এ বছরেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার হবে, প্রত্যাশা ববি হাজ্জাজের

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, ‘কিছুটা ধোঁয়াশা নিয়ে শুরু হওয়া এ বছরেই বাংলাদেশ তার গণতান্ত্রিক রূপ ফিরে পাবে প্রত্যাশা এটাই। একইসাথে আমরা আশাবাদী, এ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার গণহত্যার দোসরদের বিচার হবে এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কবর রচিত হবে।’

মঙ্গলবার মালিবাগস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকার ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি এক অভিনব প্রতারণার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে পুরো জাতির সঙ্গে তামাশা করেছিল। গত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ হাসিনাকে উৎখাত করে এই প্রতারণার সমুচিত জবাব দিয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নিশিরাতের নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি ভোটারবিহীন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন ছিল খুনি হাসিনা কর্তৃক ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জঘণ্য নাটক। পরপর তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনের যাত্রাপালায় পরিণত করে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকারকে যাদুঘরে পাঠিয়েছিল। এখন সময় এসেছে গণতন্ত্রের ট্রেনকে আবার রেললাইনে উঠানোর। নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে জনগণ আজ মুখিয়ে আছে।’

তিনি বলেন, ‘ভুতাপেক্ষভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র কার্যকর করা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে জুলাই ঘোষণাপত্র ঠিক করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সাথে এবিষয়ে সংলাপে বসব। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে থাকা আমরা সব রাজনৈতিক দল জুলাই গণঅভ্যুথানের মূলমন্ত্রের সাথে একমত তবে এটা কোন একক গোষ্ঠীর একমাসের আন্দোলন ছিলো না। আন্দোলনে স্বক্রিয় থাকা, ত্যাগ স্বীকার করা এবং রক্ত ঝড়ানো রাজনৈতিক দলগুলোকে যদি কেউ প্রতিপক্ষ মনে করে তাহলে জনগণের কাছে তাঁরা অবার্চীন হিসাবেই পরিচিত হবে। ১/১১ সরকারের সময়েও যেমন ‘কিংস পার্টি’ গঠনের উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছিলো বর্তমান সময়েও এমন কোনোকিছু ভালো ফল বয়ে আনবে না। তবে আমরা চাই রাজনীতিতে তারুণ্যের উদ্যোগে নাগরিক ক্ষমতায়ন আন্দোলন, রাজনৈতিক দল, গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে উঠুক যাতে বাংলাদেশে কোন কর্তৃত্ববাদী শাসন আর ফিরে না আসে। তারুণ্যের সব গঠনমূলক উদ্যোগকে আমাদের দল এনডিএম স্বাগত জানায়। তবে কাউকে অসম্মান করা বা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্রকে আমরা মেনে নিব না।

এনডিএম চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী, আপোষহীন অবিসংবাদিত নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাত্রা করছেন। আমরা তাঁর আশু রোগমুক্তি কামনা করছি। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি রেখে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা যে নোংরা খেলায় মেতে উঠেছিলো তার খেসারত আওয়ামী লীগকে নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দেবার মাধ্যমেই দিতে হবে। আমরা আশা রাখছি, বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে সাথে নিয়ে দেশে ফিরবেন যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচনের পথে চূড়ান্ত যাত্রা শুরু করবে।

তিনি বলেন, সংষ্কারে গঠিত কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা প্রকাশ করা শুরু করেছে। আমরা আবারো বলছি, সংষ্কার কোন নতুন ইমারত নির্মাণের মত শিল্পকর্ম নয় যে নকশা অনুযায়ী তৈরি করলেই কাজ শেষ। এটা একটা চলমান বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া যেখানে জনমত, সময়ের চাহিদা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক বাস্তবতা, ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ, বাস্তবায়ন সক্ষমতা, আইনি প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয় জড়িত থাকে। সংষ্কারের দোহাই দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়কে প্রলম্বিত করলে জনমনে সন্দেহের উদ্রেক হবে। জনগণ কতটা সংষ্কার চায় সেটা জানার একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। জনরায় ব্যতীত কয়েকজন ব্যক্তি মিলে প্রকৃত সংষ্কারের স্বরুপ ঠিক করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাই। এই দাবির স্বপক্ষে জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে আমরা গণজমায়েত, লিফলেট বিতরণ, সুধী সমাবেশ, মতবিনিময়, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন ইত্যাদি কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। অচিরেই আপনাদেরকে আমাদের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির স্থান এবং তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ্। আমরা আশা রাখব, জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এমন মন্তব্য করা থেকে সরকারের ভেতর এবং বাইরের সব গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিগণ বিরত থাকবেন। নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল হিসাবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম বিভিন্ন সংসদীয় আসনে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করছে এবং অচিরেই পুরো বাংলাদেশ একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে গণজোয়ার দেখবে ইনশাআল্লাহ্।

(ঢাকাটাইমস/৭জানুয়ারি/জেবি/এজে)