রোগ নিরাময়ে, গরমে প্রশান্তি পেতে খান ফলের রস

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫৭ | প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫২

চারিদিকে গরম আবহাওয়া। করোনা আর লকডাউনে মানুষের অবস্থা নাভিশ্বাস। এ সময় রোগব্যাধির হাত থেকে ফলের জুস শরীরকে রক্ষা করতে পারে। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে দেহে সব পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ সঠিক মাত্রায় আছে কিনা, সে বিষয়ে সচেতন থাকা দরকার। দেহের উপাদানের কথা বলতে সবার আগে যে উপাদানটির কথা আসে, তা হলো প্রোটিন। দেহের শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস এ প্রোটিন। প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে অনেক খাবারই আমরা খেয়ে থাকি। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে প্রোটিনের অভাব দূর করতে বিভিন্ন ফলের জুসও দারুণ ভূমিকা রাখে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ফলের জুস বানাতে পারেন খুব সহজেই।

তরমুজের জুস

তরমুজ শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে। শরীরে এনার্জি তৈরি করে দেয়। গরমে যারা বেশী ঘামেন তারা প্রচুর পরিমাণে তরমুজ খান। শরীর ঠান্ডা হবে শরীরে পানির অভাব পূরণ হবে এবং শরীর দুর্বল হবে না। যারা ঘন ঘন সর্দি বা ঠান্ডায় আক্রান্ত হন তারা তরমুজ খান উপকার পাবেন। যাদের জ্বর তারা তরমুজ বা তরমুজের রস বা তরমুজের শরবত খান জ্বরের তীব্রতা কমে আসবে। তরমুজে ২১ শতাংশ ভিটামিন সি, ১৮ শতাংশ ভিটামিন এ, ৫ শতাংশ পটাশিয়াম, ৪ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম এবং ৩ শতাংশ ভিটামিন বি১, বি৫ এবং বি৬ আছে। সাধারণ মানুষ নিয়মিত তরমুজ খেয়ে অ্যাজমা বা হাঁপানি প্রতিরোধ করতে পারেন। তরমুজে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে। যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তারাও তরমুজ খেয়ে উপকার পেতে পারেন। আরেকটি বিষয়, তরমুজ ফুসফুস সুস্থ রাখতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

উপকরণ: অর্ধেক তরমুজ, ১ কাপ চিনি, ৩টা পুদিনা পাতা, পরিমাণমতো বিট লবণ, লেবু

প্রণালি: প্রথমে তরমুজ গুলাকে বেলেন্ড করে ছেঁকে নেবো।এরপর চিনি,একটু বিটলবন,লেবু,পুদিনা পাতা ১/২টা(ইচ্ছা করলে না ও দিতে পারেন)তবে ফ্লেভার টা দারুন আসে।এরপর সবকিছু একসাথে আবার বেলেন্ড করে নিলে ব‍্যাস তৈরি হয়ে গেল মজাদার তরমুজের জুস।

দারুচিনি আপেলের লাচ্ছি

প্রচন্ড গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা লাচ্ছি এনে দিবে প্রশান্তি!! ঘরে বসেই কিন্তু বানিয়ে নিতে পারেন বিভিন্ন ফ্লেভারের লাচ্ছি। খুবই মজাদার পানীয়টি হচ্ছে দারুচিনি আপেলের লাচ্ছি। এই পানীয়টি খেতে যেমন সুস্বাদু স্বাস্থ্যের পক্ষেও খুবই উপকারী। প্রচন্ড তাপ প্রবাহ চলাকালীন শুধুমাত্র পানির উপর ভরসা করলেই চলে না। এই লাচ্ছিটি শরীর সতেজ রাখার পাশাপাশি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ক, হার্ট, ফুসফুস ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভালো রাখতে দারুণভাবে কাজ করে। তো চলুন দেড়ি না করে জেনে নেই হেলদি এই লাচ্ছি তৈরির পুরো প্রণালীটি।

উপকরণ: ছোট আপেল- ২টি, দারুচিনি গুঁড়া- ১/২ চা চামচ, চিনি- ১ টেবিল চামচ, দই- ১ কাপ, লেবুর রস- কয়েক ফোঁটা, টানো ক্রিম- ১ টেবিল চামচ, মধু- ১ চা চামচ

প্রণালী : প্রথমে আপেলগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এবার একটি পাত্রে আপেলগুলো রেখে তাতে চিনি আর ১/৪ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া দিয়ে দিতে হবে। তারপর পাত্রটি চুলায় বসিয়ে অল্প আঁচে আপেল সেদ্ধ করে নিন। ততক্ষণ ধরে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না চাটনির মতো থকথকে হয়ে যায়। সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর মিশ্রণটি একটু ঠাণ্ডা হলে একটি ব্লেন্ডারে দিন এবং সাথে দই, ফেটানো ক্রিম বাকি দারুচিনি গুঁড়া, লেবুর রস দিন। সবকিছু দেয়া হয়ে গেলে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। হয়ে গেলে একটি গ্লাসে ঢেলে উপরে একটু মধু , দারুচিনি গুঁড়া দিয়ে সাজিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।

অরেঞ্জ স্মুদি

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে বলা হয়। আমরা জানি, কমলা বা মালটাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এছাড়া ভিটামিন এ, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি৬ সহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ আছে এতে! বাসায় অল্প কিছু উপাদান দিয়ে খুব সহজেই টেস্টি আর হেলদি অরেঞ্জ স্মুদি তৈরি করে নেওয়া যায়। পুষ্টিকর সব উপকরণ দিয়ে বানানো এই স্মুদিতে বাড়তি কোনো চিনি যোগ করা হয় না। তাই সব বয়সের সবার জন্যই আদর্শ একটি পানীয় এটি। দেড়ি না করে অরেঞ্জ স্মুদি তৈরির পুরো প্রণালীটি দেখে নিন!

উপকরণ: মালটা বা কমলা- ২টি, টকদই– ৪ টেবিল চামচ, কলা- ১টি, মধু- ২ চা চামচ, গুঁড়া দুধ- ২ চা চামচ

প্রণালী: কমলা বা মালটা, আপনার হাতের কাছে যেটাই আছে, সেটা দিয়ে এই স্মুদি বানিয়ে নেওয়া যাবে! রস বা পিউরি ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা ছোট ছোট করে কেটেও নিতে পারেন। ব্লেন্ডারের জগে কলা, টকদই ও গুঁড়ো দুধ দিয়ে এক মিনিটের জন্য ব্লেন্ড করে নিন। বেশ স্মুথ ও ক্রিমি হবে মিশ্রণটি! এবার অরেঞ্জ ও মধু দিয়ে আবার তিরিশ সেকেন্ডের জন্য ব্লেন্ড করুন। চাইলে হাফ কাপ ঠাণ্ডা পানিও যোগ করতে পারেন। তারপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিয়ে গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন। অরেঞ্জ স্মুদিতে কমলার পাশাপাশি বেশ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। টকদই হজমে সহায়তা করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। মধু সর্দি-কাশি কমাতে ও হার্ট ভালো রাখতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে। আর কলারও অনেক স্বাস্থ্যগুণ আছে। তাই এই পানীয়টি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতে রাখা যেতেই পারে! মনে রাখবেন, পরিমিত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেলে আপনি অসুখ থেকে অনেকটাই দূরে থাকতে পারবেন। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

বাদাম লাচ্ছি

হাতের কাছে থাকা উপকরণ দিয়েই খুব সহজে বাসাতে বাদাম লাচ্ছি বানিয়ে নিতে পারেন। এতে বাদামের সাথে আরও কিছু পুষ্টিকর উপাদান যোগ করা হয়। এই রেসিপিতে বাড়তি কোনো চিনি ব্যবহার করা হয় না বলে এটি স্বাস্থ্যসম্মত একটি পানীয়। যারা হেলদি ডায়েট চার্ট মেনে চলেন, তাদের জন্যও এটি একদম পারফেক্ট! বাদামে আছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই, ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডসহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ!

উপকরণ: বাদাম- আধা কাপ, টকদই- ১ কাপ, ঘন দুধ- ২ কাপ, কলা– ১টি, বরফ কুঁচি- ২ টেবিল চামচ, মধু- ৪ চা চামচ, ভ্যানিলা অ্যাসেন্স- ২ ফোঁটা

প্রণালী: কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট কিংবা পেস্তা; যেকোনো ধরনের বাদাম দিয়েই এই লাচ্ছি বানানো যাবে! প্রথমে বাদামগুলো কিছুক্ষণের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার একটি ব্লেন্ডার জগে বাদাম ও মধু দিয়ে ১ মিনিটের জন্য ব্লেন্ড করে নিন। বাদাম খুব বেশি মিহি না হলেও হবে! তারপর এতে টকদই, তরল দুধ, কলা, বরফ কুঁচি ও সামান্য ভ্যানিলা অ্যাসেন্স দিয়ে ৩০ সেকেন্ড বিট করে নিন। খুব সুন্দর একটা ক্রিমি ও স্মুথ মিশ্রণ তৈরি হয়ে যাবে। যারা পাতলা করে খেতে পছন্দ করেন, তারা এতে ঠাণ্ডা পানি যোগ করে দিতে পারেন। কিন্তু বাদামের এই লাচ্ছি একটু ঘন হলেই বেশি ভালো লাগে! আরেকটা কথা, বাসায় যদি ভ্যানিলা অ্যাসেন্স না থাকে, তাহলে সামান্য এলাচ গুঁড়ো দিয়ে দিতে পারেন। এটা মূলত ফ্লেবারের জন্য ব্যবহার করা হয়। খুব অল্প সময়ে পুষ্টিকর ও রিফ্রেশিং পানীয়টি তৈরি হয়ে গেলো! এবার গ্লাসে ঢেলে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাদাম লাচ্ছি পরিবেশন করুন। সাজানোর জন্য উপরে বাদাম কুঁচি ও পুদিনা পাতা দিতে পারেন। হাতের কাছে সব উপাদান থাকলে আজই বানিয়ে ফেলুন মজাদার বাদাম লাচ্ছি!

(ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :