মৌলভীবাজারে যানবাহনে গ্যাসের জন্য হাহাকার

নিজস্ব প্রবেদক, মৌলভীবাজার
 | প্রকাশিত : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৬

মৌলভীবাজারে গ্যাসে জন্য চলছে হাহাকার। গ্যাস নিতে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা রাত্রি কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে পরের দিন ঘোমানোর জন্য গাড়ি চালাতে পারছেন না। গত কয়েক মাস যাবত মাসের শেষ সাপ্তাহ থেকে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। গ্যাস পাম্পের মালিকরা জানান অতীতে লিমিট শেষ হওয়ার পরও গ্যাস সরবাহ অব্যাহত থাকতো। কিন্তু এখন লিমিট শেষ হলেই বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন। এতে জেলা সদর ও আশপাশের উপজেলার ফিলিং স্টেশন গুলোতে অন্তত ৫ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত গ্যাস বন্ধ থাকছে। জনগণের এই চরম ভোগান্তি দূরীকরণে নেই কোনো সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ।

জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা সদর, রাজনগর ও শ্রীমঙ্গলসহ তিনটি উপজেলায় মোট ৯টি পাম্পের মধ্যে মৌলভীবাজার সদরের ২ থেকে ৩টি পাম্পে গ্যাস সরবরাহ চালু থাকলেও পুরো জেলার চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে পাম্পগুলোকে। তবে মাসের প্রথম দিকে সবগুলো পাম্প পুনরায় চালু হলে ফের শুরু হয় স্বাভাবিক গ্যাস সরবাহ।

শনিবার রাতে সিলেট থেকে ফেরার পথে (২৫ ফেব্রুয়ারি) দেখা যায় , সিলেট মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থিত ফিলিংস স্টেশনগুলোর পাশে ২-৩ কিলোমিটারের বেশী এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। প্রতিটি সারিতে আবার শত শত গাড়ি। চালকরা ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন গ্যাস নেওয়ার জন্য। গ্যাস নিতে অনেকের ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে গ্যাস সংগ্রহ করতে।

ইরেশ লাল নামক একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান শুক্রবার রাতে লাইনে দাড়িয়ে শনিবার সকালে গাস পেয়েছি। আজ আবার গ্যাস শেষ।

চালকরা জানান, প্রতি মাসের ২০ তারিখের পর থেকেই শুরু হয় এই সমস্যা। চলে সাপ্তাহ পর্যন্ত। এমনিতেই সরকারের বেঁধে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত পাম্প গুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে ।

এই বন্ধ থাকা সময়েই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাড়ি চালকরা আগেবাগেই লাইনে দাঁড়ান। এর পর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। রাত ১১টায় যখন পাম্প গুলো গাড়িতে গ্যাস দেয়া শুরু করে তখন থেকে গ্যাস সংগ্রহ করতে বেশিরভাগ গাড়ি চালকদের অপেক্ষা করতে হয় ভোর পর্যন্ত।

অরুন লাল নামক একজন চালক জানান এতো অপেক্ষার পর ভোরে গ্যাস সংগ্রহ করা সম্ভব হলেও রাত জেগে থাকার কারনে পরদিন চোখে ঘুম নিয়ে অধিকাংশ গাড়ি চালকরা গাড়ি বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। কেউ কেউ সংসারের ব্যায় মিটাতে হিমশিম খাওায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে বেরিয়ে পড়েন গাড়ি নিয়ে।

এদিকে পাম্প গুলো থেকে গ্যাস সংগ্রহ করতে আসা গাড়ি গুলোর মধ্যে কার, মাইক্রোবাস, ছোট পিকআপের পাশাপাশি অধিকাংশই সিএনজি চালিত অটোরিকসা আর টমটম। প্রতিটি পাম্পের পাশের সড়কে অন্তত হাজারেরও বেশি হবে অপেক্ষমাণ গাড়ির সংখ্যা। দীর্ঘ সময় সারিবদ্ধ গাড়ি গুলো মূল সড়কে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আঞ্চলিক ও দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলে তৈরি হচ্ছে ঝুঁকি। ফলে যেকোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা।

শ্রীমঙ্গল সড়কের মাজ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার শাহ আলম জানান,চুক্তি অনুযায়ী আমাদের পাম্প মাসে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার কিউ ঘণমিটার গ্যাস পাচ্ছে। তবে মাসের প্রথম দু’সাপ্তাহ গাড়ির চাপ কম থাকায় পুরো মাস জুরে গ্যাস সর্বরাহ সাভাবিক আছে। না হলে আমাদের পাম্পও অন্যান্য পাম্পের মতো বন্ধ থাকতো। বন্ধ হওয়া পাম্প গুলো সম্পর্কে তিনি জানান,চুক্তি অনুযায়ী লিমিট শেষ হওয়ায় বন্ধ,তবে তিন থেকে চারদিন পর বন্ধ হওয়া পাম্প গুলোতে গ্যাস সর্বরাহ স্বাভাবিক হলে গাড়ির দীর্ঘ লাইন আর থাকবেনা।

মৌলভীবাজার জালালাবাদ গ্যাস টি এ্যান্ড ডি সিস্টেম লিমিটেড আঞ্চলিক বিতরণ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ ছানোয়ার হোসেন জানান,আমাদের এখান থেকে পাম্প গুলোতে গ্যাস সর্বরাহে কোন ঘাটতি নেই। মূলত পাম্প গুলোর মধ্যে সমন্নয়হীণতার কারণেই এই পরিস্থিতি। সমন্নয় হলে উন্নতি হবে।

তিনি বলেন, পাম্পগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নতুন কোন নির্দেশনা পেলে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৬ফেব্রুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :