ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় নাশপাতি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১০:০৩ | প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১০:০০

নাশপাতি অনেকেরই পছন্দের ফলের তালিকায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে। আপেলের মতো দেখতে কিন্তু আপেল নয়। নাশপাতির স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। খোসা একটু মোটা, তবে খোসাসহই খাওয়া যায়। খেতে ভীষণ মিষ্টি। নাশপাতি রোজাসিয়ে পরিবারের পাইরাস গণভুক্ত উদ্ভিদ ও তার ফলবিশেষ। ঠান্ডা অবস্থায় পাকা নাশপাতিতে চমৎকার সুগন্ধ রয়েছে। এগুলো রসালো তবে গাছে থাকা অবস্থায় ভালভাবে পাকে না। ফলের ৮৩ শতাংশই পানিতে পরিপূর্ণ। আবরণ অংশটি সবুজ অথবা লালচে প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলের কেন্দ্রস্থলটি বেশ নরম। জ্যাম, জেলি অথবা রসালো অবস্থায় বাজারজাতকরণ করা হয়ে থাকে।

নাশপাতির বৈজ্ঞানিক নাম পাইরাস কমিউনিস। নাশপাতি পূর্ব এশিয়ার নাশপাতি গাছের একটি প্রজাতি। এই প্রজাতিটি এশিয়ান নাশপাতি নামে বেশি পরিচিত। সারা পৃথিবীতে নাশপাতির অনেক প্রজাতি রয়েছে। এগুলো হলো এশিয়ান নাশপাতি, জাপানিজ নাশপাতি, চীনা নাশপাতি, কোরিয়ান নাশপাতি, তাইওয়ানের নাশপাতি, আপেল নাশপাতি, প্যাপেল নাশপাতি এবং বালি নাশপাতি। নাশপাতি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। তবে এগুলোর মধ্যে এশিয়ান নাশপাতি অপেক্ষাকৃত উচ্চতাপমাত্রায় জন্মাতে ও ফলন দিতে পারে। এটি একটি বিদেশী ফল হলেও আমাদের দেশে কম বেশি সকলেই ফলটির সাথে পরিচিত।

আমদানিকৃত নাশপাতিগুলো কখনও স্বাদে মিষ্টি, কখনও স্বাদে কিছুটা পানসে প্রকৃতির হয়ে থাকে। তারপরও প্রতি বছর বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে এই ফলটি আমদানি করতে হয়। নাশপাতি একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। এ ফলে শর্করা, ক্যালরি, চিনি, বিভিন্ন ডায়েটারি ফাইবার, চর্বি, প্রোটিন, বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিনস এবং খনিজ বিদ্যমান।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এবং ওজন কমাতে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধেও নাশপাতি অত্যন্ত উপকারী। বহু গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে নাশপাতি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হেলথলাইনের রিপোর্ট অনুযায়ী, নাশপাতি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম সহ পুষ্টিতে ভরপুর।

নাশপাতির ভিতরে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এতে ভিটামিন – এ, ফ্ল্যাভিনয়েড এবং ভিটামিন- সি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। লাং, রেকটাম, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট ও কোলন ক্যান্সার রোধে নাশপাতির জুড়ি নেই। অ্যান্থোসায়ানিন এবং সিনামিক এসিডের উপস্থিতি ক্যানসার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার বা কর্কট রোগ থেকে মুক্তি প্রদান করে।

নাশপাতি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভাল উৎস। এই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের অবশ্যই নাশপাতি খাওয়া উচিত। একটি নাশপাতিতে প্রায় ৬ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা দৈনিক চাহিদার ২১ শতাংশ।

নাশপাতি পেকটিন সমৃদ্ধ, যা অন্ত্র ভাল রাখে। এই ফলটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। নাশপাতির খোসায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে, তাই এই ফলটির খোসা না খাওয়াই ভাল।নাশপাতি খাওয়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রতিদিন নাশপাতির মতো অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ ফল খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৩% কমাতে পারে।

নাশপাতি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে এই ফল। নাশপাতিতে থাকা প্রোসায়ানিডিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হার্টের ক্ষমতা বাড়ায়। নাশপাতির খোসায় রয়েছে কোয়ারসেটিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ কমিয়ে হৃদযন্ত্র ভাল রাখতে পারে৷ একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রতিদিন একটি নাশপাতি খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি ৬ থেকে ৭শতাংশ কমাতে পারে৷

২০০৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মহিলারা ১০ সপ্তাহের জন্য তাদের স্বাভাবিক খাবারের তালিকায় প্রতিদিন তিনটি নাশপাতি অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাদের গড় ১ কেজি করে ওজন হ্রাস পেয়েছে।

নাশপাতি আয়রন সমৃদ্ধ একটি ফল, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে। যারা রক্তস্বল্পতার সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য একটি উপকারী ফল হতে পারে নাশপাতি। নিয়মিত নাশপাতি খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।

নাশপাতিতে রয়েছে উপকারী কিছু যৌগ যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের কারণে শরীরে বাসা বাঁধে নানা ধরনের অসুখ। সেসব সমস্যা দূরে রাখতে কাজ করে উপকারী এই ফল।

খুশকি ও পেটের পীড়ার কারণে মাথার চুল পড়ে গেলে সিকি কাপ নাশপাতির রস দুই সপ্তাহ খেলে চুল পড়া ও খুশকি দূর হয়।

উচ্চমাত্রায় মিনারেল থাকার কারণে নাশপাতি দেহে ক্যালসিয়ামের জোগান দেয়। এটি হরমোন উৎপাদন এবং হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের ১০ শতাংশ নাশপাতিতে বিদ্যমান।

হাড়ের নানা সমস্যায় অনেকে ভুগে থাকেন। আপনার যদি হাড়ে সমস্যা থাকে তবে নাশপাতি খেতে পারেন। কারণ হাড়ের সমস্যা দূর করতে নাশপাতি উপকারী। এই ফলে থাকে বোরন নামক রাসায়নিক উপাদান। এটি ক্যালসিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে কার্যকরী।

নাশপাতি অবসাদ দূর করে। নাশপাতির এই উপকারিতাটি হয়ত অনেককেই চমকে দেবে। তবে এটা সত্য এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। শারীরিক পরিশ্রমে আমরা তখনই ক্লান্ত হয়ে যাই যখন আমাদের মাংসপেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। মাংসপেশি বিভিন্ন কারণে দুর্বল হতে পারে। দীর্ঘকালীন রোগ, ভিটামিনের অভাব অথবা পটাশিয়াম বা সোডিয়াম কম পরিমাণে গ্রহণ করা।

(ঢাকাটাইমস/২৮ আগস্ট/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :