রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে অতীতে এত বিতর্ক কে কবে দেখেছে?

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা এককথায় নজিরবিহীন। রাষ্ট্রপতির পদ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন তীব্র কৌতূহল-বিতর্ক এর আগে কেউ দেখেনি।
বিতর্কের সূত্রপাত মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক বর্ষীয়ান সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর প্রতিবেদন থেকে। মতিউর রহমান চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই।
গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) ‘জনতার চোখ’ নামের রাজনৈতিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ওই রিপোর্ট ধরে সব গণমাধ্যমই ঠাঁই করে নেয় এই ইস্যু। একপর্যায়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ এবং ‘শপথ ভঙ্গের’ মতো অভিযোগ আনা হয়।
তার মধ্যেই সোমবার (২১ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, শেখ হাসিনার পদত্যাগ মীমাংসিত বিষয় এবং তা নিয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার জন্য রাষ্ট্রপতি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তবে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই, ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতার মঞ্চসহ তাদের সমমনা বেশ কয়েকটি সংগঠন।
মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণের দাবিতে ইতোমধ্যেই শক্ত অবস্থান নিয়েছে এই সংগঠনগুলো। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বঙ্গভবনের রাস্তা অবরোধ করে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভও করেছে এসব সংগঠন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের টিকে থাকাটা ‘কঠিন’ হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। গত বছরের এপ্রিলে তিনি রাষ্ট্রপধান গিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে তিনি দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তবে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না।
দেশে এর আগে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বা পদত্যাগের পর প্রধান বিচারপতিকে দায়িত্ব দেয়ার ইতিহাস রয়েছে। কেউ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন, কেউ রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সবচেয়ে নাটকীয় পদত্যাগের ঘটনা ঘটে রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ঘিরে। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। বিএনপি সংসদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার পর ইমপিচ করার হুমকির মুখে ২০০২ সালের ২১ জুন তিনি পদত্যাগ করেন।
এরপর ২০০২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমদ। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর ২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের সঙ্গেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্বও নেন। ২০০৭ সালে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ থামাতে তিনি কোনো ভূমিকা রাখেননি অভিযোগে তাকে নিয়ে টুকটাক বিতর্ক তৈরি হলেও তা অত ঘোলাটে পরিস্থিতির তৈরি করেনি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইয়াজউদ্দিন আহমদ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে বিদায় নেন।
(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/ডিএম)

মন্তব্য করুন