খাদ্য সংকট সামনে রেখে আমদানি হচ্ছে গম

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯:২২| আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ১১:১২
অ- অ+

বাংলাদেশে চালের পর দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য গম। কিন্তু এ খাদ্যপণ্যটির সিংহভাগই আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গম আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটায় দেশে গম দিয়ে তৈরি খাদ্যপণ্যগুলোর দাম হুহু করে বেড়ে যায়। কেননা দেশ দুটি থেকে গমের চাহিদার সিংহভাগ মেটানো হয়। এদিকে নিজেদের বাজারদর ঠিক রাখতে ভারতও গম রপ্তানিতে লাগাম টেনে ধরে। এতে আরও বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। এখন গম আমদানি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। সরকার আমদানি করে গমের মজুত বাড়াতে কাজ করছে। এদিকে নিজেদের বাজার দর ঠিক রাখতে এ বছরের ১৩ মে গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারত। এর ২ মাস ৪ দিন পর ভারত থেকে গম আসে বাংলাদেশে। এদিকে রাশিয়া থেকেও গম আমদানি শুরু হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন যে পরিমাণ গম আছে সেগুলো দিয়ে মাস দুয়েকের মতো চলবে। কিন্তু আমদানির প্রবাহ ঠিক না থাকলে খাদ্য সংকটে পড়বে দেশ। তাই কিছুটা বেশি দামে হলেও আমদানি করে মজুত রাখতে চাইছে সরকার।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে পাঁচ লাখ টন গম আমদানি চুক্তির প্রথম চালান বন্দরে এসেছে। ‘জি টু জি’ বা দুদেশের সরকারের চুক্তির ভিত্তিতে এসব গম খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমদানি করছে সরকার। চালানে রাশিয়া থেকে প্রায় ৫২ হাজার ৮৪৫ টন গম এসেছে। রাশিয়ার নভেরোসিসক বন্দর থেকে রওনা দিয়ে ‘এমভি সিলাক-২’ নামের জাহাজটি কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়। খাদ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, ‘জাহাজটি কুতুবদিয়া চ্যানেলে আছে। কাস্টমস হাউজের ফরমালিটিজ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করার পর বৃহস্পতিবার থেকে লাইটারেজ জাহাজে করে গম খালাস শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে এসব গম আমদানি করা হয়েছে। পাঁচ লাখ টন আমদানির অংশ হিসেবে গমের অন্যান্য চালান আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

চট্টগ্রাম বন্দর ও শিপিং এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, জাহাজটি গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার নভেরোসিসক বন্দর থেকে রওনা হয়। বৃহস্পতিবার জাহাজটি বন্দরের জলসীমায় পৌঁছে। জাহাজটি থেকে ৩১ হাজার ৭০৭ টন গম খালাস হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। বাকি ২১ হাজার ১৩৮ টন মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত ১ সেপ্টেম্বর সরকারি পর্যায়ে এসব গম আমদানির অনুমোদন দেয়। রাশিয়া থেকে কেনা এসব গমের সবমিলিয়ে আমদানি মূল্য পড়ছে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এতে রাশিয়া থেকে প্রতি টন গমের আমদানি খরচ পড়ছে ৪৩০ ডলারের মতো।

রাশিয়া থেকে সর্বশেষ গম আমদানি হয়েছিল এ বছরের ২৭ জানুয়ারি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কোনো গম দেশ দুটি থেকে আসেনি। এখন সরকারি পর্যায়ে আমদানি শুরু হলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাশিয়া বা ইউক্রেন কোনো দেশ থেকেই আমদানি শুরু হয়নি।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চলাচল সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগ) জামাল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছর শুরু হওয়ার পর ইউক্রেন, বুলগেরিয়া এবং রাশিয়া থেকে গম এসেছে। আরেকটি জাহাজ ইউক্রেন থেকে আসবে। এছাড়া রাশিয়ার সাথে চুক্তির পাঁচ লাখ টন গম আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যেই আসবে।

জামাল হোসেন আরও বলেন, বর্তমানে গমের কোনো সংকট নেই। যে গম আছে সেগুলো দিয়ে মাস দুয়েকের মত চলবে। আমদানির প্রবাহ ঠিক থাকলে সংকটের কোনো কারণ নেই। এছাড়া সরকার চাহিদা মোতাবেক মজুত রাখার চেষ্টা করছে সরকার। এছাড়া বাংলাদেশ আরও কিছু দেশ থেকে গম আমদানি করে কিন্তু সে দেশগুলো থেকে কিনে পরিবহন করার পর খরচ বেশি পড়বে তাই আমদানি করা হচ্ছে না। রাশিয়া থেকে গম কি বেশি দামে কেনা হচ্ছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে এখন সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। আমরা বিশ্ববাজারের সঙ্গে তুলনা করেই রাশিয়া থেকে গম কিনছি। এখন তেমন বেশি দামে কেনা হচ্ছে না। তাছাড়া দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে এখানে কিছুটা বেশি হলেও দিতে হবে। আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছি। দাম বেশি পড়ছে না।

‘দেশে উৎপাদিত গমও চাহিদা মেটায়। দেশের গম উঠে গেলে আমাদের খাদ্য অধিদপ্তর তা সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করে রেখেছে। আশা করি আমাদের দেশের গম বাজারে এলে এর দামও কিছুটা কমবে’- যোগ করেন জামাল হোসেন।

গম দিয়ে তৈরি খাদ্যপণ্যগুলোর দাম কমেনি

আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গম দিয়ে তৈরি পণ্য গুলোসহ আটা-ময়দার দাম বাজারে বেড়ে যায়। এখনো বাজারে দাম কমেনি। গম আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটার পর কেক, রুটিসহ সব প্যাকেটজাত পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ১০ টাকার কেক একলাফে ১৫ টাকা হয়ে যায়, ১০ টাকার রুটি ১৫ টাকা হয়। এছাড়া প্যাকেটজাত রুটি এবং কেকসহ গম দিয়ে তৈরি সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এখন পর্যাপ্ত গম থাকলেও কোনো পণ্যেরই দাম কমেনি।

দেশে গমের চাহিদার সিংহভাগই আনা হতো রাশিয়া-ইউক্রেন ও ভারত থেকে। যুদ্ধের আগে সবচেয়ে বেশি গম আমদানি হতো রাশিয়া থেকে। গত অর্থবছরের হিসেবে দেখা গেছে, দেশে ৬২ লাখ টন গম আমদানি হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না ইরান, ট্রাম্প বলছেন উল্টো: মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম গ্রেপ্তার
ঢাকাসহ ১৮ অঞ্চলে টানা ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
ইরান থেকে ৭০ বাংলাদেশিকে ফেরানোর প্রস্তুতি, পাকিস্তান হয়ে দেশে পাঠানো হবে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা