ইমাম শেখ আর পরশ্রীকাতর আমরা
আমরা একটু পরশ্রীকাতর। এটা অস্বীকার করার কোনো রাস্তা আমরা খোলা ছাড়িনি তো, তাই স্বীকার করতেই হচ্ছে। জাতিগতভাবেই অন্যের ভালো দেখতে আমাদের কষ্ট হয়। ঈর্ষায় আমাদের গা জ্বালা করে। অন্যের ভালো দেখলে আমরা তার নিন্দা করি, তার ভালোর মধ্যে ছিদ্র খুঁজতে থাকি। এটা আমাদের স্বভাব।
কদিন আগের ঘটনা বলি। প্রধানমন্ত্রী তার গ্রামের বাড়ি গিয়ে বাচ্চা কাচ্চা সমেত ভ্যানে চড়লেন। যার ভ্যানে চড়লেন, সে সদ্য কৈশোর পেরুনো এক তরুণ। এখনো ভালো করে দাড়ি গোঁফও গজায়নি। তো প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে সারাদেশের মানুষের কাছে ছেলেটা রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেছে।
তার পরিবারে সে একা রোজগেরে পুরুষ। বাবা মানসিক ভাবে অসুস্থ। কাজকর্ম কিছুই করে না। ছেলেটার খবর পত্র পত্রিকায় দেখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তাকে একটা চাকরি দিয়েছে। আর এতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে কারো কারো। তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে রাজ্যের মশকরা। ভ্যানচালক থেকে সে নাকি রাতারাতি বিমানের পাইলটের চাকরি পেয়ে গেছে. ঠাট্টার ছলে এমন গুজব ছড়ানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাকে তু্চ্ছ করে স্ট্যাটাসের পর স্ট্যাটাস পড়ছে, বানানো হচ্ছে ফেসবুক ট্রল।
লেখার সাথের এ ছবিটাই দেখুন। আমরা যে কতটা নির্মম, কতটা নিচু মন মানসিকতার হতে পারি, সেটা বোঝা যায় এই ছবিটা দেখলে। একটা গরিব ঘরের ছেলে, যার বাবা মানসিক রোগী, সে ঘটনাক্রমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে একটা চাকরি পেয়েছে। তাতে আপনাদের এতো পুড়ছে কেন? ছেলেটা ভ্যান চালাতো বলে? সেটা কি তার দোষ? তাকে কি পাইলটের চাকরি দেয়া হয়েছে? সে কি চাকরির জন্য তদবির করেছে? সেকি ঘুষ দিয়ে, মামা চাচার জোরে চাকরিটা নিয়েছে?
না নেয়নি।
চাকরি সে চায়নি। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজের জন্য চাকরি চাইতে তার লজ্জা করেছে। গণমাধ্যমে যখন তার খবরটা প্রকাশ হয়, তখন বিমানবাহিনী নিজ উদ্যোগে ইমাম শেখের যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকরি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তাকে পাইলট বানানো হবে এমন কোনো কথা কোথাও বলা হয়নি।
আর লাখ লাখ বেকারের কথা বলছেন? বেকার নেই কোন দেশে? আমেরিকাতে বেকার নেই? ইংল্যান্ডে বেকার নেই? এক ইমাম শেখের চাকরি হওয়ায় বাংলাদেশের সব বেকারের চাকরিতে টান পড়ে গেল? বাহ! মজাতো!
আপনারা মশকরা করেন, ঈর্ষা করেন- ভণ্ড রাজনীতিবিদদের নিয়ে করেন, দুর্নীতি করে যারা কোটি কোটি টাকা বানায় তাদের নিয়ে করেন।
যে ছেলেটা শুধু পেট চালাতে এই বয়সেই ভ্যানের চাকায় নিজের ভাগ্য বেধে ফেলেছিলো, সে যদি ভাগ্যক্রমে একটু নিশ্চিন্ত জীবনের আশ্বাস পায়, তাতে খুশি হতে শেখেন। পরশ্রীকাতরতা এক ধরনের অসুস্থতা। ঈর্ষা করা ভালো না। নিজের ভেতরের ঈর্ষা কমান। তাতে করে আপনার উদারতা বাড়বে। আর ভেতরের ছ্যাচড়ামো কমবে।
লেখক: জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ