো হয়েছে। নানা রঙের বেলুন, ফুল, আলোকসজ্জায় বর্ণিল ক্রিসমাস ট্রি। বিভিন্ন গির্জায় রয়েছে শিশু যিশুখ্রিষ্ট, মা মেরির প্রতিকৃতি। রাজধানীর গির্জাগুলোতে সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থনায় যোগ দিতে আসতে থাকেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। গির্জাগুলোর প্রবেশমুখে নিরাপত্তা দিতেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা তল্লাশির মাধ্যমে গির্জায় প্রবেশ করতে হচ্ছে সবাইকে।

(ঢাকাটাইমস/২৫ডিসেম্বর/এইচএম/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :